Burra Bazar Fire Incident

চার দিকে শুধু কালো ধোঁয়া! হোটেলে জানলার কাচ ভেঙে পাঁচতলার কার্নিসে ভাইপো ও স্বামীকে নিয়ে আতঙ্কের দু’ঘণ্টা

নেহা ওড়িশার বাসিন্দা। সম্প্রতি তাঁর দুই সন্তান এবং ভাইয়ের দুই সন্তানের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তাই সকলকে নিয়ে কলকাতায় বেড়াতে এসেছিলেন নেহা এবং তাঁর স্বামী আকাশ আগরওয়াল।

Advertisement

সারমিন বেগম

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:২২
Share:
বড়বাজারের হোটেলে পাঁচতলার কার্নিস থেকে নেহাদের উদ্ধার করা হচ্ছে।

বড়বাজারের হোটেলে পাঁচতলার কার্নিস থেকে নেহাদের উদ্ধার করা হচ্ছে। ছবি: পিটিআই।

কলকাতা ছেড়ে মঙ্গলবার রাতেই সপরিবার ওড়িশা ফিরে যাওয়ার কথা ছিল নেহা আগরওয়ালের। বড়বাজারের মেছুয়ার হোটেল থেকে চেকআউটের সময় হয়ে এসেছিল তাঁদের। তখনই ফোনটা আসে নেহার কাছে, আগুন লেগেছে! পাঁচতলার ঘরের দরজা খুলে স্বামী এবং ১৫ বছরের ভাইপোর সঙ্গে বার হতে গিয়েছিলেন নেহা। করিডর তত ক্ষণে ভরে গিয়েছে কালো ধোঁয়ায়। অগত্যা ঘরে ঢুকে শৌচালয়ের জানলার কাচ ভেঙে তিন জন নেমে দাঁড়ান পাঁচতলার কার্নিসে। নেহা জানিয়েছেন, প্রায় দু’ঘণ্টা কার্নিসে দাঁড়িয়েই কেটেছিল তাঁদের। তার পরে দমকল এসে উদ্ধার করে তিন জনকে।

Advertisement

নেহা ওড়িশার বাসিন্দা। সম্প্রতি তাঁর দুই সন্তান এবং ভাইয়ের দুই সন্তানের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তাই সকলকে নিয়ে কলকাতা বেড়াতে এসেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন স্বামী আকাশ আগরওয়াল। ২৬ এপ্রিল কলকাতায় এসে উঠেছিলেন বড়বাজারের মেছুয়ার ফলপট্টির ওই হোটেলে। পাঁচতলায় দু’টি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন ছ’জন। ইডেনে আইপিএলের ম্যাচও দেখতে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার রাতেই ওড়িশায় ফিরে যাওয়ার কথা ছিল নেহাদের। চেকআউট করার সময় এলে হোটেলের একটি ঘর ছেড়ে নীচে নেমে যান নেহার দুই পুত্র এবং এক ভাইপো। তখনও পাঁচতলার ৪০৫ নম্বর ঘরে ছিলেন নেহা, স্বামী আকাশ এবং ভাইপো লোকেশ আগরওয়াল। ঘর ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সে সময়ই নেহাকে ফোন করেন তাঁর দুই সন্তান, যাঁরা তত ক্ষণে পাঁচ তলা থেকে নীচে নেমে গিয়েছিলেন।

নেহা আগরওয়াল।

নেহা আগরওয়াল। —নিজস্ব চিত্র।

ফোন পেয়েই দরজা খুলে বার হওয়ার চেষ্টা করেন নেহারা। কিন্তু পারেননি। করিডর তত ক্ষণে কালো ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। আবার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন তিন জন। কিন্তু বাইরে বার হবেন কী করে? সে সময় নেহাদের চোখে পড়ে, শৌচালয়ের ছোট জানলাটা। ওই জানলায় কোনও গ্রিল ছিল না। হাত-পা দিয়ে ধাক্কা মেরে সেই জানলার কাচ ভেঙে ফেলেন তিন জন। তার পরে তাঁরা গিয়ে দাঁড়ান পাঁচতলার কার্নিসে। গুনতে শুরু করেন আতঙ্কের প্রহর! তাঁর কথায়, ‘‘মাঝের ওই সময়ে দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা আমাদের তিন জনের। তবে এটা ভেবেই কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলাম যে, পরিবারের বাকি তিন সদস্য নিরাপদে রয়েছে।’’ নেহার স্বামী আকাশ বলেন, ‘‘৩০ সেকেন্ডের জন্য মৃত্যু দেখেছিলাম।’’ নেহা জানিয়েছেন, গ্রিল ধরে তিন জন কার্নিসে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তত ক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে দমকলবাহিনী। কিন্তু হোটেলের কার্নিসে দাঁড়িয়ে থাকা তিন জনকে দেখতে পাননি কর্মীরা। শেষে মোবাইলের টর্চ জ্বালান নেহা। তাতেই নজর পড়ে দমকলবাহিনীর। প্রায় দু’ঘণ্টা পরে তাঁদের পাঁচতলার কার্নিস থেকে উদ্ধার করা হয়।

Advertisement

বড়বাজারের যে হোটেলে আগুন লেগেছিল, তার পাশেই রয়েছে একটি দোকান। উদ্ধার হওয়ার পর থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ওই দোকানেই ঠায় বসে রয়েছেন নেহারা। পরিবারের ছ’জনেরই প্রাণরক্ষা হয়েছে বলে কিছুটা স্বস্তিতে তাঁরা। তবে তাঁদের জিনিসপত্র এখনও পড়ে রয়েছে হোটেলের ৪০৫ নম্বর ঘরে। সেই নিয়েই চিন্তা নেহাদের। কখন ফেরত পাবেন জিনিসপত্র, কখন ফিরতে পারবেন ওড়িশায়, কিছুই জানেন না নেহা।

হোটেলের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসে গিয়েছে আগেই। ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। সেই নিয়ে সিট গঠন করা হয়েছে। তদন্তপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বুধবার ঘটনাস্থলে ফরেন্সিক দলের আসার কথা রয়েছে। তারা পুরো ঘটনাটি তদন্ত করে দেখবে। কোনও গাফিলতি ছিল কি না, কেন আবাসিকদের বার করা গেল না, সব কিছু তদন্ত করে দেখা হবে বলেও জানিয়েছেন কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মৃতদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা করে এবং আহতদের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি জানান, বড়বাজারে মেছুয়ার ফলপট্টির ওই হোটেলে দাহ্য পদার্থ মজুত ছিল, যার জেরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল আগুন।

সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ এবং বিধান সরণির সংযোগকারী রাস্তায় রয়েছে হোটেলটি। যেখানে হোটেল, সেই জায়গাটি বেশ ঘিঞ্জি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ মধ্য কলকাতার মেছুয়ার ফলপট্টির ওই হোটেলে আগুন লাগে। দমকলের ১০টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছোয়। প্রায় ৮ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বুধবারেও চলেছে উদ্ধারকাজ। পুলিশ জানিয়েছে, ছ’তলার ওই হোটেলের দোতলায় প্রথম আগুন লেগেছিল। তার পরে সেই আগুন অন্য তলায়ও ছড়িয়ে পড়ে। হোটেলের ৪২টি ঘরে তখন ৮৮ জন ছিলেন। স্থানীয়দের চেষ্টায় তাঁদের উদ্ধার করা হয়েছে। ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement