লেহ্ থেকে এসে পৌঁছল দু’টি কফিন। নির্ধারিত সফরসূচি অনুযায়ী ফেরার কথা ছিল বুধবারেই। কিন্তু, এ ভাবে নয়।
বুধবার সকালে লেহ্-র জেলাশাসক সৌগত বিশ্বাস ফোনে বলেন, ‘‘মানসিক ভাবে ভীষণ শক্ত পদ্মনাভ বসু।’’ বুধবার সকালে স্ত্রী রাজশ্রী এবং একমাত্র সন্তান সৌম্যদীপের কফিন-বন্দী দেহ নিয়ে একাই রওনা দেন লেহ্ থেকে, বিমানে। লেহ্-র জেলা প্রশাসনের অফিসারেরা বিমানবন্দর পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে ছিলেন। দিল্লিতে পদ্মনাভবাবুর আত্মীয় এক সেনা অফিসার। লেহ্ থেকে বিমান পৌঁছলে দিল্লি বিমানবন্দরে তিনিই দেখা করেন পদ্মনাভবাবুর সঙ্গে। পরে এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ানে সন্ধ্যার বিমানে দু’টি কফিন নিয়ে কলকাতায় নামেন পদ্মনাভবাবু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর আত্মীয় তারক নাথ মিত্র।
মানিকতলার বাসিন্দা, সাহা ইন্সস্টিটিউট এর বিজ্ঞানী পদ্মনাভবাবু পরিবার নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন লেহ্-তে। রওনা হয়েছিলেন ৩০ মে। গত সোমবার লেহ্ থেকে নুব্রা উপত্যকায় যাচ্ছিলেন। সোমবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ নুব্রা উপত্যকায় আচমকা তুষার পাতে চাপা পড়ে যায় পদ্মনাভবাবুদের গাড়ি। সেই গাড়িতে তিনি, রাজশ্রীদেবী, সৌম্যদীপ ছাড়াও ছিলেন গাড়ি চালক আবদুল হক। সেই তথ্য জানতে পেরে শুরু হয় উদ্ধারকার্য। রাত ন’টা নাগাদ তাঁদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়। প্রথমে সেনা শিবির ও পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, বাঁচানো যায়নি রাজশ্রীদেবী ও সৌম্যদীপকে। অসুস্থ অবস্থায় লেহ্-এর সোনম নুরবু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল পদ্মনাভবাবু ও আবদুলকে। মঙ্গলবার সকালে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে যান আবদুল। পদ্মনাভবাবু ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
ওই হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারইনটেনডেন্ট ইয়ংচ্যাম দোলমা বুধবার ফোনে জানান, মঙ্গলবার রাতেই লেহ্-এর সেনা হাসপাতাল থেকে একজন মহিলা চিকিৎসক কর্নেল কল্যানী সোনম নুরবু হাসপাতালে আসেন। এই হাসপাতাল থেকে চাড়িয়ে নিয়ে রাতেই সেনা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয় পদ্মনাভবাবুকে। তাঁর আত্মীয় সেনা অফিসারই এই ব্যবস্থা করেন। রাতে সেই সেনা হাসপাতালেই স্ত্রী ও ছেলের মৃত্যু সংবাদ দেওয়া হয় পদ্মনাভবাবুকে। দোলমা বলেন, ‘‘তার আগে আমরা তাঁকে বলেই রেখেছিলাম, আপনার স্ত্রী ও ছেলের অবস্থা বেশ শঙ্কটজনক। না বাঁচার সম্ভাবনাই বেশি।’’ বুধবার সকালে সেনা হাসপাতাল থেকেই বিমানবন্দরে যান পদ্মনাভবাবু। নোরবু হাসপাতাল থেকে পৌঁছে যায় দু’টি কফিন। সন্ধা সোওয়া সাতটায় পদ্মনাভবাবু কলকাতায় নামেন।
লেহ্ থেকে নুব্রার পথে যে রাস্তায় ওই দুর্ঘটনা, ওই তুষারপাতের পরে সেই রাস্তা মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত বন্ধ ছিল। জেলাশাসক সৌগতবাবু জানান, বুধবার সকালে সেই রাস্তা খুলে দেওয়া হয়েছে সাধারণ পর্যটকদের জন্য।