উদ্যাপন: বড়দিনের আগে বো ব্যারাকে চলছে নাচগান। ভিড় থাকলেও মাস্ক নেই কারও মুখে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
শূন্যে নেমেও পাকাপাকি ভাবে শূন্য হল না!
আবারও যে কোনও সময়ে খেল দেখাতে পারে করোনাভাইরাস। খোদ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে মিলেছে এমনই সতর্কবার্তা। যদিও করোনা-আতঙ্ক কাটিয়ে জনজীবন এখন স্বাভাবিক। রাস্তাঘাটে কোথাও করোনা-বিধি মানার বালাই নেই। মাস্ক পরাও এখন অতীত। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সতর্কবার্তার পরে প্রশ্ন, করোনা-বিধি মেনে চলার পুরনো অভ্যাস কি আবার ফিরিয়ে আনবেন বঙ্গবাসী?
রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, ‘‘করোনা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে, এমন কথা কোনও দিনই বলা হয়নি। সাধারণ মানুষ নিজে থেকেই বিধি মানার অভ্যাস ত্যাগ করেছেন। এখন আবার নতুন করে সংশয় তৈরি হওয়ায় আগাম সতর্কতা প্রয়োজন।’’ তৃতীয় বা চতুর্থ ঢেউয়ের সময়ে সংক্রমণের হার যখন খুব বেশি, তখনই দেখা গিয়েছিল মাস্কহীন মানুষের ভিড়। সেখানে, এখন যখন রাজ্যে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা একেবারে তলানিতে, তখন কি নতুন করে মানুষকে করোনা-বিধি মেনে চলতে রাজি করানো যাবে? জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অমিতাভ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘২০১৯-এর ডিসেম্বরেও আমাদের ভাবনা ছিল, করোনার ঝড় বঙ্গে আসবে কি আসবে না, তা নিয়ে। কিন্তু পরের বছরের মার্চেই প্রথম জনতা-কার্ফু। তার পরে কী হয়েছে, তা সকলেরই জানা। তেমন পরিস্থিতি যাতে আবার না হয়, সে দিকে সকলকেই খেয়াল রাখতে হবে।’’
কেন্দ্রের তরফেও সমস্ত রাজ্যকে পাঠানো সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, নতুন কোনও ভ্যারিয়েন্ট মাথাচাড়া দিচ্ছে কি না, সে দিকে নজর রাখতে হবে। তার জন্য কেউ কোভিড পজ়িটিভ হলেই সেই নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠাতে হবে। রাজ্যে এখন দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা একেবারেই কম। ফলে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে সম্প্রতি চালু হওয়া জিনোম সিকোয়েন্সিং ল্যাবরেটরিতেই সেই পরীক্ষা করানো সম্ভব। চিনে এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ওমিক্রনের এক উপ-প্রজাতি ‘বিএফ.৭’। গত অক্টোবর থেকে এখনও পর্যন্ত গুজরাতের দু’টি এবং ওড়িশার একটি নমুনায় ওই উপ-প্রজাতির অস্তিত্ব মিলেছে।
২০২০-র ১৭ মার্চ বঙ্গে প্রথম করোনা ধরা পড়েছিল। তার পর থেকে টানা এত দিন ধরে সংক্রমণের পারদ ওঠানামার মধ্যে দিয়ে চলেছে করোনা অতিমারি। পরপর চারটি ঢেউ আছড়ে পড়েছে বঙ্গের মাটিতে। তবে চতুর্থ ঢেউ নেমে যাওয়ার পরে সংক্রমণের পারদ ক্রমশ তলানিতে গিয়ে ঠেকায় জনজীবনও নিজের ছন্দে চলতে শুরু করেছিল। চলতি বছরের নভেম্বরে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা এক অঙ্কে নেমে আসে। আট, পাঁচ, দুই বা একের মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল সেই সংখ্যা। তবে, গত রবিবার, বিশ্বকাপ ফাইনালের সন্ধ্যায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন রাজ্যবাসী। পৌনে তিন বছর পরে, গত শনিবার, অর্থাৎ ১৭ ডিসেম্বর বঙ্গে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য। যা দেখে সকলে ভেবেছিলেন, যাক, এ বার নিস্তার মিলল।
যদিও সেই সময়ে রাজ্যের চিকিৎসকদের অনেকেই বলেছিলেন, ‘‘এখনও স্বস্তির কিছু হয়নি। কারণ বিশ্বে করোনার প্রকোপ এখনও রয়েছে।’’ এ দিন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘আমরা নজরদারি বাড়াচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের নিজস্ব জিনোম সিকোয়েন্সিং পরিকাঠামোও চালু করা হয়েছে।’’ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায় বলেন, ‘‘চিনের মতো করে ভারতে কোভিডকে ভাবলে চলবে না। চিন জ়িরো কোভিড পলিসিতে চলছে। কিন্তু আমরা প্রতিষেধকে জোর দিয়েছিলাম। তাই দেশে এখন করোনা অতিমারির শেষ পর্যায় চলছে। কিন্তু চিনে করোনা এখনও অতিমারির পর্যায়ে রয়েছে।’’ তিনি আরও জানাচ্ছেন, চিনের মতো করে না ভেবে ভাল করে নজরদারি ও গত দু’বছরে যে পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে, প্রয়োজনে তাতে ফিরে যেতে হবে। অযথা আতঙ্কিত হওয়া যাবে না।