একটি বেসরকারি স্কুলের ছুটির সময়ে সেখানকার যানজট সামলাচ্ছিলেন দক্ষিণ কলকাতার একটি ট্রাফিক গার্ডের আধিকারিকেরা। লালবাজার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম থেকে ফোন করে তাঁদের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে নির্দেশ দেওয়া হল। কারণ কন্ট্রোল রুম জানতে পেরেছে, সেখানে দীর্ঘক্ষণ ধরে যানজট চলছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই আধিকারিক দেখলেন, সেখানে যান চলাচল স্বাভাবিক। পরে জানা যায়, এক ব্যাক্তি ফোন করে ওই যানজটের খবর দিয়েছিলেন।
মধ্য কলকাতায় একটি রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে থাকার পরে প্রাক্তন এক পুলিশ অফিসার ওই এলাকার ট্রাফিক গার্ডের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আধিকারিকেরা প্রথমে জানান, ওই নির্দিষ্ট জায়গায় তাঁর গার্ডের অফিসার রয়েছে। তাই যানজট হওয়ার কথা নয়। পরে প্রাক্তন অফিসারের কথা বিশ্বাস করে গার্ডের আধিকারিক ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, কোনও অফিসার সেখানে নেই। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মাল বোঝাই করছে একটি লরি। তার জেরেই সমস্যা।
উপরের দু’টি ঘটনাই গত কয়েক মাসের কলকাতার দুই ট্রাফিক গার্ডের খণ্ডচিত্র। দু’জায়গাতেই ভুল তথ্যের জেরে যানজট নিয়ে নাজেহাল হতে হয়েছিল গার্ডের আধিকারিকদের। লালবাজার সূত্রের খবর, শহরের বিভিন্ন রাস্তায় নজরদারির অভাবে ওই ভাবে যানজটের কবলে পড়েন সাধারণ নাগরিকেরা।
পুলিশকর্তাদের দাবি, এখন থেকে কলকাতা পুলিশের আওতাধীন ২ টি ট্রাফিক গার্ডের ওসি এবং ট্রাফিকের এসিরা অফিসে বসে বা রাস্তায় থেকে নিজেদের মোবাইলে তাঁদের এলাকার প্রতিটি বিটের (যেখানে ট্রাফিক কনস্টেবলরা ডিউটি করেন) যান-চলাচলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে পাবেন। এবং সমস্যা সমাধানে সেখান থেকেই চটজলদি নির্দেশও দিতে পারবেন তাঁরা। এতে রাস্তায় থাকা ট্রাফিক অফিসার ও কর্মীদের ফাঁকি দেওয়াও বন্ধ করা যাবে।
লালবাজার সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশ এলাকার ছোট-বড় বিভিন্ন রাস্তায় প্রায় সাতশোর বেশি সিসিটিভির ক্যামেরা রয়েছে। শহরের বিভিন্ন মোড়ের ছবি দেখা যায় পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের ঘরে বসানো স্ক্রিনেও। সিসিটিভি-র ফুটেজে এত দিন লালবাজারের ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম এবং ট্রাফিক গার্ড থেকে নজর রাখা হতে। ওসি বা এসিরা রাস্তায় থাকায় তাঁদের কন্ট্রোল রুম বা অফিসারদের উপরে নির্ভর করতে হতো। যা এ বার বন্ধ হবে বলে আশা কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে যুক্ত কর্তাদের। এত দিন সব ডেপুটি কমিশনার বা তার উপরের স্তরের কর্তারা চাইলে ট্রাফিকের ফুটেজ দেখতে পেতেন। এ বার থেকে সেই সুবিধাই পাবেন গার্ডের ওসি এবং এসি-রা। পরে ট্রাফিক গার্ডের অতিরিক্ত ওসি-দেরও এর আওতায় নিয়ে আসা হবে।
কী ভাবে মোবাইল ফোনে দেখা যাবে কলকাতা পুলিশ এলাকায় থাকা ৭০০-র বেশি ক্যামেরার ছবি?
লালবাজারের অফিসারেরা জানিয়েছেন, এর জন্য চাই শুধু একটি ‘অ্যান্ড্রয়েড’ স্মার্টফোন। তাতে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপ। কলকাতা পুলিশের ওই অ্যাপের নাম, ‘‘মাইলস্টোন মোবাইল অ্যাপ’। তার সাহায্যেই যে কোনও জায়গা বসেই নিজের আওতাধীন এলাকার বিভিন্ন রাস্তার অবস্থা দেখতে পাবেন আধিকারিকেরা। ট্রাফিক গার্ড সূত্রের খবর, ওই অ্যাপে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে শহরের সব সিসিটিভির ফুটেজ। যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৌঁছচ্ছে মোবাইলে। তবে প্রত্যেক আধিকারিক অ্যাপে শুধু নিজের এলাকার ছবি দেখতে পাবেন। লালবাজার সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্তাদের ফোনে এই অ্যাপ ‘ইনস্টল’ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। চলতি সপ্তাহেই সবাই তা পেয়ে যাবেন।
এই অ্যাপের ব্যবহার শুধু ট্রাফিকে সীমাবদ্ধ রাখতে নারাজ লালবাজার। বরং এর মাধ্যমে ভোটের আগে আইনশৃঙ্খলা সামাল দেওয়াকেও প্রাধান্য দিচ্ছেন কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। লালবাজার সূত্রের খবর, ওই অ্যাপ যাতে থানার আধিকারিকেরা ব্যবহার করতে পারেন, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা করছেন কর্তারা। যাতে থানায় বসেই নিজের এলাকার কোথাও কোনও অবৈধ জমায়েত বা ছোটখাটো রাজনৈতিক সংঘর্ষ হচ্ছে কি না, তা নজরে রাখতে পারেন আধিকারিকেরা।