water logging

রাতের বৃষ্টিতে বাড়ল দুর্ভোগ, বহু এলাকা জলমগ্ন

প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতায় বৃষ্টি হলেই দীর্ঘ সময় জল জমে থাকবে কেন?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২১ ০৬:০৩
Share:

ফাইল চিত্র

বুধবার রাতভর বৃষ্টির জেরে বৃহস্পতিবার সারা দিনই জলমগ্ন ছিল শহর। সেই দুর্ভোগ বেড়ে গেল বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে। সব মিলিয়ে শুক্রবারও রাত পর্যন্ত শহরের একাংশ ডুবে ছিল জলে। বৃহস্পতিবার রাতে শিয়ালদহের নুর মহম্মদ লেনে একটি তিনতলা বাড়ির একাংশ এবং শুক্রবার সকালে পার্ক লেনে আরও একটি বাড়ির অংশবিশেষ ভেঙে পড়ে। যদিও দু’টি ঘটনাতেই কেউ হতাহত হননি।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কলকাতায় বৃষ্টি হয়েছিল ১৪৪ মিলিমিটার। সেই জমা জল সরতে না সরতেই রাতে ফের বৃষ্টি নামে। যার জেরে উত্তরের আমহার্স্ট স্ট্রিট, সুকিয়া স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া থেকে শুরু করে দক্ষিণের খিদিরপুর, যোধপুর পার্ক, ঢাকুরিয়া, হালতু ও বেহালার বিস্তীর্ণ এলাকা জলে ডুবে ছিল শুক্রবার রাত পর্যন্ত। পুরসভা জানিয়েছে, এ দিন ভোরে জোয়ার থাকায় সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত গঙ্গার লকগেটগুলি বন্ধ ছিল। তাই জল নামতে দেরি হয়েছে। খিদিরপুর ও মোমিনপুরের বেশ কিছু রাস্তায় রাত পর্যন্ত জল জমে ছিল। একই অবস্থা দেখা যায় বেহালা ও পর্ণশ্রীতে। বেহালার বিবেকানন্দ পল্লি ও আদর্শপল্লি এলাকায় বাড়িতে জল ঢুকে বিপত্তি বাড়ে। তারাতলায় জল ঢুকে যায় বেশ কিছু দোকানে। যোধপুর পার্ক বাজার সংলগ্ন বিভিন্ন রাস্তা এবং গল্ফগ্রিনেও এ দিন হাঁটুজল ছিল।

প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতায় বৃষ্টি হলেই দীর্ঘ সময় জল জমে থাকবে কেন? পুরসভার নিকাশি দফতরের অবসরপ্রাপ্ত এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কলকাতার ভৌগোলিক গঠনটাই এমন যে, ঘণ্টায় ৬ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলেই জল জমে যায়। এই জমা জল কতটা তাড়াতাড়ি নামানো যায়, সেটাই পুরসভার কাছে চ্যালেঞ্জ।’’

Advertisement

ওই প্রাক্তন অফিসারের ব্যাখ্যা, বৃষ্টির জল উপচে পড়লে গঙ্গার লকগেটগুলি খুলে দেওয়া হয়। তখন জল গিয়ে পড়ে গঙ্গায়। তবে জোয়ারের সময়ে গঙ্গার জলস্তর যদি নিকাশি নালার সমান হয়ে যায়, তখন লকগেট খোলা থাকলে উল্টে গঙ্গার জলই শহরে ঢুকে পড়ে। তাই লকগেট জোয়ারের সময়ে বন্ধ রাখা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে জোয়ার থাকায় গঙ্গার জলস্তর ১২ ফুট পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। যে কারণে লকগেটগুলি বন্ধ রাখতে হয়েছিল। তাই জমা জল সরতে দেরি হয়েছে।

নিকাশি দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, গালিপিটের মুখে প্লাস্টিক আটকে থাকার ফলেও জল সরতে দেরি হয়। সম্প্রতি খিদিরপুরে ম্যানহোল সাফ করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি বালির বস্তা মেলে। এক পুর আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘নাগরিকদের অসচেতনতাও জল জমার অন্যতম কারণ।’’

এ দিকে, বৃষ্টি থামার এক দিন পরে শুক্রবারেও জমা জল নামেনি বেলুড়, উত্তর হাওড়া, মধ্য হাওড়া ও শিবপুরের বহু জায়গা থেকে। এ দিনও জল জমে ছিল বেলুড় ও সাঁতরাগাছির ভূগর্ভস্থ পথ ও বাসস্ট্যান্ডে। রামরাজাতলা, লিলুয়া, রথতলা, টিকিয়াপাড়া ও বেলগাছিয়াতেও ছিল হাঁটুজল। উত্তর হাওড়ার বহু বাড়িতে জল ঢুকে যাওয়ায় খাটে বসেই রান্না-খাওয়া সেরেছেন বাসিন্দারা। পুরসভা সূত্রের খবর, অকেজো পাম্প মেরামত করে চালু করার পাশাপাশি লকগেট খুলে জমা জল বার করারও চেষ্টা চলছে। এ দিনও টিকিয়াপাড়া রেললাইন ডুবে ছিল জলে।

জল জমে থাকছে কেন? পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, প্রথমত, বেলগাছিয়া রথতলার জল যে মহানালা হয়ে নাজিরগঞ্জে যায়, তার ধারণ-ক্ষমতা কমে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, হনুমান জুটমিল সংলগ্ন লকগেট বৃহস্পতিবার কেএমডিএ অর্ধেক খোলায় জল বেরোতে পারেনি। সেটি শুক্রবার খোলা হয়েছে। তৃতীয়ত, পুরসভার ৯টি পাম্পিং স্টেশনের মধ্যে চালু আছে মাত্র দু’টি। বাকি সব অকেজো।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement