থোড়াই কেয়ার: টাকি হাউস গভর্নমেন্ট মাল্টিপারপাস স্কুল ফর বয়েজ-এর প্রবেশপথের পাশেই ফুটপাতের দোকানে অবাধে বিকোচ্ছে সিগারেট।
স্কুলের আশপাশে তামাকজাত জিনিস বিক্রি বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছিল কলকাতা পুরসভা। স্কুলের আশপাশের ১০০ গজ মেপে ‘তামাক মুক্ত এলাকা’ চিহ্নিত করে বিক্রেতা ও ক্রেতাদের ফুল দিয়ে গাঁধীগিরিও দেখিয়েছিল স্কুল পড়ুয়ারা। কিন্তু দু’মাস পরেও আদতে পরিস্থিতি বদলায়নি। স্কুলের গেটের পাশেই দেদার বিকোচ্ছে তামাকজাত জিনিস। অবাধে চলছে ধূমপান! এমনকি, একটি স্কুল থেকে পুলিশ ও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সার্বিক প্রচার চালানোর রূপরেখা তৈরি করতে কয়েক মাস আগে পুরসভায় একটি বৈঠক হয়। ঠিক হয়, শহরের স্কুল-কলেজ সংলগ্ন এলাকায় তামাকজাত দ্রব্য বিক্রির উপরে নিয়ন্ত্রণ আনা হবে। শহরের ছ’টি স্কুলকে পাইলট প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক ভাবে নির্বাচিত করা হয়। তার মধ্যে গত ১০মে যাদবপুর বিদ্যাপীঠে প্রথম ওই প্রকল্প শুরু করা হয়।
কিন্তু সম্প্রতি যাদবপুর বিদ্যাপীঠের বাইরে গিয়ে দেখা গেল রাস্তায় পড়ুয়ারা যেখানে ‘তামাক বর্জিত এলাকা’ লিখেছিল তা মুছে গিয়েছে। স্কুলের গেটের পাশের চায়ের দোকানে দেদার বিকোচ্ছে সিগারেট। স্কুলের গেটে ধূমপান আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ লেখা থাকলেও তার সামনেই চলছে ধূমপান। অন্য দিকে টাকি হাউস গভর্নমেন্ট মাল্টিপারপাস স্কুল ফর বয়েজ-এর সামনে রাস্তায় পড়ুয়াদের লেখার চিহ্ন থাকলেও দেওয়াল ঘেঁষে সেখানেই অবাধে চলছে সিগারেট বিক্রি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক পরেশকুমার নন্দ বলেন, ‘‘ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তা, আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা, স্থানীয় কাউন্সিলর ও মেয়রের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি। আমার ধারণা মাদকও বিক্রি হয়। কিন্তু তবুও পরিস্থিতি বদলায়নি।’’ প্রশ্ন উঠেছে যে প্রকল্প খোদ পুরসভা শুরু করেছে সেটা ব্যর্থ হচ্ছে জেনেও কেন চুপ রয়েছেন মেয়র? নিষেধ থাকা সত্ত্বেও কাদের মদতে স্কুলের সামনে সিগারেট বিক্রির সাহস দেখান দোকানদারেরা?
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের বাইরে নিষেধাজ্ঞা উড়িয়েই ধোঁয়ায় টান। নিজস্ব চিত্র
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের সামনের এক চা বিক্রেতা বলেন, ‘‘অনেক দাদাকে ধরে টাকা দিয়ে এখানে দোকান দিয়েছি।’’ যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য জানান, তিনি ওই চা বিক্রেতাকে সাবধান করেছেন। প্রয়োজনে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হবে বলেও জানিয়েছেন।
কলকাতা জেলা স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, ‘‘এ রকম রিপোর্ট পাইনি। পেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
পুরসভা গত বছরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০০ গজের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি বন্ধের জন্য উদ্যোগী হয়েছিল। সে কারণে ট্রেড লাইসেন্স নীতিতে বদল আনার কথাও ভাবা হয়েছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে যাতে কোনও তামাকজাত দ্রব্যের দোকান বসতে না পারে, তাই লাইসেন্সে কড়াকড়ি করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই। এখনও সে সব কিছুই হয়নি!
প্রসঙ্গত, যত্রতত্র তামাকজাত দ্রব্য বিক্রির বিরুদ্ধে অভিযান চালানো এবং জনমানসে সচেতনতা প্রচারের জন্য পুরসভা একটি বেসরকারি বিশেষজ্ঞ সংস্থার সঙ্গে মউ স্বাক্ষর করেছিল।সেই সংস্থার তরফেই শহরের পাঁচটি স্কুলে বিশেষ প্রচার অভিযান চালানো হচ্ছে। সংস্থার তরফে নির্মাল্য মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্কুল, কলেজ-সহ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশেই পুরোপুরি তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি বন্ধ করা উচিত। এ ব্যাপারে পুলিশের সহযোগিতাও প্রয়োজন। সব স্তর থেকে চেষ্টা না করা হলে এটা কিছুতেই আটকানো যাবে না।’’ তবে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি জানি না। খবর নিয়ে দেখব।’’ একই ভাবে কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (উত্তর) দেবাশিস সরকার আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’