—প্রতীকী চিত্র।
রাজ্যে ডেঙ্গির প্রকোপ যে একেবারে কমে গিয়েছে, তেমনটা নয়। কিন্তু পুজো মিটতেই ক্রমশ বাড়ছে জলবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। পরিস্থিতি এমনই যে, আন্ত্রিকের রোগীতে ভর্তি বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড। আবার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন টাইফয়েডে আক্রান্তেরাও।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মশাবাহিত রোগের পাশাপাশি এখন জলবাহিত অসুখও উদ্বেগ তৈরি করেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রোগের নেপথ্যে কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলের জলের দূষণ নেই। বরং পুজোর সময়ে রাস্তাঘাটে যেখানে-সেখানে জল পান এবং খাবার খাওয়ার কারণেই আন্ত্রিকের প্রকোপ বাড়ছে। ছোটখাটো রেস্তরাঁর উপরে পুজোর সময়ে কোনও নজরদারি থাকে না বলে যে অভিযোগ ওঠে, সেটাও মনে করাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। আবার, পেটে সংক্রমণের কারণে জ্বর কমছে না, অর্থাৎ টাইফয়েডের নেপথ্যেও দূষিত জল ও খাবার।
পুজোর সময় থেকেই শুরু হয়েছে আন্ত্রিকের প্রকোপ। পুজো মিটতেই শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন আন্ত্রিকে আক্রান্তেরা। সোমবারের পরিসংখ্যান বলছে, বেলেঘাটা আইডি-র আন্ত্রিক ওয়ার্ডের ৫০টি শয্যাই ভর্তি। এখন যাঁরা আসছেন, তাঁদের অন্য ওয়ার্ডে রাখা হচ্ছে। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক কৌশিক চৌধুরী বলেন, ‘‘পুজোর সময়ে মানুষ রাস্তার অপরিশোধিত জল পান করেছেন। তাই জলবাহিত রোগ টাইফয়েডের প্রকোপ বাড়ছে। আবার দূষিত খাবারের কারণে আন্ত্রিকের রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। পেটের গোলমালে জ্বরের উপসর্গও থাকছে।’’ আইডি-তে ১০ জন টাইফয়েডের রোগীও রয়েছেন।
আন্ত্রিক, অর্থাৎ পেটের গোলমালকে যাতে অবহেলা করা না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক করছেন জনস্বাস্থ্যের চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইও। তাঁর কথায়, ‘‘আন্ত্রিকে শরীরে জলশূন্যতা তৈরি হয়। ঠিক মতো চিকিৎসা না হলে কিডনির উপরে চাপ পড়ে তা বিকলও হতে পারে। রক্তচাপ কমে গিয়ে মাথা ঘোরা, অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন রোগী। সোডিয়াম-পটাশিয়ামের মাত্রায় গোলমাল হয়ে মৃত্যুও হতে পারে।’’ তিনি জানান, টাইফয়েড ক্রনিক সংক্রমণ। ১০-১৫ দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত থাকছেন রোগী। সঙ্গে পেটে ব্যথা, পাতলা পায়খানার সমস্যাও থাকছে। চিকিৎসকেরা জানান, ঠিক মতো চিকিৎসা করা না হলে টাইফয়েডে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
কয়েক দিন ধরে জ্বর না কমায় ভর্তি হওয়া রোগীদের পরীক্ষা করে টাইফয়েড মিলছে বলেই জানান কামারহাটির সাগর দত্ত হাসপাতালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান। ওই হাসপাতালেও কয়েক জন টাইফয়েডের রোগী রয়েছেন। তবে, এখন টাইফয়েডের চরিত্র খুব গোলমেলে বলেই জানাচ্ছেন সংক্রামক রোগের চিকিৎসক যোগীরাজ রায়। তাঁর কথায়, ‘‘টাইফয়েডের উপসর্গ সহজে বোঝা যাচ্ছে না। কারও অল্প জ্বর থাকছে, কারও ধুম জ্বর। পেটে ব্যথা, পেটের গোলমাল, মাথা ব্যথাও থাকছে। কারও আবার কিছুই বোঝা যাচ্ছে না, শেষে টাইফয়েড ধরা পড়ছে।’’ আন্ত্রিকের ক্ষেত্রে বাচ্চাদের ঝুঁকি বেশি বলেই মত যোগীরাজের। তিনি বলেন, ‘‘ওদের শরীরে দ্রুত জলশূন্যতা তৈরি হয়। তাই পেটের গোলমালে কোনও অবহেলা করা যাবে না।’’