ফাইল চিত্র।
করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে ফেসবুক-টুইটারে সরব হলেন অভিভাবকদের একাংশ। সঙ্গে রয়েছেন কিছু বিশিষ্ট জনও। হ্যাশট্যাগ ওপেনস্কুলকলেজইউনিভার্সিটি লিখে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্কুল খোলার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।
অভিভাবকদের মতে, পুর ভোট থেকে মেলা— সংক্রমণের কারণে আটকে নেই কিছুই। অথচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ রেখেছে সরকার। এতে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে বলে আশঙ্কা তাঁদের। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁরা কেউ লিখছেন, ‘এ বার মনে হয় গর্জে ওঠা দরকার প্রত্যেক অভিভাবকের। আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, নষ্ট করে দিচ্ছে। মা/বাবা হিসেবে সন্তানের এত বড় ক্ষতিতেও যদি আওয়াজ না তুলি তা হলে তো মা/বাবা হওয়ার যোগ্য নই।’ এই প্রচারে শামিল হয়েছেন গায়ক শ্রীকান্ত আচার্যও।
অভিভাবকদের একাংশের প্রশ্ন, বইমেলা-গঙ্গাসাগর মেলা থেকে ২০০ জন অতিথিকে নিয়ে বিয়েবাড়ি, বিউটি পার্লার থেকে জিম— সবই যদি খোলা থাকতে পারে, তা হলে বিধি মেনে স্কুল কেন খোলা হবে না। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির অধিকাংশ পড়ুয়া প্রতিষেধক পেয়ে যাওয়ায় অন্তত তাদের জন্য স্কুল খোলার পক্ষে সওয়াল করছেন তাঁরা। আগামী ২৪ জানুয়ারি থেকে মহারাষ্ট্রে স্কুল খোলার প্রসঙ্গ তুলে এ রাজ্যে কবে তা খোলা হবে, টুইটারে সেই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ।
দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণির ছাত্রীর মা সুচরিতা মণ্ডল জানাচ্ছেন, দু’বছর স্কুলে যেতে পারেনি মেয়ে। তিনি জানান, সন্তানের পাশাপাশি তাঁরও মানসিক ক্লান্তি হচ্ছে। অনলাইন ক্লাসে ছেলেমেয়েকে বকুনি খেতে দেখে অনেক অভিভাবকের মধ্যে মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। সুচরিতা বলছেন, ‘‘আন্তরিক ভাবে চাইছি, কঠোর ভাবে কোভিড-বিধি মেনে স্কুল খুলুক।’’
শহরের আর একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রের মা অনন্যা মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, দু’বছরে এক বারও স্কুলে যায়নি তাঁর ছেলে। গত বছর শুধু রিপোর্ট কার্ড আনতে স্কুলে গিয়েছিল। সহপাঠীদের সঙ্গে আলাপও অনলাইনে ক্লাসে। অনন্যা দেখেছেন, অনলাইন ক্লাসে খুদে পড়ুয়ারা সকলেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জানায়, তারা স্কুলে যেতে চায়। তাই কোভিড-বিধি মেনে স্কুল খোলার পক্ষে তিনিও। অনন্যা বলেন, ‘‘ছোটরাও এখন মাস্ক পরা, স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার— এ সব নিয়ে সচেতন হয়ে উঠেছে।’’
সমাজমাধ্যমে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল শহরের বিভিন্ন স্কুলের অধ্যক্ষেরা। তবে তাঁদের অনেকের মতে, সব দিক বিবেচনা করে পর্যায়ক্রমে স্কুল খোলা যেতে পারে। যেমন, শ্রীশিক্ষায়তন স্কুলের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্য বলছেন, “এখনও যেহেতু সকলে প্রতিষেধক পায়নি, তাই স্কুল খুললে পর্যায়ক্রমে ক্লাস শুরু করতে হবে। যে স্কুলে যত পড়ুয়া, তার কত শতাংশ এক দিনে স্কুলে আসতে পারে তা আগে থেকে ঠিক করতে হবে।”
শিক্ষা দফতরের এক কর্তা অবশ্য জানিয়েছেন, পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের কথাও মাথায় রাখতে হবে। কত পড়ুয়া প্রতিষেধক পেয়েছে এবং রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি কেমন, তা পর্যালোচনা করে তবেই স্কুল খোলার পরিকল্পনা করতে হবে।