প্রতীকী ছবি।
অ্যাপ-নির্ভর সাট্টার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। সেই ঋণের টাকা মেটাতে না-পেরে আত্মহত্যারঘটনাও ঘটছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। যদিও অভিযোগ, এ ভাবে দিনভর লক্ষ লক্ষ টাকার বেআইনি লেনদেন চললেও পুলিশ কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকায়।
আগে নাম ছিল মটকা। পরে নাম দেওয়া হয় সাট্টা। বেআইনি এই জুয়ার আসর আগে চলত লুকিয়ে-চুরিয়ে, কোনও গুমটি বা পরিত্যক্ত বাড়িতে। কিন্তু এখন রীতিমতো অ্যাপ খুলে মোবাইলের মাধ্যমেই কলকাতা এবং হাওড়া শহরতলি জুড়ে প্রকাশ্যে চলছে সাট্টা। ‘কলকাতা ফটাফট’, ‘কলকাতা এফএফ ফটাফট’ এবং ‘কলকাতা ডট ফান’ নামে চলা ওই সব অ্যাপেই চলছে সাট্টা খেলা।
বলা হয়ে থাকে, মুম্বইয়ের পরে হাওড়াই হল সাট্টার অন্যতম ‘পীঠস্থান’। আগে হাওড়ার গোলাবাড়িরবাসিন্দা এক সাট্টা ডন কলকাতা এবং শহরতলির খেলা নিয়ন্ত্রণ করত। এখন এই খেলা হাওড়া স্টেশন চত্বর থেকেই সালকিয়া, বাঁধাঘাট, শিবপুর, দাশনগর এলাকায় রমরমিয়ে চলছে। আগে এক শ্রেণির লোক এই নিষিদ্ধ খেলায় মজে থাকতেন। মোবাইলের মাধ্যমে এখন সমাজের সর্বস্তরে এই খেলা প্রবেশ করায় বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ। ঋণের টাকা মেটাতে না পেরে আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনাও সামনে আসছে। সম্প্রতি হাওড়ারগোলাবাড়ির একটি ক্লাবে এক যুবক আত্মহত্যা করেন। তদন্তকারীদের মতে, ওই অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিদিন সাট্টা খেলে প্রচুর ঋণ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। সম্ভবত সেই কারণেই ওই যুবক আত্মঘাতী হন। এর পরেও কিন্তু ওই অ্যাপ বন্ধ করতে প্রশাসন বা পুলিশ তৎপর হয়নি। হাওড়ার সাইবার থানার এক পদস্থ কর্তার বক্তব্য, ‘‘এটা সাইবার অপরাধের মধ্যে পড়ে না। তাই আমাদের কিছু করার নেই।’’
প্রাক্তন এক বুকি (সাট্টার ডিলার) রঘুবীর সিংহের (নাম পরিবর্তিত) বক্তব্য, এখন বদলে গিয়েছেখেলার ধরন। আগে সাট্টা খেলা হত রাতে দু’বার। রাত ৯টা এবং রাত সাড়ে ১২টায়। শহরের বিভিন্নজায়গায় টেবিলে সাট্টার প্যাড বসত। সেই খেলা পরিচালনা করত যারা, তাদের কাজ অনুযায়ী পদেরনামকরণ হত। যেমন, প্যাডের লেখককে বলা হয় ‘পেন্সিলার’। কার্বন কপি করে সাট্টার নম্বর লিখে গ্রাহককে জমা দেয় যে, সে ‘প্রফেসর’। আর সাইকেলে করে গ্রাহকদের কাছে সাট্টার ফলাফল পৌঁছয় ‘রানার’।
জানা যাচ্ছে, অ্যাপের মাধ্যমে এই খেলা শুরু হওয়ায় এই সব পদের আপাতত অবলুপ্তি ঘটেছে। যারা এ সব আগে করত, তারাই এখন অ্যাপ-নির্ভর সাট্টার প্রচারের দায়িত্বে রয়েছে। ৫২টা তাসের মাধ্যমে এই খেলা মোবাইলে কী ভাবে হবে, গ্রাহকদের তা বোঝাতে এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে মোটরবাইক নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে তারা। খেলারসময়ও গিয়েছে বেড়ে। এখন সকাল ১০টা বা বেলা ১২টায় শুরু হয়ে খেলা চলে রাত ৮টা বা ৯টা পর্যন্ত। এরই মাধ্যমে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রায় ৪০ হাজার গ্রাহকের মধ্যে লক্ষ লক্ষ টাকার বেআইনি লেনদেন হয়।
হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তার আশ্বাস, ‘‘কী ভাবে, কারা, কোথা থেকে এই অ্যাপ পরিচালনা করছে, সেই বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হবে। এটা অবশ্যই বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।