বন্ধ জেসপে তিন শিফটে চলছে চুরি

প্রায় দু’বছর আগে জেসপ কারখানায় একের পর এক চুরি এবং সেই সঙ্গে দুষ্কৃতীদের বেপরোয়া মনোভাবের জন্য রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে তোলপাড় হয়নি।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৮ ০৩:০৬
Share:

চুপিসারে: হাতসাফাই করতে গিয়ে ক্যামেরাবন্দি। নিজস্ব চিত্র

বন্ধ কারখানায় তিন শিফটে চলছে কাজ। তবে উৎপাদন নয়, অবাধে যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যাচ্ছে! এমনই পরিস্থিতি দমদমের জেসপ কারখানার। যার প্রেক্ষিতে ফের প্রশ্নের মুখে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা।

Advertisement

প্রায় দু’বছর আগে জেসপ কারখানায় একের পর এক চুরি এবং সেই সঙ্গে দুষ্কৃতীদের বেপরোয়া মনোভাবের জন্য রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে তোলপাড় হয়নি। ২০১৬ সালের অক্টোবরে রাজ্য সরকার অধিগৃহীত জেসপ কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পরে লুটপাট বন্ধে বিশেষ তদন্ত দল গড়ে সিআইডি। অগ্নিকাণ্ডে ‘অন্তর্ঘাতে’র অভিযোগ প্রমাণের পরে মালিক পবন রুইয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এর পরেই প্রয়োজনীয় সাফাই অভিযান, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা-সহ একাধিক বিষয়ে নজর দেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু পুলিশ প্রহরা, টহলদারি ভ্যান থাকা সত্ত্বেও ফের কারখানা চত্বর দখল নিয়েছে দুষ্কৃতীরা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সকাল, সন্ধ্যা এবং ভোরে কারখানার যন্ত্রাংশ চুরি করছে কয়েক জন দুষ্কৃতী। তাঁদের দাবি, বাড়ি থেকেই সে সব দৃশ্য দেখে ক্যামেরাবন্দিও করছেন কেউ কেউ। এমনই একটি ঘটনার ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, দিনের আলোয় কারখানার শেড খুলছে এক দুষ্কৃতী। পশ্চিম কমলাপুর জলাধারের কাছে রেললাইন সংলগ্ন কলোনির বাসিন্দা এক মহিলা জানান, প্রতিদিন ভোরে বাড়ির পাশ দিয়ে ওদের আনাগোনায় ঘুম ভেঙে যায়। ওই মহিলার কথায়, ‘‘কিছু দিন আগের কথা। শৌচাগারে যাব বলে ঘুম থেকে উঠেছি। দেখি, ১৫-১৬ জন ছেলে স্কুলব্যাগ, বস্তায় যন্ত্রাংশ নিয়ে পালাচ্ছে।’’

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দুষ্কৃতীদের কাছে ইট, পাথর, ধারালো অস্ত্র, এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র পর্যন্ত থাকে। বাধা দিলে আক্রমণের ভয় থাকায় কেউ আর সাহস পান না। এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বাড়ির ছাদ টপকে কারখানায় ঢুকছে। পাড়াটাকে রীতিমতো করিডর বানিয়ে ফেলেছে। পুলিশকে বলেও লাভ হয় না।’’ রাত পাহারায় কর্তব্যরত এক সিভিক ভলান্টিয়ার বলেন, ‘‘সন্দেহজনক কিছু দেখলে থানায় খবর দিই। ওদের কাছে যা অস্ত্র আছে তাতে তাড়া করলে বিপদ অনিবার্য।’’

অভিযোগ, দু’বছর আগে সমাজবিরোধী কাজের প্রশ্রয়েই আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছিল। তার কয়েক দিন আগে ২৮ নম্বর গেটের সামনে মিনিবাস পুড়িয়ে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। তার-ও আগে কমলাপুর টোটো স্ট্যান্ডের কাছে আক্রমণের মুখে পড়ে পুলিশের টহলদারি ভ্যান। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, এখনই সতর্ক না হলে ২০১৬ সালের পুনরাবৃত্তি হতে দেরি নেই।

এই পরিস্থিতি হল কেন?

জেসপ কোম্পানি লিমিটেড ওয়াকার্স অ্যান্ড এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শুধু যন্ত্রাংশ নয়, ১৮/১৯ ক্ষুদিরাম বসু অ্যাভিনিউ, ৪৬ পোস্ট অফিস রোড, চার নম্বর মল রোডের জমিও বেহাত হয়ে যাচ্ছে। দমদম থানা চুরির অভিযোগ নেয়নি। তাই ব্যারাকপুর কমিশনারেট ও জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি।’’ তৃণমূল পরিচালিত শ্রমিক সংগঠনের নেতার দাবি, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে জেসপ কারখানা ঘিরে কী চলছে, তা জানানো হয়েছে।

অথচ চুরির কথা জানেই না পুলিশ। এই প্রসঙ্গে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (জোন টু) আনন্দ রায় বলেন, ‘‘জেসপে আবার চুরি হচ্ছে! কিন্তু এমন খবর তো নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement