—প্রতীকী ছবি
রাজ্যের প্রত্যেক নাগরিকের চোখের চিকিৎসার জন্য সম্প্রতি ‘চোখের আলো’ প্রকল্পের সূচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কলকাতার প্রায় সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং চোখের চিকিৎসার একমাত্র রেফারাল কেন্দ্র ‘রিজিয়োনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি’ (আরআইও)-র চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দ্রুত লোক নিয়োগ না হলে এবং যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা না করলে এই প্রকল্প চালানো কার্যত অসম্ভব। তাঁদের মতে, এই মুহূর্তে বিভিন্ন হাসপাতালে যত জন চক্ষু চিকিৎসক এবং অপ্টোমেট্রিস্ট রয়েছেন, তাতে চোখের জাতীয় কর্মসূচিই খুঁড়িয়ে চলছে। এর সঙ্গে রাজ্যের ‘চোখের আলো’ প্রকল্প যোগ হলে চোখে অন্ধকার দেখতে হবে।
পরিসংখ্যান বলছে, ‘জাতীয় অন্ধত্ব নিবারণ কর্মসূচিতে’ ২০১৮-’১৯ সালে আরআইও-তে ৯৭২৭ জনের ছানি অস্ত্রোপচার হয়েছিল। তার পরের বছর হয়েছিল ১০০৩১ জনের। ২০২০-’২১ সালে এখনও পর্যন্ত মাত্র ২০০০ জনের ছানি অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু আরআইও যে গোত্রের হাসপাতাল এবং সেখানে যত জন সার্জন আছেন (২৫ জন সার্জন এবং প্রত্যেকে মাসে ৬০টি অস্ত্রোপচার করবেন ধরে নিয়ে), সেই অনুপাতে সেখানে বছরে অন্তত ১৮ হাজার অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। এক দশক আগে বছরে ১৬ হাজার ছানি অস্ত্রোপচারের নজিরও আরআইও-তে রয়েছে।
সেই জায়গায় ছানির অস্ত্রোপচার এখন নেমে এসেছে বছরে ৯-১০ হাজারে। আরআইও-র অধিকর্তা অসীমকুমার ঘোষের মতে, অপথ্যালমিক অ্যাসিস্ট্যান্ট বা অপ্টোমেট্রিস্ট নিয়োগ না করলে অস্ত্রোপচার বা চশমা দেওয়ার কাজে গতি আসবে না। তিনি জানান, এই প্রতিষ্ঠানে ২০১৮-’১৯ সালে পাঁচ জন অপ্টোমেট্রিস্ট ছিলেন। তা এখন এক জনে এসে ঠেকেছে। লোকের অভাবে ২০১৮-’১৯ সালে মাত্র ৬১০ জন ছাত্রছাত্রী এবং পরের বছরে মাত্র ৬০০ জন ছাত্রছাত্রীকে চশমা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। অসীমবাবুর কথায়, ‘‘অবিলম্বে ১০-১২ জন অপ্টোমেট্রিস্ট নেওয়া না হলে ‘চোখের আলো’ সামলানো যাবে না। এই প্রকল্পে কাজের দায়িত্ব নেবেন কারা?’’
আরও পড়ুন: গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ করোনা আক্রান্তের মৃত্যু, নতুন করে সংক্রমিত ৭৮৭
আরও পড়ুন: দুয়ারে সরকারে নাম নথিভুক্তি পৌঁছে গেল ২ কোটিতে, শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর
রাজ্যে চক্ষু চিকিৎসার আর একটি উল্লেখযোগ্য জায়গা এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। সেখানে ২০১৮-’১৯ সালে মাত্র ২৫০৯ জনের এবং ২০১৯-’২০-সালে ২৭৫৫ জনের ছানি অস্ত্রোপচার হয়েছে। সার্জন আছেন পাঁচ জন। ফলে হিসেব মতো, বছরে অন্তত সাড়ে তিন হাজার অস্ত্রোপচার হওয়া উচিত। স্কুলে-স্কুলে পড়ুয়াদের চোখ পরীক্ষা করে চশমা দেওয়ার কাজ দু’বছর কার্যত বন্ধ। বিভাগীয় প্রধান সমীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের কর্মী সংখ্যা তো আরআইও-র থেকেও কম। প্যারামেডিক্যাল অপ্টোমেট্রিক অ্যাসিস্ট্যান্ট রয়েছেন দু’জন। অন্তত আরও দু’জন অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং তিন জন সার্জন ছাড়া ‘চোখের আলো’র কাজ চালানো অসম্ভব।’’
একই চিত্র আরও দুই প্রথম সারির হাসপাতাল আর জি কর এবং এসএসকেএমে। আর জি করে ২০১৮-’১৯ সালে ১৫৭০ জনের এবং ২০১৯-’২০ সালে ১৫০০ জনের ছানি অস্ত্রোপচার হয়েছে। এসএসকেএমে ২০১৮-’১৯ সালে সাকুল্যে ২৯৫টি ও পরের বছর মাত্র ৬৫৬টি ছানি অস্ত্রোপচার হয়েছে। যেখানে বছরে অন্তত ১২০০ অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। চশমা দেওয়ার কাজ প্রায় হয়ইনি। এখানে সার্জন আছেন দু’জন, অপ্টোমেট্রিস্ট এক জন। এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের কথায়, ‘‘চিকিৎসকদের মানসিকতা পাল্টাতে হবে। উন্নত করতে হবে যন্ত্রপাতি, ওটি-সহ গোটা পরিকাঠামো। তা না হলে এই পরিস্থিতিতে ‘চোখের আলো’ চালানো মুশকিল।’’
পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যে এই মুহূর্তে স্থায়ী এবং অস্থায়ী মিলিয়ে অপ্টোমেট্রিস্ট আছেন ৩৯১ জন। এর উপরে তাঁদের ২০৬টি পদ ফাঁকা। গত ১৮ বছরে এই পদে নিয়োগ হয়নি। এমনকি মহকুমা, স্টেট জেনারেল এবং সাবার্বান হাসপাতালগুলিতে এই পদই নেই! অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা বলছে, প্রতি ২০ হাজার জনসংখ্যাপিছু এক জন করে অপ্টোমেট্রিস্ট থাকা বাধ্যতামূলক।
কর্মী-সঙ্কটের কথা মেনে নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অপ্টোমেট্রিস্ট-সহ আরও নানা পদে নিয়োগের বিষয়টি আমাদের সক্রিয় বিবেচনায় আছে। আশা করা যাচ্ছে, বিধানসভা ভোটের পরেই দ্রুত নিয়োগ হবে।’’