sanjay budhia

চাকায় সওয়ার জল হাজির দরজায়, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রিয়ম বুধিয়ার

পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি সম্প্রতি সম্মানিত হয়েছেন ‘এফবিএন নেক্সট জেন লোম্বার্ড ওদিয়ের, পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ড ২০২০’-তে। আন্তর্জাতিক মঞ্চের এই স্বীকৃতিতে উচ্ছ্বসিত শিল্পপতি সঞ্জয় বুধিয়ার বড় মেয়ে প্রিয়ম।

Advertisement

অর্পিতা রায়চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২০ ১৩:৩১
Share:

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে উচ্ছ্বসিত প্রিয়ম বুধিয়া। ছবি: সংগৃহীত

জলের ট্যাঙ্ক নির্মাণ তাঁদের পারিবারিক ব্যবসার অন্যতম অঙ্গ। প্রিয়ম বুধিয়া সেই জলবন্দি প্রক্রিয়ায় যোগ করেছেন স্বকীয়তা। তাঁর উদ্যোগে ট্যাঙ্কভর্তি জল পৌঁছে যাচ্ছে দরজায় দরজায়। প্রকল্পের পোশাকি নাম ‘ওয়াটার অন হুইল্‌স’। পাশাপাশি, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ ও তার পুনর্ব্যবহার নিয়েও কাজ করেছেন প্রিয়ম। পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি সম্প্রতি সম্মানিত হয়েছেন ‘এফবিএন নেক্সট জেন লোম্বার্ড ওদিয়ের, পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ড ২০২০’-তে।

Advertisement

আন্তর্জাতিক মঞ্চের এই স্বীকৃতিতে উচ্ছ্বসিত শিল্পপতি সঞ্জয় বুধিয়ার বড় মেয়ে প্রিয়ম।

এফবিএন-এর সম্পূর্ণ নাম ‘ফ্যামিলি বিজনেস নেটওয়ার্ক’। ৬৫টি দেশের ৪ হাজার ব্যবসায়ী পরিবার এর অন্তর্গত। সংস্থার ১৬ হাজার সদস্যের মধ্যে ৬ হাজার ৪০০ জন তরুণ প্রজন্মের। তাঁরা সকলে তাঁদের পারিবারিক ব্যবসার নতুন কান্ডারি। এই প্রাঙ্গণে তাঁরা নিজেদের ভাবনার আদানপ্রদান করে আরও সমৃদ্ধ হন। সংস্থার সেই তরুণ শিল্পপতি ও উদ্যোগীদের নিয়েই এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল এফবিএন। ২৬টি দেশের প্রতিযোগীরা অংশ নিয়ে অনলাইনে পেশ করেছিলেন নিজেদের উদ্যোগ। তার পর দর্শকদের ভোট। সেই বিচারে সেরার শিরোপা পেয়েছে প্রিয়মের প্রেজেন্টেশন ‘এমব্রেসিং গ্রিন’।

Advertisement

পরিবেশের পাশাপাশি আমার মূল লক্ষ্য নারী ও শিশুকল্যাণ—ছবি: সংগৃহীত

সবুজকে আলিঙ্গন করার সেই প্রয়াসে প্রিয়মের হাতিয়ার জল। প্রিয়মের ভাবনায় তাঁদের সংস্থা প্যাটন তৈরি করেছে রোলার ট্যাঙ্ক। ৯০ লিটার জল ধারণ করতে সক্ষম ট্যাঙ্কের মূল উপকরণ ‘রিসাইক্লেবল প্লাস্টিক’। সেই ট্যাঙ্ক হাজির হচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামের জলকষ্টপীড়িত এলাকায়। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার বেশ কিছু গ্রামে ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়েছে ‘ওয়াটার অন হুইল্‌স’। অসমে প্রিয়ম কাজ করেছেন বৃষ্টির জল সংরক্ষণ নিয়ে।

আরও পড়ুন: বাজি বিক্রি নয়, সিদ্ধান্তে কালিকাপুর বাজিবাজার

আনন্দবাজার ডিজিটালকে প্রিয়ম বললেন, ‘‘পরিবেশের পাশাপাশি আমার মূল লক্ষ্য নারী ও শিশুকল্যাণ। আমাদের সমাজের এটাই নিয়ম, যে বাড়ির মেয়েরাই যান জল আনতে। মাইলের পর মাইল হেঁটে মাথায় পর পর কলসি চাপিয়ে তাঁদের জল আনতে হয়। বেশির ভাগ সময় মায়ের সঙ্গী হয় তাঁর কিশোরী কন্যাটি। এটা কিন্তু আদৌ স্বাস্থ্যসচেতন পরিস্থিতি নয়।’’ প্রিয়মের আরও বক্তব্য, ‘‘গ্রামের নির্জন পথে একা একা জল আনতে যাওয়া বা জল নিয়ে ফেরার পথে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন মহিলারা। অনেক সময়েই দেখা যায় কলসির মুখ অনাবৃত। ফলে সেই জল কতটা স্বাস্থ্যসম্মত থাকে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।’’ গ্রামের মহিলাদের দীর্ঘ দূরত্ব পেরিয়ে ইঁদারা, পুকুর বা নদী থেকে জল আনার পরিশ্রম দূর করেছে ‘ওয়াটার অন হুইলস’ প্রকল্প। জানালেন প্রিয়ম। তাঁর দাবি, এর ফলে বাড়তি সময়টুকু অনেক মহিলাই কাজে লাগাচ্ছেন ঘরে বসে উপার্জনের লক্ষ্যে। পড়াশোনায় সময় দিতে পারছে তাঁদের সন্তানরাও। ‘নারীশক্তির বিকাশ’-এর শরিক হওয়ায় সাফল্যের আনন্দ কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে প্রিয়মের।

আরও পড়ুন: বাজি পোড়ানোয় ‘নিষেধাজ্ঞা’ শহরের বহু আবাসন কমিটির

ময়দানে নেমে হাতেকলমে কাজ করতে ভালবাসেন প্রিয়ম—ছবি: সংগৃহীত

শিল্পপতি সঞ্জয় বুধিয়ার কন্যা প্রিয়ম জানালেন, পুরুষ-নারী সমানাধিকারের সহজপাঠ তাঁর হয়েছে নিজের পরিবারেই। উদার ও প্রগতিশীল সঞ্জয় তাঁর ব্যবসার উত্তরাধিকার নির্দ্বিধায় দিয়েছেন কন্যাসন্তান প্রিয়মকে। তার আগে নিজেকে তৈরি করেছেন প্রিয়ম। কলকাতার লোরেটো হাউস এবং লা মার্টিনিয়ার ফর গার্লস থেকে পাশ করার পর ইংল্যান্ডের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। এর পর লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্স থেকে ‘এগজিকিউটিভ ম্যানেজমেন্ট এবং অন্ত্রপ্রনেয়ারশিপ’ করেন। পড়াশোনা শেষ করেই অবশ্য পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেননি। তার আগে কাজ করেছেন নামী ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কে। কারণ, প্রিয়ম মনে করেন, নিজের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করার জন্য অন্যের অধীনে কাজ করা খুব প্রয়োজন।

২০১১ সালে প্রিয়ম দেশে ফিরে এসে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন। বর্তমানে তিনি সংস্থার বিজনেস ডেভেলপমেন্টের প্রেসিডেন্ট। সংস্থার স্টিল ফিটিংস, পিভিসি পাইপ, ওয়াটার ট্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন উৎপাদনক্ষেত্রে নতুন নতুন দিক সংযোজনের চেষ্টা করেছেন তিনি।

সাম্প্রতিক অতিমারি প্রভাব ফেলেছে তাঁর উদ্যোগে। প্রিয়ম তৈরি করেছেন এমন ওয়েস্ট বিন, যা ব্যবহার করার জন্য হাত লাগানোর প্রয়োজন হয় না। করোনা আক্রান্তদের কথা ভেবেই তাঁর এই উদ্ভাবন। যাতে আক্রান্ত রোগী তাঁর ব্যবহৃত জিনিস দিয়ে সংক্রমণ না ছড়িয়ে ব্যবহার করতে পারেন ওই পাত্র। ফেলতে পারেন ব্যবহার করা মাস্ক, টিস্যু-সহ অন্যান্য জিনিস। একইরকম প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হয়েছে ‘সেফ হ্যান্ড ওয়াশ স্টেশন’ও। জনসমাগম হওয়ার সম্ভাবনা আছে। অথচ হাত ধোওয়ার সুবিধে নেই, এমন জায়গায় কথা ভেবেই হাল্কা ও বহনযোগ্য এই ব্যবস্থা।

সমসাময়িক প্রয়োজনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এভাবেই নতুন নতুন ভাবনা বাস্তবায়িত করতে চান তরুণ তুর্কি প্রিয়ম।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement