কালীঘাটে যজমান হারিয়ে ক্ষুব্ধ পান্ডারা

কালীঘাট মন্দির সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। একে বারে মন্দির চত্বরের আশপাশের পান্ডাদের ‘ডেরা’ বলে পরিচিত সব দোকান এখন আর নেই। মাস দু’য়েক আগে ওই সব দোকান ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৯ ০২:০৭
Share:

কালীঘাট চত্বরের এই জায়গাতেই ছিল পান্ডাদের সেই সব দোকান। নিজস্ব চিত্র

ভাঙাহাটে পরিচিত পান্ডার দোকান খুঁজতেই চরকিপাক খেলেন দর্শনার্থীরা। আর পরিচিত যজমানের নাগাল না পেয়ে লোকসানের মুখে পড়লেন বলে অভিযোগ করলেন পান্ডারা।

Advertisement

কালীঘাট মন্দির সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। একে বারে মন্দির চত্বরের আশপাশের পান্ডাদের ‘ডেরা’ বলে পরিচিত সব দোকান এখন আর নেই। মাস দু’য়েক আগে ওই সব দোকান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে কালী টেম্পল রোডের ওই দোকানদার পান্ডাদের স্টল করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুরনো পরিচিত ওই পান্ডাদের খোঁজে হয়রান হয়েছেন দর্শনার্থীরা। মূল মন্দিরে ছ’টি প্রবেশদ্বারের আশপাশের দোকানগুলির এখন কোনও অস্তিত্বই নেই।

সকাল সাড়ে ন’টা। উল্টোডাঙার বাসিন্দা সঞ্জয় চৌধুরী চার নম্বর গেটের কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। লাইন দিয়ে মা কালীর দর্শন করেছেন। কিন্তু পুজো দেওয়ার জন্য তাঁর পরিচিত পান্ডার কোনও খোঁজ পাননি। সঞ্জয়বাবু বলেন, দর্শন তো নিজেরাই করে নিয়েছি। কিন্তু পুজো দেব কী ভাবে? প্রতি বছর ১ বৈশাখ আর কালীপুজোর দিন চার নম্বর গেটের কাছে একটি দোকানেই আমি গত কুড়ি বছর ধরে আসছি। ওখানেই আমার পরিচিত কয়েক জন পান্ডা থাকতেন। ওঁরাই পুজো করে দিতেন। এখন অপরিচিতের হাতে পড়লে প্রায় দ্বিগুণ দক্ষিণা নেবে। কী করব বুঝতে পারছি না।’’

Advertisement

শুধু সঞ্জয়বাবু নন। এ বছর কালীপুজোয় সকাল থেকে বহু লোকই পরিচিত পান্ডা খুঁজতে গিয়ে হয়রান হয়েছেন। আর পান্ডারাও পরিচিত যজমান খুঁজে বেরিয়েছেন। কালী টেম্পল রোডের প্রায় ৮৫টি স্টল রয়েছে। ওই স্টলেই রয়েছেন সব পান্ডা। সকাল সাতটায় ১২ নম্বর স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন পান্ডা মঙ্গল ঘোষাল। তাঁর কথায়, ‘‘যজমান সব হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। সকাল থেকে বেশ কয়েক বার আমাদের পুরনো মন্দিরের ভিতরে যে দোকান ছিল, সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। পুলিশের কড়াকড়িতে সেখানে বেশি ক্ষণ দাঁড়ানো যায়নি। এক দিকে যজমানেরা আমাদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন। আর এক দিকে আমরা যজমানদের। কয়েক জনের সঙ্গে দেখা হয়েছে মাত্র। বাকিরা তো এখনও এসে পৌঁছননি। কী হবে আজ কে জানে।’’

আর এক পান্ডা বাবু দাস বলেন, ‘‘রাস্তার এক ধার দিয়ে কালী মন্দিরে যাওয়ার প্রবেশ পথের দিক থেকে স্টলগুলি শুরু করা হয়েছে। যজমানেরা আমাদের না পেয়ে সামনের দিকের স্টল থেকে পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। এ বারে খুবই লোকসানের মুখে পড়তে হবে।’’

বেলা সাড়ে ১১টার পরে অমাবস্যা শুরু হবে। তার পরে কালীঘাটে এ দিন হবে লক্ষ্মীপুজো। অনেক ভক্তই দু’টি পুজোই দিয়ে থাকেন। অমাবস্যার আগে কালীপুজো দেন। আর অমাবস্যা শুরু হওয়ার পরে লক্ষ্মীপুজোও দেন।’’

তবে ভিড় নিয়ন্ত্রণে পুলিশি কড়াকড়িই ছিল। সকাল থেকেই মন্দিরের সব প্রবেশদ্বারেরই দখল নেয় পুলিশ। পুলিশের কড়াকড়ির জন্যও পরিচিত যজমান হারিয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন পান্ডারা। এক পান্ডার কথায়, ‘‘যদি পুলিশ মন্দিরের ভিতরে আমাদের একটু দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করত তা হলে আমরা পরিচিত যজমানদের ধরতে পারতাম। পুজোর লাইন দিয়ে দর্শনের পর পর বেশি ক্ষণ মন্দিরে কাউকে থাকতে দেওয়া হয়নি। একেবারে সাঁড়াশি চাপে পড়ে গিয়েছি আমরা।’’

তবে পরিচিত যজমানদের মোবাইল নম্বর যে সব পান্ডাদের কাছে ছিল, তাঁরা কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখছেন বলে দাবি। তাঁদের এক জন তাপস গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘সকাল থেকে প্রায় ৮০ জন পরিচিত যজমানের পুজো করিয়েছি। আমার পরিচিত যজমানদের মোবাইল নম্বর সব সময় নিয়ে রাখতাম। তা এখন কাজে লেগেছে।’’

তাপসের মতো পান্ডার সংখ্যা হাতে গোনা। আর এক পান্ডার আক্ষেপ, ‘‘আমরাও যদি পরিচিত যজমানদের মোবাইল নম্বর নিয়ে রাখতাম তা হলে এমন অবস্থা হত না।’’ দিনের শেষে অধিকাংশ পান্ডার আক্ষেপ, এ বার কালীপুজোয় লোকসান হয়ে গেল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement