ক্যাবচালকদের আন্দোলনে দুর্ভোগে যাত্রীরা

পার্ক স্ট্রিট আর এসপ্লানেডের মাঝামাঝি একটি জায়গা থেকে সত্তর বছরের বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে অ্যাপ-ক্যাবে উঠেছিলেন কুঁদঘাটের বাসিন্দা এক মহিলা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৯ ০১:১৬
Share:

আন্দোলনের নামে জোর করে গাড়ির এসি বন্ধ রেখে যাত্রীদের সঙ্গে অসহযোগিতা করার অভিযোগ উঠল এক শ্রেণির অ্যাপ-ক্যাব চালকের বিরুদ্ধে।

Advertisement

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা। পার্ক স্ট্রিট আর এসপ্লানেডের মাঝামাঝি একটি জায়গা থেকে সত্তর বছরের বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে অ্যাপ-ক্যাবে উঠেছিলেন কুঁদঘাটের বাসিন্দা এক মহিলা। বেশ কিছু ক্ষণ অপেক্ষার পরে ওই মহিলা বুঝতে পারেন, গাড়ির এসি চলছে না। চালককে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি জানান, গাড়িতে জ্বালানি কম রয়েছে। তাই এসি চালানো যাবে না। কাছাকাছি কোথাও জ্বালানি ভরে এসি চালু করবেন। এর পরে আরও বেশ কিছুটা দূরত্ব গিয়ে ওই যাত্রী দেখেন, চালক পাম্পে গিয়ে জ্বালানি ভরার কোনও লক্ষণ দেখাচ্ছেন না। তখন বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট অ্যাপ-ক্যাব সংস্থার দফতরে ফোন করে অভিযোগ জানানোর কথা বলতেই এসি চালু করেন চালক।

মুকুন্দপুর থেকে বালিগঞ্জে আসার পথে একই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে আরও এক মহিলা যাত্রীর। তিনি এসি চালু করার কথা বলতেই চালক জানান, এসি চলছে। কিন্তু মহিলা দেখেন, এসি নয়, চলছে শুধু ব্লোয়ার। এ নিয়ে বেশ কিছু ক্ষণ কথা কাটাকাটির পরে এসি চালু করেন চালক।

Advertisement

এ দিন সকালে হাওড়া এবং শিয়ালদহে একটি নির্দিষ্ট সংস্থার অ্যাপ-ক্যাব ভাড়া করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে দূরপাল্লার ট্রেন থেকে নামা যাত্রীদের। কয়েকটি ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা দূরত্ব যাওয়ার পরে এসি চালু করেন ক্যাবচালকেরা। কিছু ক্ষেত্রে কথা কাটাকাটি এড়াতে নিরুপায় যাত্রীরা ওই সংস্থার বুকিং বাতিল করে অন্য সংস্থার ক্যাব ভাড়া করেন।

অ্যাপ-ক্যাব চালকদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড’ এ দিন একটি নির্দিষ্ট অ্যাপ-ক্যাব সংস্থার গাড়িতে এসি বন্ধ রাখার জন্য আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল। কিলোমিটার প্রতি ভাড়া ১৮.৭৫ টাকা করার দাবিতেই গাড়ির এসি বন্ধ রেখে আন্দোলনের ডাক দেয় শাসক দল ঘনিষ্ঠ ওই সংগঠন।

এ দিন সকাল থেকে বিকেল তিনটে পর্যন্ত দফায় দফায় এসপ্লানেড ছাড়াও হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনে নিজেদের কর্মসূচির প্রচারে পথে নামেন ওই অ্যাপ-ক্যাব সংগঠনের সদস্যেরা। দুপুরের দিকে বালিগঞ্জে ওই অ্যাপ-ক্যাব সংস্থার অফিসের সামনে বিক্ষোভও দেখায় সংগঠনটি। রাস্তায় ওই অ্যাপ-ক্যাব সংস্থার গাড়ি থামিয়ে চালকদের এসি বন্ধ রাখার আর্জি জানান সংগঠনের সদস্যেরা। চালকেরা এসি চালাতে অস্বীকার করায় চরম বিড়ম্বনায় পড়েন যাত্রীদের একাংশ। দুপুরের পরে অবশ্য ওই আন্দোলন কিছুটা থিতিয়ে আসে।

এ দিনের আন্দোলন প্রসঙ্গে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড’-এর সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা ওই ক্যাব সংস্থার অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে যাত্রী-সহ সকলকেই সচেতন করতে চেয়েছি। যাত্রীদের হয়রানি আমাদের লক্ষ্য নয়। কেউ অসুবিধার মধ্যে পড়ে থাকলে তার জন্য

দুঃখপ্রকাশ করছি।’’

সিটু-অনুমোদিত অ্যাপ-ক্যাব চালক সংগঠনের সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা এই আন্দোলন সমর্থন করি না। কারণ, এতে যাত্রীদের সঙ্গে ক্যাবচালকদের অহেতুক সংঘাতের পরিবেশ তৈরি হয়। ওই সংস্থার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আছে। সে সব নিয়ে আগামী সপ্তাহে আমরা

আন্দোলনে নামছি।’’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে সংশ্লিষ্ট অ্যাপ-ক্যাব সংস্থার তরফে জানানো হয়, যাত্রী-পরিষেবা ঠিক রাখতে তারা সর্বদা সচেষ্ট। যাবতীয় সরকারি নিয়ম মেনেই তারা চলছে। যাত্রীদের থেকে পাওয়া অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই অ্যাপ-ক্যাব সংস্থার মুখপাত্র এ দিন লিখিত বিবৃতিতে জানান, ‘অল্প সংখ্যক কিছু চালকের অসহযোগিতার জন্য যাত্রীদের অসুবিধা হওয়ায় আমরা দুঃখিত। আমরা চেষ্টা করি যাতে চালকেরা যথেষ্ট ভাড়া পান। সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের

সাহায্য পেয়েছি’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement