পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা বার্তা দেওয়ার ফ্লেক্সের উপরেই সেই অনুষ্ঠানের ফ্লেক্স। বাতিস্তম্ভে টাঙানো হয়েছে চোঙা। দমদমের সুভাষনগরে। নিজস্ব চিত্র
স্থায়ী নির্দেশিকা রয়েছে। পরীক্ষার মরসুমে কোনও ভাবেই যাতে মাইক না বাজে, সে বিষয়ে শনিবার জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে উপ-নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে দলীয় ও প্রশাসনিক স্তরে মাইক ব্যবহার না করার নির্দেশ দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেও মাইক-যোগে জলসা চলল দক্ষিণ দমদমের সুভাষনগরে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য যা ‘বসন্তের উপহার’ বলে এলাকায় হোর্ডিং-ফ্লেক্স টাঙিয়ে প্রচার করেছেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর ধনঞ্জয় মজুমদার।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শেষ হলেও এখনও চলছে সিবিএসই, আইসিএসই-র দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা। আজ, সোমবার সিবিএসই দ্বাদশ শ্রেণির অঙ্ক পরীক্ষা। এরই মধ্যে শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত সুভাষনগর মাঠে ১৬ ফুট বাই ২৪ ফুটের মঞ্চ তৈরি করে ডিজে বক্স সহযোগে জলসা করার অভিযোগ উঠল উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে। মাঠে থাকা সাউন্ড সিস্টেমের পাশাপাশি জলসা কেমন হচ্ছে ‘জানান’ দিতে এক নম্বর রেলগেট, হেল্থের মাঠ-সহ ওয়ার্ডের বিভিন্ন বাতিস্তম্ভে টাঙানো হয়েছিল মাইকের চোঙা।
এক নম্বর রেলগেট সংলগ্ন ফ্ল্যাটের বাসিন্দা, এক সিবিএসই পরীক্ষার্থীর কথায়, ‘‘দুপুর থেকে মাইক বাজানো শুরু হয়েছিল। ভাবলাম যা আওয়াজ, রাতে পড়ব। কিন্তু কোথায় কী?
মাইকের দৌরাত্ম্যে পড়া মাথায় উঠল। আলো, বক্স সহযোগে যা উল্লাস, দেখলে মনে হবে পার্টি হচ্ছে!’’ থার্ড বাইলেনের কাছে আর এক পরীক্ষার্থী বলে, ‘‘সারা বছরই তো এখানে মাইক বাজে। সে সব মানিয়ে নিয়েছি। পরীক্ষার সময়েও কি আমাদের অসুবিধার কথা ভাবা হবে না?’’ আমতলার বাসিন্দা এক পরীক্ষার্থীর মন্তব্য, ‘‘মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শেষ হয়ে গিয়েছে বলে কি অন্য বোর্ডের পরীক্ষা নেই? হোর্ডিংয়ে তো আমাদের বোর্ডের পরীক্ষার্থীদেরও শুভেচ্ছা জানানো হয়!’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
পরীক্ষার্থীদের অসুবিধার পাশাপাশি আরও একটি বিষয় নিয়ে দেখা দিয়েছে বিতর্ক। বিরোধীদের বক্তব্য, নির্বাচনী আচরণবিধি চালু হয়ে গিয়েছে। শনিবারের সঙ্গীতানুষ্ঠানের প্রচারে এলাকায় যে ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছে তাতে লেখা, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ও সকল সঙ্গীতপ্রেমী নাগরিকদের বসন্তের উপহার গান পিরিতি’। নির্বাচনী আচরণবিধি থাকাকালীন এ ধরনের বক্তব্য কার্যত উপঢৌকন দেওয়ার শামিল বলে মনে করছেন বিরোধীরা। ওই অনুষ্ঠানে যাদবপুর এবং বসিরহাটে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহানও শিল্পী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
গোটা ঘটনা প্রসঙ্গে অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা তথা তৃণমূল কাউন্সিলর ধনঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘শিল্পীদের তালিকা দেড়-দু’মাস আগে ঠিক হয়েছিল। তখনও ভোট ঘোষণা হয়নি। মাইক রাত ন’টার পরেই বন্ধ করে দিয়েছিলাম। নির্বাচনের সময়ে ভোটারদের কেন চটাব? নির্বাচনী আচরণবিধি চালু হয়ে যাওয়ায় ফ্লেক্স, হোর্ডিং খুব বেশি লাগানো হয়নি। যে কয়েকটি টাঙানো হয়েছিল, তাতে কী লেখা রয়েছে আমি দেখিনি।’’ যদিও এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘রাত সাড়ে ১০টার পরেও বাতিস্তম্ভে লাগানো মাইক বন্ধ করা হয়নি। রাত ১২টা পর্যন্ত ডিজে বক্স বাজিয়ে রীতিমতো তাণ্ডব চলেছে।’’ দমদম লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী নেপালদেব ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, ‘‘আইনের রক্ষকেরা এখন ভক্ষক হয়ে গিয়েছে।’’
পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার অনুষ্ঠানের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। পদ্ধতি মেনে স্থানীয় থানা তা প্রশাসনিক স্তরে পাঠিয়ে দেয়। দমদম লোকসভা কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার নবকুমার বর্মণ বলেন, ‘‘ঠিক কী ঘটেছে, খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’