Heatwave

এ বারও কি তবে তাপপ্রবাহের দোসর সেই বিদ্যুৎ বিভ্রাট? প্রশ্ন শহরবাসীর

বুধবার রাত থেকেই সমাজমাধ্যম ভরে গিয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা সিইএসসি-র বিরুদ্ধে লেখা পোস্টে। মূলত উত্তর এবং দক্ষিণ দমদম, সিঁথি এলাকা থেকে এই ধরনের পোস্ট বেশি করেছেন গ্রাহকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৪৫
Share:

গরমে চাহিদা বাড়বে হাতপাখারও। তারই বোঝা নিয়ে দোকানের পথে। বৃহস্পতিবার, বাগমারিতে। —নিজস্ব চিত্র।

দিনভর ঝলসানো গরম। সূর্যাস্তের পরেও বাতাসহীন তপ্ত পরিবেশ। পাখার নীচেও ঘেমে স্নান করে যেতে হচ্ছে। তারই মধ্যে গত বছরের দুর্বিষহ অবস্থা মনে করিয়ে জায়গায় জায়গায় শুরু হয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। ভুক্তভোগীদের দাবি, কাউকে জানিয়েই লাভ হচ্ছে না। এ বারও কি তবে তাপপ্রবাহের দোসর সেই বিদ্যুৎ বিভ্রাট? সিইএসসি-র তরফে যদিও দাবি করা হয়েছে, বিদ্যুতের চাহিদা ও জোগানে সমস্যা নেই। কিছু জায়গায় ফিউজ়ের গন্ডগোল হয়েছে (লাইনে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ হওয়ায় ফিউজ় জ্বলে বাকি কিছুকে রক্ষা করে)। সেটা শীতকালেও হতে পারে। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা আবার এই বিভ্রাটের জন্য দায়ী করছে বেআইনি সংযোগ ও আবেদনহীন এসি-র ব্যবহারকে।

Advertisement

বুধবার রাত থেকেই সমাজমাধ্যম ভরে গিয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা সিইএসসি-র বিরুদ্ধে লেখা পোস্টে। মূলত উত্তর এবং দক্ষিণ দমদম, সিঁথি এলাকা থেকে এই ধরনের পোস্ট বেশি করেছেন গ্রাহকেরা। দমদম বিমানবন্দরের ২ নম্বর গেটের কাছে মতিলাল কলোনির এক বাসিন্দা যেমন সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘বুধবার মধ্যরাত থেকে আমাদের পাড়া বিদ্যুৎ সংযোগহীন। প্রায় ১০ ঘণ্টা হয়ে গিয়েছে, সব রকম ভাবে সিইএসসি-কে জানানো হলেও কোনও ফল হয়নি। শুধু কাজ চলছে জানিয়েই দায় সারছে তারা।’

সিইএসসি-কে উদ্দেশ্য করে দমদম সাতগাছি যুগিপাড়ার বাসিন্দা কেশব রায় লিখেছেন, ‘প্রতি রাতে ১২টা বাজলেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। কিছুতেই সুরাহা হচ্ছে না।’ তানিয়া সরকার নামে এক মহিলার বক্তব্য, বুধবার রাত ১১টা থেকে তাঁদের এলাকা বিদ্যুৎহীন। কিন্তু সিইএসসি-র হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করা হলেও কেউ ধরেননি। পিকনিক গার্ডেনের বাসিন্দা অমর্ত্য গুপ্তেরও একই অভিযোগ। তুলি দেবনাথ নামে এক তরুণী লিখেছেন সিইএসসি-কে অভিযোগ জানাতে গিয়ে সমস্যায় পড়ার কথা। অর্পণ সর্বাধিকারী নামে এক ব্যক্তি সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, দেশের মধ্যে সর্বাধিক মাসুল দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রসঙ্গ। সিইএসসি-র একচ্ছত্র ব্যবসা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁর মন্তব্য, ‘এত বেশি টাকা নেওয়ার পরেও জরুরি পরিষেবা দিতে না পারলে প্রতিবাদে রাস্তায় নামবেন মানুষ।’

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, অবস্থা এমন যে, দমদম পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের একাংশে জল সরবরাহ করতেও সমস্যা হয় পুর কর্তৃপক্ষের। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় একটি পাম্প পুরসভা চালাতে পারেনি। অন্য পাম্প চালিয়ে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত চার নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি তাপস রায়ের দাবি, ‘‘মধ্যরাত থেকে এই অবস্থা। সিইএসসি-র কর্মীরা দু’বার এসে সব দেখে গিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় ত্রুটি নেই, সমস্যা বাইরে হয়েছে। দ্রুত মেরামত করা হবে।’’ সেই মেরামতিতেই কোথাও ১০ ঘণ্টা, কোথাও তারও বেশি পেরিয়েছে বলে অভিযোগ।

সিইএসসি-র তরফে যদিও দাবি করা হয়েছে, বুধবার রাতে তাদের এলাকায় এই মরসুমের সর্বাধিক ২৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা ছিল। সেই চাহিদা সাফল্যের সঙ্গেই মেটানো গিয়েছে। সংস্থার এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টর (ডিস্ট্রিবিউশন সার্ভিসেস) অভিজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা ও জোগানে কোনও বিরোধ নেই। সাফল্যের সঙ্গেই চাহিদা মেটানো গিয়েছে। কিছু জায়গায় ফিউজ়ের গন্ডগোল হয়। এটা শীতেও হতে পারে। এটাকে সার্বিক করে দেখা উচিত নয়।’’

ভুক্তভোগীরা এই দাবি মানতে নারাজ। একই রকম বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকার অভিযোগ এসেছে রাজারহাটের জগদীশপুর, বনমালিপুর, নারায়ণপুরের তেঁতুলতলা, লালকুঠি অঞ্চল, এমনকি বিধাননগর পুর এলাকা থেকেও। জ্যাংড়া-হাতিয়াড়া, জগৎপুর, আদর্শপল্লির মতো এলাকা বুধবার রাত সাড়ে ১১টার পর থেকেই বিদ্যুৎহীন ছিল বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার ভোরে ওই সব এলাকায় বিদ্যুৎ আসে। এই সব এলাকা আবার রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার অধীনে।

ওই সংস্থার চিফ ইঞ্জিনিয়ার (দক্ষিণ) পার্থ দত্তের দাবি, “বেআইনি বিদ্যুৎ সংযোগ ও বিদ্যুতের বরাদ্দ বাড়ানোর আবেদন না করে এসি বসানোয় বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। বেআইনি সংযোগ নিয়ে গ্রাহকেরা সচেতন হোন, এই প্রত্যাশা করব।” ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, আবেদনহীন এসি-র সংযোগ বন্ধ করা বা বেআইনি বিদ্যুতের সংযোগ ধরার কাজ তো বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থারই। যাঁরা বৈধ ভাবে সব করছেন, তাঁরা ভুগবেন কেন?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement