থমকে: কৈখালি যাওয়ার পথে ভিআইপি রোডে যানজট। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
নিত্যদিনের যানজটে জেরবার কলকাতা বিমানবন্দরের যাত্রীরা। এক দিকে, উল্টোডাঙা থেকে বিমানবন্দরের পথে যানজট। অন্য দিকে, যশোর রোডে বিরাটির দিক থেকেও যানজট। অভিযোগ, এর ফলে অনেকেই উড়ান ধরতে সময় মতো বিমানবন্দরে পৌঁছতে পারছেন না। যার ফলে, প্রথমত বিমান ধরতে দেরি হচ্ছে। দ্বিতীয়ত কখনও কখনও উড়ান হাতছাড়াও হয়ে যাচ্ছে।
বিমানবন্দর বা উড়ান সংস্থার কর্মী, বিশেষত বিমানসেবিকা ও পাইলটরা এই যানজটের জেরে প্রায়ই ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন। অনেক সময়ে তাঁদের পৌঁছতে দেরি হওয়ায় উড়ান ছাড়তেও দেরি হচ্ছে। সেই বিলম্বের কারণে আখেরে ক্ষতি হচ্ছে উড়ান সংস্থাগুলির। অভিযোগ, বর্ষাকালে অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে।
এই সব অভিযোগ নিয়েই রাজ্য সরকারের পরিবহণ দফতরের দ্বারস্থ হয়েছে কলকাতা বিমানবন্দরের বিভিন্ন উড়ান সংস্থার সংগঠন। ‘এয়ারলাইন্স অপারেটিং কমিটি’ বা এওসি-র তরফে লিখিত ভাবে পরিবহণ দফতরকে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র বিমানবন্দরে পৌঁছনোর জন্য ভিআইপি রোডের বিকল্প কোনও রাস্তার ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা যেন রাজ্য সরকার ভেবে দেখে। এমনকি, মূল রাস্তার ধারে বিমানবন্দরমুখী গাড়ির জন্য কোনও ‘রিং রোড’ তৈরি করা যায় কি না, তা-ও ভেবে দেখতে বলা হয়েছে।
শুধু তো ভিআইপি বা যশোর রোড নয়, অভিযোগ, বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে থেকে বিমানবন্দরে আসার রাস্তাতেও গাড়ির চাপ নিত্যদিন বেড়ে চলেছে। বিমানবন্দরের কর্তাদের দাবি, এখন বহু যাত্রীই বিরাটি-বারাসতের দিক থেকে বিমানবন্দরে আসেন। এমনকি, ওই দিকে নতুন তৈরি হওয়া বিভিন্ন আবাসনে থাকেন বহু কর্মীও। বিমানবন্দরে কর্মরত এক আধিকারিক বললেন, ‘‘ভিআইপি রোডে মেট্রো রেলের কাজের জন্য সমস্যা হচ্ছে। তবে, মূলত সন্ধ্যার উড়ানগুলিই ধরতে পারছেন না যাত্রীদের একাংশ।’’
এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কৈখালির পরে বিমানবন্দরে ঢোকার জন্য আলাদা উড়ালপুল আছে। তবে, যাঁরা গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করেন, তাঁদেরই সুবিধা হয়। আমার মতো অনেকেই বাসে যাতায়াত করেন। কৈখালি ছাড়ানোর পরে বিমানবন্দরের টার্মিনালে পৌঁছতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে।’’ অভিযোগ, বর্ষায় ভিআইপি রোডে এত জল জমে যাচ্ছে যে, এক দিকের রাস্তা কার্যত বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। তখন একটিমাত্র লেন দিয়ে শুধু তো বিমানবন্দর নয়, বিরাটি-বারাসতের যাত্রীরাও আসা-যাওয়া করেন। ফলে, গাড়ির চাপ থাকে অনেক বেশি।
অভিযোগের গুরুত্ব উপলব্ধি করে পরিবহণকর্তারা জানাচ্ছেন, বিষয়টি নিয়ে অবিলম্বে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করা প্রয়োজন। বিমানবন্দরের অধিকর্তার নেতৃত্বে সেই বৈঠকে উড়ান সংস্থা ও পরিবহণ দফতরের প্রতিনিধিরা ছাড়াও পুলিশ, পূর্ত দফতর এবং আশপাশের পুরসভার কর্তাদেরও থাকা দরকার। প্রশাসনের মতে, সকলের সঙ্গে কথা বলে একটি সমাধানসূত্র বার করা প্রয়োজন।
এক পরিবহণকর্তার কথায়, ‘‘দুম করে বললেই তো আর বিকল্প রাস্তা করে দেওয়া যাবে না! তার জন্য জমি দরকার। আরও অনেক আনুষঙ্গিক বিষয় রয়েছে। উড়ান ধরতে যাওয়া যাত্রীদের জন্য সত্যিই কোনও বিকল্প পথ তৈরি করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে গুরুত্ব সহকারে ভাবা প্রয়োজন।’’