জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির মধ্যেই আর জি করে আনা হয়েছে এক প্রসূতিকে। —ফাইল চিত্র।
জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা পেতে সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় আজ, বুধবার থেকে ওই হাসপাতালের সামনে রোগীদের সহায়তায় কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের তরফে একটি কিয়স্ক চালু করা হবে। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ওই কিয়স্কের হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে মূলত দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের সরকারি স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা দিতে শহরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনেও দ্রুত একই ধাঁচে কিয়স্ক বসাতে চায় পুরসভা। সূত্রের খবর, আর জি কর ও ন্যাশনালকে পাইলট প্রকল্প হিসাবে পর্যবেক্ষণ করে শহরের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে একই ধাঁচে রোগীদের সহায়তার জন্য এই ধরনের হেল্প ডেস্ক চালু করতে চায় পুরসভা।
আর জি কর কলকাতা পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি দেবিকা চক্রবর্তী মঙ্গলবার রাতে দাবি করেন, ‘‘জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে আর জি কর থেকে প্রচুর রোগী ফিরে যাচ্ছেন বলে খবর পাচ্ছি। অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। আবার এই ধরনের কোনও রোগী ভর্তি হলেও ঠিকঠাক চিকিৎসা হচ্ছে না। মৃত্যুরও খবর পেয়েছি। সাধারণ মানুষ আমাদের কাছে এলেও কোনও সাহায্য করতে পারছি না। সাধারণ রোগীদের কথা ভেবেই পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এই পরিষেবা চালু করা হচ্ছে।’’ দেবিকা জানান, আর জি করের বাইরে ফুটপাতে জায়গা ঠিক করে কিয়স্ক নির্মাণের কাজ মঙ্গলবার গভীর রাতেই সম্পন্ন হবে। তাঁর কথায়, ‘‘কোন জায়গায় কিয়স্ক তৈরি হবে, তা দেখতে পুরকর্মীরা ছাড়াও আমি থাকব। বুধবার সকাল থেকে পরিষেবা চালু হয়ে যাবে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, আপাতত ঠিক হয়েছে, কিয়স্কে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের চার-পাঁচ জন কর্মী থাকবেন। রোগীরা ঢোকা মাত্রই কিয়স্কে বসে থাকা কর্মীরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন। সব তথ্য জেনে তাঁদের শহরের বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন তাঁরা। সরকারি স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলে বেসরকারি হাসপাতালেও ওই সমস্ত রোগী সেই সুবিধা পাবেন।’’ পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা জানান, আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা অনেক রোগী শহরের সরকারি হাসপাতালে আসেন। জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলায় তাঁদের অনেকেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন। ওই রোগীদের পাশে দাঁড়াতে এই পরিষেবা চালু করার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই মেয়র ফিরহাদ হাকিম সম্মতি দিয়েছেন বলে পুরসভা সূত্রের খবর। এই ভাবে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহলেও আলোচনা হয়েছে বলে খবর। ডেপুটি মেয়র তথা মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ কাশীপুর-বেলগাছিয়া অঞ্চলের বিধায়ক। তিনিও আর জি করে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের উচ্চ স্তরে আলোচনা করেছেন।
যদিও বিজেপি পুরপ্রতিনিধি সজল ঘোষের প্রশ্ন, ‘‘এত দিনে পুরসভার
ঘুম ভাঙল? এই পরিষেবা আগে কেন চালু হয়নি? তার মানে সরকারি ব্যবস্থাপনার উপরে ভরসা হারিয়ে ফেলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনই। তাই বেসরকারি হাসপাতালের উপরে ভরসা করতে হচ্ছে। এই কিয়স্ক চালুর বিষয়টিই প্রমাণ করে যে, বর্তমান সরকারের পতন অনিবার্য।’’ এ বিষয়ে কথা বলতে মঙ্গলবার রাতে মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তা বেজে গিয়েছে। এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপ করা হলেও উত্তর মেলেনি।