প্রতীকী ছবি
অফিস থেকে ফিরেই শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকল। সর্দি, মাথাব্যথার মতো উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলেন বালিগঞ্জের বাসিন্দা, বছর চল্লিশের সুমনা মুখোপাধ্যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খেয়ে জ্বর কমলেও দিন চারেক পরেও ঘরের ভিতরে হাঁটাচলার মতো শারীরিক অবস্থা নেই সুমনার। রক্ত-সহ যাবতীয় শারীরিক পরীক্ষা করে চিকিৎসক জানালেন, সুমনা ভাইরাসঘটিত জ্বরে কাবু হয়েছেন।
গিরিশ পার্কের বাসিন্দা অনিন্দ্য রায়ের দিনে সর্দি-কাশি থাকে। রাত হলেই শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে। দিন কয়েক ওষুধ খেয়ে জ্বর কমলেও সপ্তাহখানেক ধরে হাত-পায়ের যন্ত্রণা, চোখের ভিতরে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যায় কাবু ছিলেন তিনি। জ্বরের পরে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো একাধিক শারীরিক পরীক্ষা করান অনিন্দ্য। রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক জানান, রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট-এ সংক্রমণ থেকেই জ্বর। চিকিৎসকের পরামর্শ, কয়েক দিন বাড়িতে বিশ্রাম জরুরি। এড়িয়ে চলতে হবে এসি, ফ্রিজের ঠান্ডা খাবার এবং পানীয়।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, সোয়াইন ফ্লু, ডেঙ্গির মতো মারাত্মক সংক্রামক রোগের পাশাপাশি ইনফ্লুয়েঞ্জা-র দাপটেও কাবু শহরবাসী। আট থেকে আশি— ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত বিভিন্ন বয়সের মানুষ। দিন কয়েকের মধ্যে সর্দি-কাশি, জ্বর কমলেও শ্বাসকষ্ট ও মূত্রনালীতে সংক্রমণের জেরে ভোগান্তি বা়ড়ছে।
মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানান, জ্বর কমলেও ‘পোস্ট ভাইরাল এফেক্ট’-এর জেরে ভুগতে হচ্ছে অনেককে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জ্বর কমতেই রোগীরা বিশ্রাম না নিয়ে বাইরে যাচ্ছেন, কাজে যোগ দিচ্ছেন। যার ফলে অবস্থার অবনতি ঘটছে। ক্লান্তি বাড়ছে। এমনকি, এর জেরে অন্যান্য অঙ্গেও প্রভাব পড়ছে। কারণ, এই ভাইরাস শরীরের সব শক্তি কেড়ে নিচ্ছে। তাই জ্বর কমলেও তাঁর পরামর্শ, কয়েক দিন বা়ড়িতে বিশ্রাম প্রয়োজন। বেশি পরিমাণ জল, ফল ও আনাজ খাওয়া দরকার। জ্বরের সময়ে অনেক ক্ষেত্রে খাওয়ার ইচ্ছে চলে যাচ্ছে। কিন্তু কোনও ভাবেই ভাজাভুজি জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত নয়। শরীরের শক্তি ফিরিয়ে আনতে ফল খাওয়া খুব জরুরি। সহজপাচ্য খাবার না খেলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
জ্বর কমে যাওয়ার পরেও অনেকের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে, রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময়ে অনেকেরই ওই সমস্যা বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে বক্ষরোগ চিকিৎসক সুবীরকুমার দত্ত বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই সর্দি-কাশি থেকে রেসপিরেটরি ট্র্যাক্টে সংক্রমণ ঘটছে। সেখান থেকেই জ্বর হচ্ছে। ফলে, জ্বরের পরে শ্বাসকষ্টের সমস্যা তৈরি হচ্ছে।’’ তাঁর পরামর্শ, সংক্রমণ এড়াতে এসি এবং ফ্রিজের ঠান্ডা জল খাওয়ার অভ্যাস বদলানো জরুরি। আর এক বক্ষরোগ চিকিৎসক পার্থসারথি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ভাইরাল সংক্রমণের পরে অনেক ক্ষেত্রেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা তৈরি হয়।’’
বড়দের পাশাপাশি ভুগছে শিশুরাও। ভাইরাল জ্বরের সঙ্গে দেখা দিচ্ছে পেটের সমস্যা। শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ জানান, সর্দি-কাশি ও জ্বরের সঙ্গে পেটের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। জ্বর কমলেও অনেকের শ্বাসকষ্ট থাকছে। তাঁর কথায়, ‘‘শিশুদের ক্ষেত্রে জ্বর হলেই শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। তবে প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্টে ভাইরাস ধরা পড়লে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। এই সময়ে নানা ভাইরাসের দাপট বাড়ে। তাই প্রয়োজনীয় পরীক্ষা জরুরি।’’