প্রতীকী ছবি।
এ বছর সময়ের আগেই রাজ্যের নির্দেশে সরকারি স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি পড়ে গিয়েছে টানা ৪৫ দিনের জন্য। সেই ছুটিতে অনলাইন ক্লাসের কোনও নির্দেশ দেয়নি শিক্ষা দফতর। কিন্তু অভিভাবকদের দাবি মেনে ও পড়ুয়াদের কথা ভেবে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে শহরের বেশ কিছু সরকারি স্কুল। ওই সব স্কুলের কর্তৃপক্ষেরা জানাচ্ছেন, নির্ধারিত যে দিন (২৪ মে) স্কুলে ছুটি পড়ার কথা ছিল, তত দিন পর্যন্ত অনলাইন ক্লাস নেওয়া হবে। তবে সব শ্রেণির জন্য না হলেও নবম থেকে দ্বাদশের পড়ুয়াদের কথা ভেবেই ক্লাস চলছে।
অভিভাবকদের একাংশের মতে, আগেভাগেই স্কুলে ছুটি শুরু হয়ে যাওয়ায় সব থেকে অসুবিধার মুখে পড়েছে নবম, দশম এবং একাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা। শিয়ালদহের টাকি বয়েজ়ের প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা বসাক বলেন, ‘‘আমরা নবম, দশম ও একাদশ থেকে দ্বাদশে যারা উঠবে তাদের জন্য অনলাইন ক্লাস শুরু করেছি। আর যারা সম্প্রতি একাদশের পরীক্ষা দিয়েছে, তাদেরও বলেছি অনলাইন ক্লাস শুরু করতে। কারণ আগামী বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য তাদের হাতে বেশি সময় নেই। একই অবস্থা দশম শ্রেণির পড়ুয়াদেরও। নবম শ্রেণির পাঠ্যক্রম খুব বড়, তাই ওরাও অনলাইন ক্লাস করছে।’’ ওই স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন, অনলাইন ক্লাস কখনওই অফলাইন ক্লাসের বিকল্প হতে পারে না। তবু এই সিদ্ধান্তে পড়ুয়ারা খুবই উপকৃত হচ্ছে।
উত্তর কলকাতার সরস্বতী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জয়তী মজুমদার মিত্র জানান, শুধু অনলাইন ক্লাসই নয়। করোনা-কালে স্কুলপড়ুয়াদের জন্য তাঁরা যে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলি চালু করেছিলেন, সেগুলি আবার সক্রিয় করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আর্থিক ভাবে দুর্বল অনেক পড়ুয়া আছে আমাদের স্কুলে। তাদের বাড়িতে হয়তো একটিই স্মার্টফোন। সেই ফোন নিয়ে হয়তো সকালে কাজে যান পড়ুয়ার বাবা। তা হলে সকালে কী ভাবে অনলাইন ক্লাস করবে পড়ুয়াটি? তাই সারা দিনে যা যা পড়ানো হল, সেগুলি ওই পড়ুয়াকে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’
বেলগাছিয়া মনোহর অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষক উৎপল চক্রবর্তী জানান, তাঁদের স্কুলেও অনেক পড়ুয়ার স্মার্টফোন নেই। তাই অনলাইন ক্লাস করলে পড়ুয়াদের অনেকেই বঞ্চিত হবে। তাই হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমেই পড়ানোর কাজ করছেন তাঁরাও। উৎপলবাবু বলেন, ‘‘ক্লাসের নোটসের ছবি তুলে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিছু অংশ আবার ভয়েস রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়ে, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যার স্মার্টফোন নেই, তাকে তার প্রতিবেশী বন্ধুরা বাড়ি গিয়ে নোটসগুলি দেখিয়ে দিয়ে আসে।’’
সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া নাগ জানিয়েছেন, ২৪ মে পর্যন্ত অনলাইন ক্লাস চলবে তাঁদের। তাঁর কথায়, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফাঁকে ফাঁকে যখনই স্কুল খোলা ছিল, তখনই বিভিন্ন ক্লাসের প্রথম সামগ্রিক মূল্যায়ন আমরা শেষ করেছি। তাই প্রথম সামগ্রিক মূল্যায়ন নিয়ে আমাদের পড়ুয়ারা চাপে নেই। পরবর্তী পাঠ্যক্রম অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে এগিয়ে রাখা হবে। তবে অনলাইনে যা যা পড়ানো হবে, পরে স্কুল খুললে প্রয়োজনে অফলাইনে আবার বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’’