জোকা-তারাতলা মেট্রো। —ফাইল চিত্র।
উদ্বোধনের পরে বছর ঘুরতে চললেও বেহালার গণ্ডি ছাড়িয়ে এক পা-ও এগোল না জোকা-তারাতলা মেট্রো। বেহালা থেকে শুরু হয়ে এই মেট্রোর পরিষেবা এখনও ওই এলাকাতেই সীমাবদ্ধ। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সঙ্গেই ঘটা করে সাড়ে ছ’কিলোমিটার দূরত্বে জোকা থেকে তারাতলার মধ্যে একটি ট্রেন দিয়ে মেট্রো পরিষেবার সূচনা হয়েছিল। যাত্রা শুরুর দিনে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব নিজে সফর করেছিলেন ওই মেট্রোয়।
মেট্রো-মানচিত্রে বেহালার সংযুক্তির খবর শুনে অনেকেই আশ্বস্ত হয়েছিলেন এই ভেবে যে, এ বার হয়তো ডায়মন্ড হারবার রোডের যানজট এবং অটোর যথেচ্ছ ভাড়ার অত্যাচার থেকে তাঁরা মুক্তি পাবেন। কিন্তু, বছর ঘুরতে চললেও ওই মেট্রো যাত্রীদের প্রত্যাশার ধারেকাছে পৌঁছতে পারেনি। দৈনিক যাত্রী সংখ্যাও প্রায়ই এক হাজারের নীচে গিয়ে ঠেকছে বলে অভিযোগ।
এই শোচনীয় দশার অন্যতম কারণ হিসাবে যাত্রীরা জানাচ্ছেন, সাতসকালে মেট্রোর পরিষেবা তো পাওয়া যায়ই না। তেমনই, সন্ধ্যা হওয়ার আগেই স্টেশনের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়। কী ভাবে পরিষেবা দিলে যাত্রীদের সুবিধা হবে, তা জানতে মেট্রো কর্তৃপক্ষ ওই পথে যাত্রীদের মতামত জানার চেষ্টা করেছেন বলে খবর। তবে, তাতে পরিষেবার কোনও বদল হয়নি। শখেরবাজার এলাকার বাসিন্দা নিবেদিতা সিংহ বলেন, ‘‘আমি পাঁচ নম্বর সেক্টরে একটি সংস্থায় কাজ করি। ভেবেছিলাম, মেট্রোটা একটু এগোলে যাতায়াতের সুবিধা হবে। কিন্তু কিছুই এগোল না। সেই সরকারি এসি বাসই যাতায়াতের একমাত্র ভরসা।’’
জানা যাচ্ছে, সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে এই মেট্রোয় জোকার দিক থেকে পরিষেবা শুরু হয়ে বিকেল ৫টায় ওই স্টেশনে পরিষেবা শেষ হয়। শুধু তা-ই নয়, সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি ছুটির দিনে বন্ধ থাকে পরিষেবা। উত্তর-দক্ষিণ এবং ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় পরিষেবা ও যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য সংক্রান্ত নানা বিষয় কর্তৃপক্ষ জানালেও অনুল্লেখিত থাকে জোকা-তারাতলা মেট্রো। সব দেখে যাত্রীদের কটাক্ষ, মেট্রো কর্তৃপক্ষ যেন জোকা মেট্রোকে লুকিয়ে রাখতেই ব্যস্ত। চলতি বছরে পুজোর আগে মাঝেরহাট পর্যন্ত আরও দু’কিলোমিটার পথে মেট্রো সম্প্রসারণের কথা জানালেও কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেই কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেননি। এখন তাঁদের লক্ষ্য, বছরের শেষে মাঝেরহাট স্টেশনের কাজ সম্পূর্ণ করে কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটির কাছে পরিদর্শন সেরে অনুমতি দেওয়ার আর্জি জানানো।
ফেব্রুয়ারি নাগাদ মাঝেরহাট পর্যন্ত কাজ সম্পূর্ণ করে পরিষেবা সম্প্রসারিত হতে পারে বলে জানিয়েছে মেট্রোর একটি সূত্র। মাঝেরহাট পর্যন্ত পরিষেবা সম্প্রসারিত হলে যাত্রীরা সেখানে নেমে শিয়ালদহ-বজবজ রেলপথের পাশাপাশি চক্ররেলে বি বা দী বাগ, কলকাতা স্টেশন ও বালিগঞ্জে পৌঁছতে পারবেন। তবে কলকাতা মেট্রোয় এই মুহূর্তে কর্মীর সংখ্যা যত, তাতে সম্প্রসারিত মেট্রোপথে কতটা কার্যকর পরিষেবা দেওয়া যাবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।