চাপ দিয়ে ‘লাভ’ নেই, প্রতিনিধিদের বার্তা দিলেন মেয়র

মাদুরদহের খাস জমিতে বসে থাকা বাসিন্দাদের মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে এসেছিলেন, সরকারের সঙ্গে সংঘাতে না গিয়ে নিজেদের বক্তব্য লিখিত ভাবে জানান। সোমবার তাঁদেরই এক প্রতিনিধি দল পুরভবনে গিয়ে জানিয়ে দিলেন, পুনর্বাসনে বর্গাদার পিছু পাঁচ লক্ষ টাকা এবং পাঁচ কাঠা করে জমি দেওয়া না হলে মুকুন্দপুর-মাদুরদহে সরকারের খাস জমির উপরে দখল তাঁরা ছাড়বেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:২৭
Share:

মেয়রের ঘরের সামনে মাদুরদহের প্রতিনিধিরা। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র

মাদুরদহের খাস জমিতে বসে থাকা বাসিন্দাদের মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে এসেছিলেন, সরকারের সঙ্গে সংঘাতে না গিয়ে নিজেদের বক্তব্য লিখিত ভাবে জানান। সোমবার তাঁদেরই এক প্রতিনিধি দল পুরভবনে গিয়ে জানিয়ে দিলেন, পুনর্বাসনে বর্গাদার পিছু পাঁচ লক্ষ টাকা এবং পাঁচ কাঠা করে জমি দেওয়া না হলে মুকুন্দপুর-মাদুরদহে সরকারের খাস জমির উপরে দখল তাঁরা ছাড়বেন না।

Advertisement

কম যাননি মেয়রও।

মাদুরদহের প্রতিনিধিরা মেয়রকে ৮৯ জন ‘বর্গাদারের’ একটি তালিকা দিয়ে পুনর্বাসনের দাবি করেছিলেন। মেয়র ২৮৯ জনের একটি তালিকা দেখিয়ে ওই প্রতিনিধিদের পাল্টা বুঝিয়ে দেন, তাঁদের দেওয়া তালিকায় এমন কয়েক জনের নাম রয়েছে, যাঁরা আগেও এক বার পুনর্বাসনের নামে টাকা নিয়েছেন। একই ব্যক্তির একাধিক বার পুনর্বাসনের তালিকায় নাম থাকায় দখলদারদের দাবি নিয়ে সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়েছে। এ ব্যাপারে ওই প্রতিনিধিদলের এক সদস্যা ভাগ্যকুমারীর কথায়, ‘‘মেয়রের কাছে ওই তালিকা কী ভাবে এলো, তা আমরা জানি না।’’ যার উত্তরে শোভনবাবুর সাফ কথা, ‘‘যে কেউ যা খুশি দাবি জানাতেই পারে। তবে সরকার পদ্ধতি মেনেই সমাধানের পথ খুঁজবে।’’ কোনও অনৈতিক চাপের মুখে যে সরকার কোনও মতেই নতি স্বীকার করবে না, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন মেয়র।

Advertisement

নবান্নের উপরতলার মনোভাবও একই রকম। সরকারের খাস জমি ‘বেদখল’ করে পুনর্বাসনের এ হেন ‘রীতি’ নিয়ে খোদ পুরমহলেই নানা প্রশ্ন উঠছে। সম্প্রতি এন্টালির পদ্মপুকুরে পুরসভার আর এক সম্পত্তি ‘জবরদখল’ করে থাকা নিয়েও শোরগোল শুরু হয়েছে। সেখানে আবার দখলদার হয়ে পুনর্বাসনের দাবি তুলেছেন তৃণমূলেরই শ্রমিক সংগঠনের একাধিক নেতা। ঠিক মাদুরদহের দখলদারদের কায়দাতেই। তৃণমূলেরই এক শ্রমিক নেতার কথায়, ‘‘এ সব সিঙ্গুরের ঠেলা।’’

মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এ দিনও জানিয়ে দিয়েছেন, ওই জমিটি আদালত আগেও খাস বলে জানিয়ে দিয়েছিল। তার পরেও দীর্ঘদিন মামলা হয়েছে। গত ৯ মার্চ ফের হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, ওই (৪৭ একর) জমিটি খাস। অর্থাৎ, সরকারের সম্পত্তি। রাজ্য সরকার সেটি পুরসভার হতে সমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর তা ঘিরতে গিয়েই ‘দখলদার’দের সঙ্গে বিরোধ শুরু হয়েছে। দাবি উঠছে, পুর্নবাসন দিতে হবে।

এ দিকে মেয়রের সঙ্গে শনিবার বৈঠক হলেও তাঁদেরই কয়েক জন রবিবার সোজা চলে যান প্রদেশ কংগ্রেস অফিসে। সেখানে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর আবেদন জানান। সিঙ্গুরের প্রসঙ্গ তুলে তাঁরা অধীরবাবুকে বলেন, সেখানে চাষিদের কথা ভাবা হলেও এখানে কেন গড়িমসি চলছে। মাদুরদহের একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, কংগ্রেসের একটি দলের এ দিন সেখানে যাওয়ার কথা ছিল। এরই মধ্যে সেখানে খবর যায় মেয়র শোভনবাবু পুরভবনে ওদের কয়েক জনকে ডেকে পাঠিয়েছেন।

বিকেল চারটে নাগাদ ওই তিন মহিলা-সহ ওই এলাকার পাঁচ জন বাসিন্দা মেয়রের কাছে যান। বৈঠকের পরে মেয়র বলেন, ‘‘কেউ কেউ মাদুরদহের ঘটনাকে সিঙ্গুরের সঙ্গে গুলিয়ে দিচ্ছে। বাস্তবে সরকারের খাস জমি দখল করা বেআইনি। তা সত্ত্বেও ওদের কী দাবি তা জানাতে বলেছি। তার মানে এটা নয় যে অযৌক্তিক কোনও দাবি মেনে নেওয়া হবে। মনে রাখতে হবে, এটা কিন্তু জমি-মাটির আন্দোলন নয়।’’

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রের খবর, মোট ১৪৫ একর জমি ছিল ওই এলাকায়। রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, ১৯৬৮ সালের পরে ওই জমি খাস বলে ঘোষিত হয়। ১৯৮৮ সালেও তা ছিল। তাই ১৯৮৭ সালে বর্গাদার নথিভুক্ত বলে যাঁরা দাবি করছেন, তা ঠিক নয়। জেলা প্রশাসনের কাছেও তার কোনও রেকর্ড নেই। এ দিন পুরভবনে বাম আমলের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বর্তমান তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লাকেও ডেকেছিলেন মেয়র। যদিও রেজ্জাক মোল্লা বলেন, ‘‘মেয়র জেলার সভাপতি। তাই তাঁর কাছে কাজে এসেছিলাম। এর সঙ্গে মাদুরদহের কোনও সম্পর্ক নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement