পুলিশের নাগাল এড়াতে লুকিয়ে থাকার কৌশল এমনিতে প্রায় নিখুঁতই ছিল। কিন্তু বাড়ির লোকেদের ঘন ঘন বিহার যাওয়াটাই কাল হল কাদের খানের।
সাড়ে চার বছর পালিয়ে থাকার পরে পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ কাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত কাদেরকে বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরপ্রদেশের গ্রেটার নয়ডা থেকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ। তদন্তকারীদের বক্তব্য, এই সফল অভিযানের শুরুটা রয়েছে বিহারের বারাউনি, বেগুসরাই, সীতামঢ়ী ও সমস্তিপুরে কাদেরের বাড়ির লোকেদের ঘন ঘন যাওয়ার মধ্যে। বিহারের কয়েকটি মোবাইল ও ল্যান্ডলাইন নম্বরে বার বার ফোনও করতেন তাঁরা। সেখান থেকেই প্রথম সূত্র মেলে। পার্ক স্ট্রিট মামলার দুই অভিযুক্তকে ধরার জন্য আর্থিক পুরস্কার পাচ্ছে তদন্তকারী দলটি।
লালবাজার সূত্রের খবর, কলকাতার পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব নিয়েই রাজীব কুমার জানতে চান, কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ মামলার অভিযুক্তরা এখনও অধরা। তখনই উঠে আসে কাদেরের নাম। সিপি-র নির্দেশে কাদেরকে খোঁজার দায়িত্ব বর্তায় ডিসি (সাউথ) মুরলীধর শর্মার উপর। ২০১২-র ফেব্রুয়ারি মাসে ওই ঘটনার সময়ে শর্মা ছিলেন গোয়েন্দা বিভাগের ডিসি (স্পেশ্যাল)। তখন তদন্তের কিছুটা দায়িত্ব ছিল তাঁর উপর।
এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বারাউনিতে অর্থবান ও প্রভাবশালী এক আত্মীয় থাকেন কাদেরের। তাঁর আশ্রয়েই সব চেয়ে বেশি সময় থেকেছে সে।’’
এর পর এক মোক্ষম চাল দেন লালবাজারের কর্তারা। বিহারের ওই সব এলাকায় বাড়ি, কলকাতা পুলিশের এমন কয়েক জন কনস্টেবলকে ‘বিশেষ ছুটি’ দিয়ে বলা হয়, এলাকায় গিয়ে খবর সংগ্রহ করো। তাঁরাই জানান, বিহারের ওই সব এলাকায় টানা দেড় বছর ছিল কাদের। তবে একটি ডেরায় টানা দু’মাসের বেশি থাকত না সে।
এই ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য সেপ্টেম্বরে বিহারে যান এক ইনস্পেক্টর। একদা দীর্ঘকাল গুন্ডা দমন শাখায় কাজ করার সুবাদে বিহারের ওই সব তল্লাটে তাঁর প্রচুর ‘সোর্স’ আছে। তাদের সঙ্গে কথা বলার পর ওই অফিসার ডিসিকে জানিয়ে দেন— দিল্লির আশেপাশে কোথাও এক সঙ্গেই রয়েছে কাদের এবং আলি। এর পর দিল্লির জামিয়ানগরে কাদেরের আত্মীয়দের বাড়িতে নজরদারি চালিয়ে গ্রেটার নয়ডার ওই ফ্ল্যাটের হদিস
পেয়ে যান গোয়েন্দারা।
তদন্তকারীদের দাবি, পলাতক অবস্থায় সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কলকাতায় বাড়ির লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেও কাদের অন্যের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করত। এমনকী, আত্মীয়দের ফোন থেকে অল্প কয়েক বার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সে কথাও বলেছে।
লালবাজারের এক শীর্ষকর্তা শনিবার জানিয়েছেন, কাদেরের নামে আদালতের হুলিয়া রয়েছে। তাই তাকে যারা আশ্রয় দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কাদের ও তার খুড়তুতো ভাই আলির ঠিকানা এখন লালবাজারের সেন্ট্রাল লকআপ। পুলিশের একাংশের দাবি, জেরায় এখনও পর্যন্ত কাদের ভেঙে পড়েনি। উল্টে দাবি করেছে, ঘটনার দিন সে সবার শেষে উঠেছিল গাড়িতে এবং তার আগেই সুজেটের সঙ্গে বাকিদের গণ্ডগোল শুরু হয়। তদন্তকারীরা জানান, কাদেরকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনা পুনর্গঠনের কাজ চলছে। পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ মামলায় অভিযোগকারিণী সুজেট জর্ডনের দাবি ছিল, কাদের তাঁকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে ভয়ও দেখায়। কাদেরকে সঙ্গে নিয়ে ওই অস্ত্র উদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে।