উপদ্রব: এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অবাধে ঘোরাফেরা বেড়ালের। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
সমস্যা নতুন নয়। হাসপাতালের ওয়ার্ডের ভিতরে বেড়ালদের অবাধ বিচরণে অতিষ্ঠ রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে এই উৎপাত উত্তরোত্তর বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হচ্ছে। গত বুধবার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেডিয়োলজি বিভাগে এক রোগীর দেহে বেড়ালছানা উঠে পড়েছিল। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, বেড়ালছানাকে সরাতে হাসপাতালের তরফে কলকাতা পুরসভাকে ফোন করতে হয়। এন আর এসে বেড়ালের সংখ্যা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে আলোচনা হয়। শুধু এন আর এসেই নয়, শহরের অন্যান্য সরকারি হাসপাতালেও বেড়ালের উৎপাতে নাজেহাল অবস্থা রোগীদের।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগীর কথায়, ‘‘হাসপাতালের মধ্যে বেড়ালের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সমস্যা তো হচ্ছেই। ওদের জন্ম-নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের সঙ্গে কথা বলব।’’ হাসপাতালের ওয়ার্ডে বেড়ালের উৎপাত তো দীর্ঘ দিনের। তা হলে এত দিন প্রাণিসম্পদ দফতরের সঙ্গে কথা বলা হয়নি কেন? স্বাস্থ্য অধিকর্তার সাফাই, ‘‘বেড়ালের সমস্যা মেটাতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা তো বেড়াল সরাতে পারি না। এর জন্য পুরসভাকে একাধিক বার বলা হয়েছে। কিন্তু পুরসভা জানিয়েছে, কুকুরের নির্বীজকরণের সরকারি ব্যবস্থা থাকলেও বেড়ালের ক্ষেত্রে তা নেই। আইনি জটিলতার কারণে বেড়াল সরানোর কাজ পুরসভা করবে না বলে জানিয়েছে। আমরা তা হলে কী করব?’’
রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা জানাচ্ছেন, রোগীদের শরীরে বেড়ালের আঁচড়ে বা কামড়ে দেওয়ার ঘটনা হামেশাই ঘটে। শিশু রোগীদের ক্ষেত্রে যে ভয়টা সব চেয়ে বেশি। শহরের একাধিক হাসপাতালে বেড়ালের সংখ্যা অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগকে চিঠি লিখে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বেলেঘাটা আইডি, এন আর এস, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, জোকা ইএসআই ও ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালের তরফে পুরসভাকে চিঠি দিয়ে বেড়ালদের অন্যত্র সরানো বা তাদের জন্ম-নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছিল আগেই। কিন্তু পুরসভার তরফে হাসপাতালগুলিকে জানানো হয়েছে, পশু সুরক্ষা আইন অনুযায়ী সরকারি ভাবে কুকুরের নির্বীজকরণ করা হলেও বেড়ালের নির্বীজকরণের ব্যবস্থা নেই। আবার কুকুর-বেড়ালদের এক জায়গা থেকে অন্যত্র সরানোর বিধিও নেই। পশু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বেড়াল সাধারণত বছরে তিন বার বাচ্চা প্রসব করে। তাই তাদের সংখ্যাও খুব দ্রুত হারে বাড়ে।
এন আর এসের সুপার ইন্দিরা দে পাল বলেন, ‘‘বিভিন্ন ওয়ার্ডে বেড়ালের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রোগীরা আতঙ্কে ভুগছেন। সম্প্রতি রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পুরসভাকেও জানানো হয়েছে। কিন্তু আইনি জটিলতায় বেড়ালের নির্বীজকরণ বা তাদের অন্যত্র সরানো সম্ভব নয়। আমরা বিষয়টি নিয়ে খুব চিন্তায় রয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’ বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের সুপার অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘বেড়ালের দৌরাত্ম্যে সমস্যা তো হচ্ছেই। ওদের জন্ম-নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে আমরা একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছি।’’
এন আর এসে মাসকয়েক আগে হাসপাতালের এক কর্মীকে বেড়াল কামড়ে দিয়েছিল বলে অভিযোগ। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি ও স্ত্রীরোগ ওয়ার্ডে বেড়াল গিজগিজ করছে। যে সমস্ত রোগী মেঝেতে ঠাঁই পান, তাঁরাই সব থেকে বেশি আতঙ্কে থাকেন। হাসপাতালের এক কর্মীর কথায়, ‘‘অনেক রোগীই বেড়ালের ভয়ে রাতে ঘুমোতে পারেন না।’’
পশু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বেড়ালের উপস্থিতি অনেক সময়ে সংক্রমণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষত, ওয়ার্ডে বেড়ালের অবাধ বিচরণে তাদের শরীরের লোম কোনও ভাবে রোগীর খাবারে মিশে গেলে তা থেকে সমস্যা হতে পারে। পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) তথা ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘বেড়ালের নির্বীজকরণের জন্য কোনও সরকারি নিয়মবিধি আমাদের কাছে নেই। পশু সুরক্ষা আইন অনুযায়ী বেড়ালদের হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরিতও করা যাবে না। ফলে বিভিন্ন হাসপাতালের তরফে পুরসভাকে জানানো হলেও বেড়ালের জন্ম-নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না আমরা। তবে, কুকুরের নির্বীজকরণের কাজ চলছে।’’