Junior

জুনিয়র খুনের দিন প্রিয়াঙ্কা কারও সঙ্গে ফোনে ২৪০ বার কথা বলেছিল!

এর পরে তো সব ওলটপালট। দীর্ঘ বছর ধরে ছেলের খুনি কে জানতে, শুধুই হাতড়ে বেরিয়েছেন বৃদ্ধ।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২১ ০২:৫২
Share:

প্রিয়াঙ্কা। ফাইল চিত্র।

প্রথম যে দিন তাঁদের বাড়িতে মেয়েটি এসেছিল, সে দিন ঘূর্ণিঝড় আয়লায় তছনছ হয়ে গিয়েছিল চারদিক। আর শেষ যে দিন মৃধা পরিবারে পা পড়েছিল প্রিয়াঙ্কা চৌধুরীর, আষাঢ়ের সেই দিন প্রকৃতি শান্ত থাকলেও দুর্যোগ নেমে এসেছিল বেলঘরিয়া দেশপ্রিয়নগর কলোনির সমরেশ মৃধার সংসারে। ২০১১ সালের ১২ জুলাই। ওই দিন তাঁর একমাত্র সন্তান জুনিয়র মৃধার গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ ময়না-তদন্তের পরে ঘরে এসেছিল শেষ বার। জুনিয়রের দেহের পিছু পিছু প্রিয়াঙ্কাও এসেছিল তাঁদের বাড়িতে।

Advertisement

এর পরে তো সব ওলটপালট। দীর্ঘ বছর ধরে ছেলের খুনি কে জানতে, শুধুই হাতড়ে বেরিয়েছেন বৃদ্ধ। অবশেষে সিবিআই তদন্তভার নেওয়ায় নড়েছে চাপা পড়ে যাওয়া সেই মামলা। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রিয়াঙ্কা চৌধুরীর বক্তব্যে প্রচুর অসঙ্গতি রয়েছে। জুনিয়রের বাবা-মায়ের দেওয়া বয়ানের সঙ্গে অনেক কিছুরই মিল পাচ্ছেন না তদন্তকারীরা। তাই মৃধা দম্পতির মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হবে প্রিয়াঙ্কাকে। আজ, শুক্রবার জুনিয়রের বাবা-মাকে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকেছেন তদন্তকারীরা।

ছেলের মৃত্যুর পরে দিশাহারা অবস্থা তখন তাঁদের। সেই প্রিয়াঙ্কার কথা মনে করতে গিয়ে সমরেশবাবু বলেন, “সে দিন উদ্‌ভ্রান্তের মতোই এসেছিল প্রিয়াঙ্কা। আমাদের মাথায় তখন কিছু ঢুকছে না। ও বলেছিল, ‘ভাবতেই পারছি না, জুনিয়রের সঙ্গে এমন ঘটবে। কী করে এই সর্বনাশ হল, আমি বুঝতে পারছি না। তোমাদের ছেলে চলে গিয়েছে। আমি তোমাদের সঙ্গে থাকব। যা যা জানি সব বলব পুলিশকে’।”

Advertisement

আরও পড়ুন: মাদক ছিলই না সঙ্গে, তবু এক বছর জেলবন্দি দুই যুবক

জুনিয়রের পরিজনদের মাধ্যমে তত ক্ষণে এলাকায় রটে গিয়েছিল, প্রিয়াঙ্কাই ফোন করে জুনিয়রকে ডেকেছিল। সেই প্রিয়াঙ্কাকেই জুনিয়রের বাড়িতে ঢুকতে দেখে এলাকার মহিলাদের ক্ষোভ গিয়ে পড়ে তার উপরে। সেই ক্ষোভ ওই তরুণীর উপরে আছড়ে পড়তে পারে বলে আঁচ করেছিলেন জুনিয়রের মা। সমরেশবাবু জানান, অপ্রীতিকর কিছু যাতে না ঘটে, সেই জন্য ওই অবস্থাতেও জুনিয়রের মা প্রিয়াঙ্কাকে লুকিয়ে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। তখনও সে বলেছিল, মৃধা পরিবারের পাশে থাকবে।

এখনও জানেন না সমরেশবাবু, কারা তাঁর ছেলেকে খুন করেছে। তবে, রাত নামলে যখন বড় একা লাগে, তখন এই রহস্য তাঁকে গভীর ভাবে ভাবায়। নানা অঙ্ক কষেন বৃদ্ধ। কোনও সমাধানে আসতে পারেন না। চেনা মুখগুলিকে মেলাতে পারেন না নিজের চিন্তার সঙ্গে। আজও ভেবে পান না, কথা দিয়েও প্রিয়াঙ্কা আর কেন সঙ্গে যোগাযোগ করেনি! জুনিয়র খুনে তার ভূমিকা কিছু ছিল কি না তা নিয়ে ভাবেন আজও। ‘যা যা জানি সব বলব’ বলে অঙ্গীকার করেও কেন সিআইডিকে কিছুই জানায়নি প্রিয়াঙ্কা, তা নিয়েও বিস্মিত বৃদ্ধ।

আরও পড়ুন: রাস্তার কাছেই জ্বলছেন মহিলা, টের পেলেন না কেউ

এ যেন ঠিক দিল্লির মডেল জেসিকা লাল খুনের ঘটনা। গোটা ঘটনার তদন্ত হয়ে গেল। ময়না-তদন্তের রিপোর্টে স্পষ্ট, গুলি করে খুন করা হয়েছিল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জুনিয়র মৃধাকে। অথচ কে খুন করল, তা জানা গেল না। আট বছর ধরে তদন্ত করে শেষ পর্যন্ত সিআইডি তার রিপোর্টে জানায়, তথ্য-প্রমাণ কিছুই মেলেনি। হতাশ সমরেশবাবুর প্রশ্ন, “জলজ্যান্ত একটা ছেলে খুন হয়ে গেল। অথচ কে খুন করল, কিছুই জানা গেল না?” জুনিয়র খুনের দিন প্রিয়াঙ্কা কারও সঙ্গে ফোনে ২৪০ বার কথা বলেছিল, সেটা সমরেশবাবু এখন জেনেছেন। তদন্তকারীরা জানতে চেয়েছিলেন, ওই ব্যক্তিকে তিনি চেনেন কি না। সমরেশবাবু জানান, তিনি চেনেন না। জুনিয়র খুনের আগে ও পরে কেন তার সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা অত বার কথা বলেছিল, তা জানতে চান বৃদ্ধ।

জুনিয়র খুনে প্রভাবশালী তত্ত্ব বার বার উঠে এসেছে। প্রিয়াঙ্কার শ্বশুর ময়দানের একটি ক্লাবের প্রাক্তন কর্মকর্তা। অন্য দিকে, একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার সম্পর্ক ছিল বলে জল্পনা। তাঁরাও প্রভাবশালী বলেই জানেন সমরেশবাবু। এ বার সিবিআইয়ের ডাক পেয়ে কিছুটা আশা দেখছেন তিনি। নতুন করে লড়াইয়ে তৈরি হচ্ছেন পুত্র শোকে কাতর এক পিতা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement