ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ খোঁড়ার প্রস্তুতি। বুধবার, এস এন ব্যানার্জি রোড সংলগ্ন এলাকায়। নিজস্ব চিত্র
পুরনো বাড়ির সুরক্ষায় বসেছে কাঠ এবং ইস্পাতের খুঁটি। এসেছে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি। এস এন ব্যানার্জি রোড সংলগ্ন এলাকায় মঙ্গলবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে যুদ্ধকালীন ব্যস্ততা।
এসপ্লানেড সংলগ্ন চৌরঙ্গি রোড পেরিয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর শিয়ালদহ অভিমুখে জোড়া সুড়ঙ্গের মধ্যে পশ্চিমমুখীর কাজ শুরু হয়েছে মঙ্গলবার থেকে। ঠিক উপরের বিভিন্ন দোকান বুধবার থেকে সম্পূর্ণ বন্ধ। কারণ, সকলকেই নিরাপত্তার স্বার্থে সুড়ঙ্গ খনন এলাকার বাইরে রাখা হয়েছে। কমবেশি ৮০ মিটার লম্বা টানেল বোরিং মেশিন (টি বিএম) তাঁদের বাড়ির পরিসরটুকু পার না করা পর্যন্ত তাই হোটেলে থাকবেন সবিতা বসু, শর্মিলা দাস, স্বপন কোলে এবং রঞ্জিত বারিকেরা। মঙ্গলবার দুপুর থেকে সেই ব্যবস্থাও করেছেন ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো কর্তৃপক্ষ। জীর্ণ বাড়িগুলির স্বাস্থ্যের উপরেও চলছে কর্তৃপক্ষের নজরদারি।
নিজের শহরেই কয়েক দশকের পুরনো আস্তানা ছেড়ে দিন কয়েকের জন্য হোটেলে থাকতে হচ্ছে এস এন ব্যানার্জি রোড সংলগ্ন দু’টি বাড়ির জনা আটেক বাসিন্দাকে। তারই একটি, ৯ জওহরলাল নেহরু রোড। প্রায় ১০০ বছরের পুরনো বাড়িতে দাঁতের একটি ক্লিনিক চালান বছর সত্তরের সবিতা বসু। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে সেটি দেখাশোনার ভার তাঁরই। তাঁর ক্লিনিকের জনা পাঁচেক কর্মীও ওই বাড়ির বাসিন্দা। মেট্রোর কাজের জন্য ক্লিনিক বন্ধ রেখে আপাতত ঠাঁইনাড়া হতে হয়েছে তাঁদেরও। অন্য একটি ব্যবসায়ী পরিবারেরও ঠাঁই হয়েছে চাঁদনি চকের একই হোটেলে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বাতানুকূল ঘরের জানলা দিয়ে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের ব্যস্ত ট্র্যাফিক দেখে চেনা চৌহদ্দিও অচেনা লাগছে ওঁদের। শর্মিলা বলেন, ‘‘শহরে বাইরে হোটেলে থাকা এক রকম। কিন্তু নিজেরই বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে অতিথি হয়ে রয়েছি। কাজ থেকেও ছুটি।’’ কেমন আপ্যায়ন পাচ্ছেন? শর্মিলা জানান, ব্যবস্থা ভালই। প্রাতরাশে থাকছে চা-কফি, টোস্ট, ডিম। দুপুরে ভাত, ডাল, আলুভাজা, আনাজ, মাছের ঝোল বা মুরগি অথবা চিনা মেনু। সন্ধ্যায় বিভিন্ন স্ন্যাক্স ছাড়াও রাতে সুপ, ভাত, রুটি, মুরগি, আনাজ, দই, মিষ্টি।
হার্টের সমস্যার কারণে সবিতাদেবী বেশি সিঁড়ি ভাঙতে পারেন না। হঠাৎ পাওয়া এই অবসর তাঁর কাছে অন্য রকম। তবে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ শেষ হওয়ার পরে বাড়ি কেমন থাকবে তা নিয়ে অবশ্য চিন্তা রয়েছে তাঁর। যদিও বাড়ির ক্ষতি হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আগামী রবিবারের মধ্যেই বাড়িতে ফেরা যাবে বলে জেনেছেন তাঁরা।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এক কর্তা বলেন, ‘‘রিগ্যাল সিনেমা পর্যন্ত প্রায় ২০০ মিটার পরিসরে সুড়ঙ্গ খনন হচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী ধাপে ধাপে আবাসিকদের সরানো হবে।’’