প্রতীকী চিত্র
‘মৃত্যুও সুন্দর হওয়া দরকার’। প্রচলিত ধারণা ভাঙার সভায় সোমবার বইমেলায় এমনই ডাক দিল ‘লিভার ফাউন্ডেশন’।
পরিবারের কেউ জটিল রোগে আক্রান্ত হলে তাঁর চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে অনেক সময়েই ঘোর দুশ্চিন্তায় পড়ে যান পরিজনেরা। খরচ টানতে না পেরে এক সময়ে অসহায় হয়ে প্রিয়জন আর কত দিন বাঁচবেন, সেই হিসেব করতে থাকেন তাঁরা। সেই কারণেই এ বিষয়ে এ দিন একটি আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি। যার বিষয় ছিল, ‘প্যালিয়েটিভ সেবা, পরিচিত পরিসরের বাইরের ভাবনা’। সঞ্চালক আশিস লাহিড়ী জানান, এমন অনেক অসুখ রয়েছে, যা পুরোপুরি সারে না। সে ক্ষেত্রে উপশম চিকিৎসা বা ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার’-এর পরিসরকে বাড়াতে হয়। তা নিয়েই ছিল এ দিনের আলোচনা।
সভায় মূল বক্তা ছিলেন এসএসকেএমের হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান অভিজিৎ চৌধুরী, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যানসার চিকিৎসক বিষাণ বসু এবং অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার। পরিসর বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অভিজিৎ জানান, চিকিৎসার খরচ টানতে না পারা পরিজনদের যে প্রশ্নের মুখে প্রায়ই চিকিৎসকেরা পড়েন, তা হল, ‘ডাক্তারবাবু আর কত দিন?’ তাঁর মতে, পরিস্থিতির চাপেই প্রিয়জনের প্রতি আবেগ ক্ষয়িষ্ণু হতে থাকে। অভিজিৎবাবুর কথায়, ‘‘আধুনিক চিকিৎসার প্রয়োজন নেই, তা বলছি না। কিন্তু ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ডায়াবিটিস, স্মৃতিভ্রংশতা বা পার্কিনসন্সের মতো রোগে পরিজনদের মাঝে রোগীকে রেখেই শেষ সময়ে আর একটু ভাল রাখার জন্য বলছি।’’
মঞ্চে অভিনয় সম্পর্কিত নানা উপমা দিয়ে দেবশঙ্কর জানান, অসুখ থাকলেও তাতে অস্তিত্ব যে ফুরিয়ে যায় না, উপশম চিকিৎসা আসলে সে কথাই বলে। শেষ বক্তা, ক্যানসার চিকিৎসক বিষাণ বসু বললেন, ‘‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার মানে মৃত্যুকালীন শুশ্রূষা নয়। কঠিন রোগে রোগীর পাশাপাশি তাঁর গোটা পরিবার ভোগে। আইসিইউ, ভেন্টিলেশনের বিপ বিপ শব্দে দেহকে যুদ্ধক্ষেত্র বানিয়ে লাভ নেই। প্যালিয়েটিভ কেয়ার রোগীকে পরিজনের মধ্যে রেখে চিকিৎসার কথা বলে।’’
অভিজিৎবাবু জানান, উপশম চিকিৎসা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে স্বেচ্ছাসেবী দল তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে ‘লিভার ফাউন্ডেশন’। অভিজিৎ বলেন, ‘‘যে রোগীরা পুরোপুরি সুস্থ হবেন না, তাঁদের জন্য প্যালিয়েটিভ কেয়ারের কথা বলছি। এ জন্য বিভিন্ন জেলায় এক ধরনের সোশ্যাল ফোর্স তৈরি করে রোগীর পরিজনদের সচেতন করার কথা ভাবছি।’’