প্রতীকি ছবি।
সবে সন্ধ্যা নেমেছে। কাজ সেরে বাড়ির চারতলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তিলজলার শিবতলা লেনের ব্যাগের দোকানের দুই কর্মচারী। হঠাৎই গুলির আওয়াজ। বিশ্রামরত দুই কর্মীকে পায়ে গুলি করে চলে গেল চার যুবক।
বৃহস্পতিবার ভর সন্ধ্যায় কলকাতা শহরের বুকে ফের গুলি চলা প্রমাণ করে দিল, অস্ত্রের বিপুল ভাণ্ডার ছড়িয়ে রয়েছে এ শহরের আনাচে কানাচে। শিবতলা লেনের মতো ঘিঞ্জি এলাকায় ওই দুই কর্মচারীর পায়ে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সামনে এসেছে অপর্যাপ্ত নিরাপত্তার বিষয়টিও। কী ঘটেছিল এ দিন?
পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুই কর্মী শেখ আরশাদ এবং আমিন আলি গাজি ওরফে ছোটু ব্যাগের কারখানারই চার তলার একটি ঘরে বসে গল্প করছিলেন। হঠাৎই পাশের লাগোয়া একটি বাড়ির ছাদে উপস্থিত হয় অন্য চার যুবক। তাদের মধ্যে দু’জন নিজের পকেট থেকে বন্দুক বের করে উঁচিয়ে ধরে আরশাদ এবং ছোটুর দিকে। নিমেষের মধ্যে গুলির আওয়াজ। দেখা যায়, লুটিয়ে পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে দু’জন, রক্তে ভেসে যাচ্ছে। দু’জনেরই পায়ে গুলির আঘাত লেগেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় দু’জনকেই ভর্তি করা হয় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পলাতক ওই চার যুবক।
আহতদের কথায় জানা গিয়েছে ওই চার যুবকের নাম, প্রদীপ, আসফাক, বোচা এবং শেখ মুস্তাকিম। সকলেই কুষ্টিয়া রোডের বাসিন্দা। তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
আহতদের কেউ এই চার যুবকের সঙ্গে পূর্ব পরিচয়ের তেমন ইঙ্গিত না দিলেও আরশাদের মামা মহম্মদ রিয়াজ জানান, প্রদীপ নামের ওই যুবক প্রায়ই ওই দুই যুবককে গাঁজা বিক্রি-সহ নানা অসামাজিক কাজে যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দিত। পরিবারের অভিযোগ, ওদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতেই এই আক্রমণ। পুলিশ জানাচ্ছে, এই ঘটনায় যে চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের নাম পুলিশের খাতায় আগে থেকেই উপস্থিত। এলাকায় তোলাবাজি-সহ নানা জোরজুলুমের অভিযোগে এই চারজন আগেও গ্রেফতার হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। পুলিশ সূত্রের খবর, তপসিয়া-তিলজলার ওই এলাকায় একটি দুষ্কৃতীদল কাজ করে। জনি নামের এক ব্যক্তি ওই দলের মাথা। দলে নাম লেখালে ভাল উপার্জন হবে এই টোপ আগেই দিয়েছিল জনি এবং তার ভাই রকি। রাজি না হওয়ায় জুটেছিল হুমকি।
তবে ব়ৃহস্পতিবারের এই গুলি চলার ঘটনায় আতঙ্কিত এলাকার মানুষ। গত কয়েক মাসে প্রকাশ্যে গুলির ঘটনায় লালবাজারের কর্তারা জানিয়েছিলেন, শহরে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র মজুত রয়েছে। বিভিন্ন ভাবে তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধারও হয়েছে। তবু সে যে হিমশৈলের চূড়ামাত্র তার প্রমাণ শিবতলা লেনের এই প্রকাশ্যে গুলি চালানোর ঘটনা। সুরজিৎ করপুরকায়স্থ কমিশনার থাকার সময়েই শহরে বারেবারে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটতে থাকে। তখনই জোর দেওয়া হয় অস্ত্র উদ্ধারে। পরে রাজীব কুমারও অস্ত্র উদ্ধারে তত্পর হন। লালবাজার সূত্রের খবর, গত মাসেই গুলি চালানোর ঘটনায় ৮ থেকে ১০ জন দুষ্কৃতীকে অস্ত্র সমেত গ্রেফতার করা হয়েছে।