R G Kar Hospital Incident

কী করে ভাবমূর্তি ফেরানো যায়, তা নিয়ে চর্চা শুরু কলকাতা পুলিশের অন্দরে, তার জন্যই কি ‘মুখ বদল’?

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ঘটনা নিয়ে কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার থামছে না। সমাজমাধ্যমে করা কলকাতা পুলিশের স্বাধীনতা দিবস, রাখিবন্ধন বা জন্মাষ্টমীর পোস্টও বিরূপ মন্তব্য থেকে বাদ পড়ছে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২৪ ০৭:৪২
Share:

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।

খুন এবং ধর্ষণের মূল মামলা তাদের হাত থেকে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার পরে ১৫ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলারও তদন্তভার আর তাদের হাতে নেই। আদালতের নির্দেশে সেই মামলার ফাইলপত্রও সিবিআই-কে বুঝিয়ে দিয়ে আসতে হয়েছে। তবু যেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ঘটনা নিয়ে কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার থামছে না। সমাজমাধ্যমে করা কলকাতা পুলিশের স্বাধীনতা দিবস, রাখিবন্ধন বা জন্মাষ্টমীর পোস্টও বিরূপ মন্তব্য থেকে বাদ পড়ছে না।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে কী করে ভাবমূর্তি ফেরানো যায়, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে কলকাতা পুলিশের অন্দরে। প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকেও এ ব্যাপারে একাধিক নির্দেশ এসেছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর। তাতেও পরিস্থিতির বদল হচ্ছে না দেখে সরাসরি নিজেদের মতো করে সমাজমাধ্যমে বার্তা দেওয়া শুরু করেছেন পুলিশকর্মীরা। গত দু’দিনে এমন একাধিক পোস্ট সেখানে ঘুরছে, যা পুলিশকর্মীদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা। ‘রেজিমেন্টেড’ বাহিনীর সদস্য হিসাবে যা কার্যত নজিরবিহীন। পোস্টে কেউ লিখছেন, করোনায়, আইপিএলের টিকিট পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে, কাউকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে বা যৌনপল্লিতে ধরা পড়া কাউকে ছাড়ানোর ব্যাপারে কী ভাবে তাঁরা সাহায্য করেছেন। ‘পুলিশ তুমি যতই মারো, তোমার মেয়েও হচ্ছে বড়’, এই স্লোগান প্রসঙ্গে এক পুলিশ অফিসার লিখেছেন, ‘‘মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। এই বক্তব্যকে হুমকি হিসাবে ধরেই বলছি, ব্যক্তিগত ভাবে এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করব।’’

তবে কি পুলিশকর্মীদের ব্যক্তিগত ভাবে লেখার অনুমতি দিয়েছে লালবাজার? পুলিশ জানিয়েছে, এ নিয়ে আলাদা আলোচনা হয়েছে লালবাজারে। ভবানী ভবন থেকে আসা দুই পুলিশকর্তাও ছিলেন সেখানে। সূত্রের খবর, সেখানেই ঠিক হয়েছে, এই মুহূর্তে কলকাতা পুলিশের তরফে মুখপাত্র হিসাবে যাবতীয় বক্তব্য রাখবেন কোনও মহিলা আইপিএস অফিসার। এই প্রসঙ্গে এক অভিজ্ঞ আইপিএসের নাম উঠে এলেও তিনি অসুস্থ থাকায় পরে উঠে আসে ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের নাম। এর পরেই মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁকে সমস্ত দিক জেনে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তার পর থেকেই লালবাজারে নগরপালের বদলে এবং পরে নবান্নে রাজ্য পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠক করতে দেখা যায় ইন্দিরাকে। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ইন্দিরা এর আগে দক্ষ হাতে বিধাননগর কমিশনারেটের ট্র্যাফিক ব্যবস্থা সামলেছেন। উত্তপ্ত ভাঙড়ে ১৪৪ ধারা জারি থাকার জন্য এক নেতাকে সেখানে ঢুকতে না দেওয়ার ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ করে প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের নজর কেড়েছিলেন। পুলিশের এক অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেলেরও তিনি আস্থাভাজন।’’

Advertisement

পুলিশের এক সূত্রের বক্তব্য, প্রশাসনের শীর্ষ স্তর মনে করছে, আর জি করের ঘটনা জনসমক্ষে যথাযথ ভাবে তুলে ধরায় গাফিলতি ছিল। স্পর্শকাতর ঘটনায় মানুষের ভাবাবেগ বুঝতে ভুল হয়েছে পুলিশকর্তাদের একাংশের। খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় এক সিভিক ভলান্টিয়ার গ্রেফতার হওয়ার পরেও তার পরিচয় না জানিয়ে ‘শুধুমাত্র এক জন অপরাধী’ বলে ব্যাখ্যা করাও পুলিশের বিরুদ্ধে গিয়েছে বলে মত শীর্ষ স্তরের। এর পরেই শীর্ষ স্তর থেকে নির্দেশ যায়, বাংলায় স্বচ্ছন্দে কথা বলতে পারেন, এমন কেউ পুলিশের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করবেন। এ ব্যাপারে ইন্দিরাকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তারা অন্য কাজে ব্যস্ত। লালবাজার পুলিশের যে জ়োনে পড়ছে, আমি সেখানকার ডিসি। তাই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়েছে।’’ লালবাজারের এক অতিরিক্ত নগরপাল বলছেন, ‘‘পুলিশও মানুষ। ব্যক্তিগত স্তরে আক্রমণ হলে সরব হবেই। এই পরিস্থিতি সামলানো খুব প্রয়োজন। নয়তো আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement