জীর্ণ বাড়ির মেঝে ধসে আহত চার

শহর জুড়ে ‘বিপজ্জনক’ বাড়ি। নোটিস ঝুলিয়ে কার্যত দায় এড়ায় পুরসভা। ভাঙা হয় না। কেন? প্রশ্ন উঠলে, মেয়র থেকে আমলা সবাই শোনান ‘আর্থ-সামাজিক দায়বদ্ধতা’র তত্ত্ব। তাই বাড়ি ভেঙে না পড়লে বিপজ্জনক ডেরায় মানুষ বাস করেন এবং দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও বাড়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৬ ০০:৫৫
Share:

এ ভাবেই ভেঙে পড়েছে মেঝে। বুধবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

শহর জুড়ে ‘বিপজ্জনক’ বাড়ি। নোটিস ঝুলিয়ে কার্যত দায় এড়ায় পুরসভা। ভাঙা হয় না। কেন? প্রশ্ন উঠলে, মেয়র থেকে আমলা সবাই শোনান ‘আর্থ-সামাজিক দায়বদ্ধতা’র তত্ত্ব। তাই বাড়ি ভেঙে না পড়লে বিপজ্জনক ডেরায় মানুষ বাস করেন এবং দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও বাড়ে।

Advertisement

যেমন হল বুধবার সকালে নারকেলডাঙার এম এন চ্যাটার্জি সরণিতে। এ দিন অবশ্য কোনও হতাহতের খবর নেই। তবে দোতলার মেঝে ভেঙে পড়ে আহত হয়েছেন চার জন। জখমের তালিকায় রয়েছে ন’বছরের এক বালক ও সতেরো বছরের কিশোরও। পুলিশ জানায়, বাড়িটির দোতালার ঘরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসেছিলেন ছ’জন। হঠাৎই বিকট শব্দ করে খাট-সহ ভেঙে পড়ে ওই ঘরের মেঝে। আহতদের নাম মহম্মদ আরিফ (২১), মহম্মদ আজিম (৯), আলিনা খাতুন (২০) এবং আসিয়া খাতুন (১৭)। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে সকলকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দোতলা ওই বাড়িটি বহু পুরনো। দু’টি তলা মিলিয়ে মোট ১২ ঘর ভাড়াটে। হঠাৎ বিকট আওয়াজ শুনে আশপাশের ঘরের বাসিন্দারা বেরিয়ে দেখেন, দোতলার একটি ঘরের মেঝে মাঝখান থেকে ভেঙে নীচের ঘরে পড়েছে। সেই সময়ে একতলার ঘরে কেউ ছিল না। থাকলে বড় ক্ষতি হতে পারত বলে আশঙ্কা বাসিন্দাদের।

Advertisement

দোতলার ওই ঘরেরই বাসিন্দা রসিদা বেগম বলেন, ‘‘আমি ও আমার স্বামী মহম্মদ আসলাম ঘরের এক পাশে বসে কাগজের বাক্স বানাচ্ছিলাম। দুই ছেলে খাটে শুয়ে ছিল। এক মেয়ে খাটে বসে সেলাই করছিল। অন্য জন মেঝেতে ছিল।’’ ওই মহিলার কথায়, ‘‘হঠাৎ বিকট আওয়াজ হল। দেখলাম, খাট নিয়ে পড়ে যাচ্ছে মেঝের মাঝখানের অংশ।’’

বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বাড়িটি পুরনো ও জীর্ণ। ছ’মাস আগেই কলকাতা পুরসভা এই বাড়ির গায়ে ‘বিপজ্জনক’ নোটিস লাগিয়ে দিয়েছিল। বহু বার মেরামতির কথা বাড়িওয়ালাকে বলা হলেও তিনি কিছু করেননি। মাঝেমধ্যেই ভাড়াটেরাই নিজেদের সামর্থ্য মতো অল্পস্বল্প মেরামতি করিয়ে নেন।

বাড়ির মালিক মহম্মদ সেলিম জানান, বাড়িটির ১০০ বছরেরও পুরনো। কয়েক বছর ধরেই বাড়িটির দোতলার মেঝের কিছু জায়গা আলগা হয়েছিল। ভাড়াটেদের সারিয়ে নিতে বলেছিলাম। কিন্তু বাড়িওয়ালা নিজে সারাননি কেন? মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘সারানোর অর্থ আমার নেই।’’

পুর বিল্ডিং বিভাগ সূত্রের খবর, পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, গোটা বাড়ির কাঠামো কিন্তু নষ্ট হয়নি। দোতলার কিছু অংশ সারালেই সমস্যা মিটে যাবে। বাড়ির মালিককে সে কথাও জানানো হয়েছিল।

পুরসভার রেকর্ডে শহরে বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্যা প্রায় ৩০০০। কিন্তু বিপজ্জনক অংশ না ভাঙার ফলে যে ঝুঁকির আশঙ্কা, তাতে পুরসভার ভুমিকা কী? বিল্ডিং বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল (২) দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিপজ্জনক বাড়ির ক্ষেত্রে নোটিস দিয়ে মালিককে মেরামতি করতে বলে পুরসভা। না হলে পুরসভা আইন প্রয়োগ করে তা ভাঙতে পারে। বহু ক্ষেত্রে দিয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে পুনর্বাসন সমস্যায় পিছিয়ে আসতে হয়। আইনি সমস্যাও হয়।’’

এ দিনের ঘটনার পরে অবশ্য পুরসভা জানিয়েছে, নারকেলডাঙার ওই বাড়ির বিপজ্জনক অংশ ভেঙে দেওয়া হবে। এত দিন কেন করেনি? সদুত্তর মেলেনি প্রশাসনের তরফে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement