বচসার পরে ক্যাবের ধাক্কা দিয়ে খুন, ধৃত

২১ জুলাই রাতে খুন হন সঞ্জয়। রক্তাক্ত অবস্থায় সঞ্জয়কে উদ্ধার করে দক্ষিণ বন্দর থানা এলাকার একবালপুরের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৯ ০২:৪৯
Share:

সঞ্জয় হালদার

বচসাকে কেন্দ্র করে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হল এক যুবককে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক অ্যাপ-ক্যাব চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, অভিযুক্ত ক্যাবচালক নিজের ক্যাব দিয়েই ধাক্কা মেরে খুন করে ওই যুবককে।

Advertisement

তদন্তকারীরা জানান, ধৃতের নাম দিলীপ রাম। শুক্রবার রাতে অ্যাপ-ক্যাবের চালক দিলীপকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সঞ্জয় হালদার (৩৬) নামে পেশায় ‘ক্লিয়ারিং এজেন্ট’ এক যুবককে খুনের অভিযোগ উঠেছে। সঞ্জয় বন্দর এলাকার কাঞ্চন কলোনির বাসিন্দা।

পুলিশের দাবি, অভিযুক্ত জেরায় খুনের কথা কবুল করেছে। ২১ জুলাই রাতে খুন হন সঞ্জয়। রক্তাক্ত অবস্থায় সঞ্জয়কে উদ্ধার করে দক্ষিণ বন্দর থানা এলাকার একবালপুরের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ মনে করেছিল, ট্রাকের ধাক্কায় মারা যান সঞ্জয়। অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছিল লালবাজারের ‘ফেটাল স্কোয়াড ট্র্যাফিক পুলিশ’ বিভাগ। কিন্তু পরে পুলিশ সব কথা জানতে পারে। দিলীপকে আটক করে ফেটাল স্কোয়াডের হাতে তুলে দেয় দক্ষিণ বন্দর থানার পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত দিলীপ জানিয়েছে, ঘটনার রাতে একটি ধাবায় সঞ্জয়ের সঙ্গে তার বচসা হয়েছিল। তখনই সে জানতে পারে সঞ্জয় বন্দর এলাকারই বাসিন্দা। সেই মতো দিলীপ রিমাউন্ট রোডে সঞ্জয়ের উপরে হামলা চালানোর জন্য ওত পেতে ছিল। সঞ্জয় মোটরবাইক নিয়ে সেখানে আসতেই দিলীপ গাড়ির গতি বাড়িয়ে সজোরে সঞ্জয়কে ধাক্কা মেরে পালায়। এর পরে সঞ্জয় মারা গেছেন কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে ঘটনাস্থলে ফিরে গিয়ে তা দেখেও আসে দিলীপ।

কয়েক দিন পরে সঞ্জয়ের শ্যালক সুরজ যাদব দক্ষিণ বন্দর থানায় অভিযোগ দায়ের করে জানান, তাঁর জামাইবাবুকে এক অ্যাপ-ক্যাবের চালক গাড়ি দিয়ে ধাক্কা মেরে খুন করেছে। পুলিশের দাবি, ২৩ জুলাই এক মহিলার সঙ্গে কথা বলে সুরজেরা জানতে পারেন যে, ঘটনার রাতে সঞ্জয় ও দিলীপ একটি ধাবায় বসে কথা বলেছিলেন। কোনও একটি বিষয় নিয়ে দু’জনের মধ্যে বচসা বাধে। সেই সময়ে ধাবায় আরও লোকজনও ছিলেন। তাঁরা গোলমাল থামাতে লোকজন সেই সময়ে সঞ্জয় ও দিলীপকে আলাদা করে দেন। তবে দিলীপ ধাবা থেকে বেরোনোর আগে সঞ্জয়কে ‘দেখে নেব’ বলে হুমকি দিয়ে যায়। ওই ঘটনার মিনিট কুড়ি পরে ধাবা থেকে সঞ্জয়ও বেরিয়ে যান।

তদন্তকারীদের বক্তব্য, সুরজকে ওই মহিলা জানান যে ২২ জুলাই তিনি জানতে পারেন সঞ্জয় গাড়ির ধাক্কায় মারা গিয়েছেন। পুলিশ জেনেছে, ওই মহিলা সঞ্জয়ের মৃত্যুর খবর জানতে পারার খানিক ক্ষণের মধ্যে ধাবায় পৌঁছে যান। তার খানিক ক্ষণ পরে সেখানে হাজির হয় দিলীপও। ওই ধাবার পিছনের একটি বাড়িতে দিলীপ ভাড়া থাকত।

সুরজ জানান, দিলীপের আচরণে সন্দেহ হওয়ায় ওই মহিলা দিলীপকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করেন, কেন সে সঞ্জয়কে গাড়ি চাপা দিয়ে খুন করল? দিলীপ সব কথা স্বীকারও করে।

সুরজ শনিবার বলেন, ‘‘ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে জামাইবাবুকে। পুলিশকে বিস্তারিত বলেছি।’’ পুলিশের দাবি, মহিলাকে খুনের কথা বলে দিলীপ আঁচ করতে পারে যে ঘটনা জানাজানি হতে পারে। ফলে সে পালানোর ছক কষে।

শনিবার দিলীপকে আলিপুর আদালতে হাজির করে পুলিশ। সরকারি কৌঁসুলি সৌরীন ঘোষাল আদালতে জানান, অভিযুক্ত দোষ স্বীকার করেছে। ঘটনার পুনর্নির্মাণ, দিলীপের গাড়ি উদ্ধার এবং ওই ঘটনায় আর কেউ জড়িত কি না তা জানতে অভিযুক্তকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জেরা করা জরুরি। বিচারক দিলীপকে ৮ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement