জেনিফার দাস
প্রবাস থেকে এ শহরে এসে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন এক প্রৌঢ়া। সন্ধান মিলল পাঁচ মাস পরে! এ শহরেরই একটি হোমে রয়েছেন তিনি। ফের বাড়ি ফিরতে হন্যে হয়ে ঘুরছেন এখন।
গত অগস্টের শেষে কলকাতা বিমানবন্দরে নেমেছিলেন জেনিফার দাস নামে ওই প্রৌঢ়া। ভারতের নাগরিক তিনি। থাকেন ওমানে। তাঁর দাবি, গত ২৯ অগস্ট মাসকট থেকে মুম্বইয়ে এসেছিলেন। মুম্বই থেকে বিমানে কলকাতা। পথেই পাসপোর্ট, টাকাপয়সা হারিয়ে গিয়েছে। তাই পাঁচ দিন বিমানবন্দরে কাটিয়ে শহরে বেরিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তার পরে কোথায় গিয়েছেন, কেউ বলতে পারেনি। শুধু জানা গিয়েছিল, তিনি শহরের একাধিক গির্জা ও মিশনারি হোমে আশ্রয়ের খোঁজে গিয়েছিলেন। কিন্তু কোথাও থিতু হতে পারেননি।
সম্প্রতি জানা গিয়েছে, জেনিফার ইলিয়ট রোডের একটি হোমে রয়েছেন। ওই হোম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গত সেপ্টেম্বরেই কালীঘাট থানা এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাঁকে সেখানে দিয়ে এসেছিল। বৃহস্পতিবার ওই হোমে বসেই জেনিফার জানান, তিনি নিজের হারানো নথি উদ্ধার করতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে হাজির হয়েছিলেন। সেখান থেকেই পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। ডিসি (সাউথ) মিরাজ খালিদের সাহায্যে নতুন পাসপোর্টও পেয়েছেন। এখন তাঁর দাবি, তাঁকে ওমানে ফেরার ভিসা ও বিমানের টিকিট দেওয়া হোক। কারণ, তাঁর কাছে টাকা নেই।
পুলিশ সূত্রের খবর, জেনিফার নিজের আত্মীয়স্বজন বলে যাঁদের নাম-ঠিকানা জানিয়েছেন, তাঁদের কারও অস্তিত্ব মেলেনি। তাঁর যে পুরনো পাসপোর্টটি হারিয়ে গিয়েছে, সেটির প্রতিলিপি তাঁর কাছে রয়েছে। সেটি দুবাইয়ে ভারতীয় দূতাবাস দিয়েছিল। এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, ‘‘পাসপোর্ট অনুযায়ী মহিলা ভারতীয় নাগরিক। কিন্তু ওঁর ওমানের ভিসার দায়িত্ব তো এ ভাবে নেওয়া যায় না।’’ হোম সূত্রের খবর, জেনিফারের আচরণে অসংলগ্নতা রয়েছে। বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর তিনি দিতে চাইছেন না বা অস্বাভাবিক উত্তর দিচ্ছেন।
জেনিফার দাবি করেন, তাঁর এ দেশে এক বার বিয়ে হয়েছিল। সেই পক্ষের দুই ছেলে রয়েছেন। কিন্তু তাঁরা যোগাযোগ রাখেন না। তাঁর মা কলকাতাবাসী ব্রিটিশ ছিলেন। মারা গিয়েছেন। তাঁর দাবি, তিনি ওমানে বছর তিন আগে মহম্মদ মামুরি নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। তা হলে এত দিনে স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করলেন না কেন? উত্তর মেলেনি।
জেনিফারের নথি বলছে, ১৯৮৫ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ পাশ করেন। ২০০৯ সালে স্নাতকোত্তরের শংসাপত্রের প্রতিলিপিও নিয়েছেন। সেটি তাঁর কাছেই রয়েছে। তিনি ওমানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করতেন। সেখানে যোগাযোগ করলেন না? প্রৌঢ়ার জবাব, ‘‘চাকরি চলে গিয়েছে।’’ জেনিফারের কাছে তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রতিলিপি রয়েছে। সেটি শারজার। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সে সময়ে আমি শারজায় থাকতাম।’’ জেনিফার জানান, কলকাতার কয়েকটি স্কুলে তিনি চাকরি খুঁজতে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় নথি না থাকায় পাননি। হোমের একটি সূত্র বলছে, ‘‘উনি নিজের আশ্রয় খুঁজে পেলে ভাল। না পেলে তো আর রাস্তায় বার করে দেওয়া যায় না।’’ জেনিফার অবশ্য তাতে কান দিতে নারাজ। নিজের পুরনো শহরে থেকেও তিনি খুঁজে চলেছেন পরবাসের ভিসা।