স্রোতস্বিনী: সল্টলেক সেক্টর ফাইভে জমা জলে উঠেছে ঢেউ। সোমবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
রাতভর টানা বৃষ্টিতে কলকাতার মতোই ডুবল বিধাননগর, শিল্পতালুক পাঁচ নম্বর সেক্টর এবং নিউ টাউন। এর জেরে প্রশ্নের মুখে ওই সব জায়গার নিকাশি ব্যবস্থা। যদিও তিন জায়গার প্রশাসনিক সংস্থারই দাবি, ভোগান্তির কারণ নাগাড়ে বৃষ্টি এবং আশপাশের খালগুলি জলে টইটম্বুর হয়ে থাকা।
ব্যাখ্যা যা-ই হোক, জমা জলে এ দিন চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে অফিসযাত্রীদের। জল পেরিয়ে যেতে গিয়ে পাঁচ নম্বর সেক্টরে বিকল হয়ে যায় কয়েকটি গাড়ি। সুযোগ বুঝে স্থানীয় যুবকেরা জলে নেমে গাড়ি ঠেলে দেওয়ার বিনিময়ে ৪০০-৫০০ টাকা করে হাঁকতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। কয়েক জনকে দেখা যায়, বিকল গাড়ি দাঁড় করিয়ে মিস্ত্রির খোঁজ শুরু করেছেন।
নিকো পার্ক, উইপ্রো, কলেজ মোড়, টেকনোপলিস-সহ শিল্পতালুকের বিস্তীর্ণ এলাকা এ দিন জলে ডুবে ছিল সকাল থেকে। কোথাও হাঁটু জল তো কোথাও জল উঠেছে কোমর সমান। জমা জলে আটকে পড়ার আশঙ্কায় নবদিগন্ত উড়ালপুলের উপরে এক দিক দিয়েই উভয় দিকের গাড়ি চলতে দেখা যায়। এনকেডিএ এবং নবদিগন্তের চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন জানান, ইস্টার্ন ড্রেনেজ খালে জল না নামায় শিল্পতালুকে সমস্যা তৈরি হয়েছে।
অন্য দিকে নিউ টাউনে জল নামানোর জন্য ৩৬টি পাম্প বসানো হয়েছে। কিন্তু নিম্ন বাগজোলার জল না নামায় নিউ টাউন জলমগ্ন হয়েছে বলেই দাবি দেবাশিসবাবুর। তিনি জানান, ভরা কটালের কারণে নিউ টাউন অ্যাকশন এরিয়া ১বি-তে বাগজোলা খালের জল ঢুকে পড়ে। বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ তৈরি করেও কিছু করা যায়নি। জলমগ্ন হয়ে পড়ে নিউ টাউনের একাধিক ব্লকও। সেখানকার আবাসিকদের একটি সংগঠনের সম্পাদক সমীর গুপ্ত বলেন, ‘‘বহু ব্লকে এ দিন জনজীবন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। লাগাতার বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে নিউ টাউনের মতো পরিকল্পিত উপনগরীর নিকাশি ব্যবস্থা নতুন করে সাজানোর প্রয়োজন রয়েছে।’’
বিধাননগর পুর এলাকার মধ্যে সল্টলেকের পূর্বাচল, ইসি, লাবণি, করুণাময়ী, জিডি, বিডি-সহ বিভিন্ন ব্লকে এ দিন জল দাঁড়িয়েছিল। জল জমে দত্তাবাদ, নয়াপট্টির মতো সংযুক্ত এলাকা এবং বাগুইআটি, কেষ্টপুর, জ্যাংড়া, হাতিয়াড়ার পাড়ায় পাড়ায়। রাজারহাট-গোপালপুর এলাকার পূর্ব নারায়ণতলায় একটি জরাজীর্ণ বাড়ি এ দিন সকালে ভেঙে পড়ে। পুরকর্মীরা গিয়ে ভিতরে আটকে থাকা ১৫ জনকে উদ্ধার করেন। জলের কারণে দীর্ঘ যানজট হয় ভিআইপি রোড এবং বিশ্ব বাংলা সরণিতে। বিধাননগরের পুর প্রশাসক কৃষ্ণা চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘বাগজোলা খালে কটালের কারণে জল নামেনি। আর অনেক জায়গায় প্লাস্টিকের জন্য নর্দমা বুজে গিয়েছে মানুষের দোষে।’’ বিধাননগরে জল নামাতে ১২৩টি পাম্প বসানো হয়েছে।
খাল দিয়ে জল না সরার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সেচ দফতরের দাবি, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণেই বাগজোলার জলের তল উঁচু হয়ে গিয়েছে। জল নামাতে কুলটি গাঙের কাছে পাম্পও বসানো হয়েছে বলে জানান দফতরের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার নয়নজ্যোতি ঘোষ।
রাজারহাটের মহম্মদপুর মাঠপাড়া এলাকার বাসিন্দারা জানান, তাঁদের এলাকায় নির্মাণ সংস্থা খাল ভরাট করে দিয়েছে। তার জেরে তাঁদের গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।