ঘাঁটি: সমাবেশের জন্য ভিন্ জেলা থেকে আসা তৃণমূল কর্মী ও সমর্থকদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে মিলন মেলা প্রাঙ্গণে। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
মিলনমেলার মাঠে হাপুস-হুপুস করে ডিমের ঝোল-ভাত খাচ্ছিলেন আলিপুরদুয়ারের মনমোহন দাস। ছেলে আব্দারে চিড়িয়াখানায় ছুটতে হবে। কোচবিহারের মনিরুল শেখ, বাচ্চু ঘোষদের অবশ্য সে সব তাড়া নেই। লাঞ্চ সেরে তাই তাঁবুর ভিতরে তাসে মজেছেন তাঁরা। একটু দূরে শতরঞ্চি বিছিয়ে বসেছে মহিলামহল। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, জলপাইগু়ড়ি মিলেমিশে একাকার সেখানে।
গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে রাশভারী পুলিশ অফিসারের চারপাশে ঘুরঘুর করছিলেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের সুলতান শেখ। মিনমিন করে ছুড়েই দিলেন প্রশ্নটা। ‘‘কাছাকাছি দোকান-বাজার নেই? বন্ধুরা একটু ঘুরতে যেতাম।’’ তবে মুর্শিদাবাদের গৌরাঙ্গ বিশ্বাস, বদরুদ্দিনরা অবশ্য এত পথ উজিয়ে এসে এ সব ঘোরাঘুরিতে নারাজ। ভরদুপুরে নাওয়া-খাওয়া সেরে গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামের ভিতরে একটু গড়িয়ে নেওয়াটাই উচিত বলে মনে হয়েছিল তাঁদের।
না-ই বা হল শীতের মিঠে রোদ। ধর্মতলায় দলীয় সমাবেশের ২৪ ঘণ্টা আগে মেঘলা আকাশ, ঝিরঝিরে বৃষ্টি নিয়েই মহানগরে পুরোদস্তুর চড়ুইভাতির মেজাজ। শুধু ভুরিভোজ নয়, মিলনমেলার আশপাশে বসে গিয়েছে তেলেভাজা, মুড়ি, চা, পানের অস্থায়ী দোকানও। দেদার বিকিয়েছে তৃণমূল ছাপ দেওয়া টুপি, উত্তরীয়, চাবির রিং। মাঠে প্লাস্টিক বিছিয়ে ছিল ‘আইনের টুকিটাকি’, ‘ঘরোয়া হোমিও চিকিৎসা’ কিংবা ‘হাত দেখুন সহজে’-র মতো বইয়ের দোকান।
এ সবের মধ্যে মন খারাপ বাঁকুড়ার রায়পুর থেকে আসা আদিবাসী সমর্থক দলের মহিলা সদস্যদের। প্রথম কলকাতায় আসা। ঘুরে দেখার শখ ছিল কিন্তু ছেলেরা যেতে নারাজ। আগে শহিদ সমাবেশে আসেননি? এক জন তো বলেই ফেললেন, ‘‘এই তো এক বছর হল তৃণমূল করছি। আগে আসব কী করে?’’ তার আগে কোন দল করতেন? তা অবশ্য খোলসা করেননি তিনি।
এ দিন সকাল থেকেই বিভিন্ন দূরপাল্লার ট্রেনে চেপে শিয়ালদহ, হাওড়া স্টেশনে পৌঁছতে শুরু করেছিলেন জেলার তৃণমূল সমর্থকেরা। সেখান থেকে বাসে, ট্রাকে, ম্যাটাডরে চাপিয়ে তাঁদের নিয়ে আসা হয় মিলনমেলা ও গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, জলপাইগুড়ির সমর্থকদের ঠাঁই হয়েছে মিলনমেলায়। গীতাঞ্জলি স্টে়ডিয়ামে মূলত মুর্শিদাবাদ ও মালদহের লোকজন রয়েছেন। এই কয়েক হাজার লোকের জন্য যেন যজ্ঞিবাড়ির আয়োজন রয়েছে। বিরাট বিরাট কড়াইয়ে রান্না হচ্ছে, বায়ো-টয়লেট বসানো হয়েছে, মোতায়েন করা হয়েছে বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী। খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা কেমন, কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না, গৃহকর্তার ঢঙে সে সব তদারকি করতে আসছেন নেতামন্ত্রীরা।
দুপুরে সপার্ষদ মিলনমেলায় হাজির উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তাঁবুতে ঢুকে জনে জনে প্রশ্ন, ‘‘খাবার ঠিক আছে? কোনও সমস্যা নেই তো?’’ বেরোনোর পথে এক যুবককে প্রশ্ন, ‘‘কী রে, বুকে দলের ব্যাজ লাগাসনি কেন?’’ মুর্শিদাবাদের সৌমিক হোসেন আবার গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে কার্যত ঘাঁটি গেড়েছেন। অনুগামীদের নিয়ে চলছে খোশগল্প।
পুলিশ সূত্রে খবর, আজ, শুক্রবার সকাল থেকে একের পর এক ট্রাক, বাস ঢুকবে শহরে। দলে দলে পথে নামবেন শাসক দলের কর্মী-সমর্থকেরা। তার জেরে যানজটে নাকাল হওয়ার আশঙ্কা ষোলো আনা। যানজটের আঁচ অবশ্য এ দিনই পেয়েছে মহানগরী। ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে মঞ্চের জন্য গাড়ির গতি ঢিমে হয়েছে। তার জেরে ধর্মতলা চত্বর পেরোতে কালঘাম ছুটেছে অনেকের। সন্ধ্যায় মঞ্চ দেখতে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার নিরাপত্তা দিতে গিয়ে ফের যানজট বাড়িয়ে তোলে পুলিশ।