সময়ের জ্ঞান নেই, শিয়ালদহের ট্রেন যেন যাত্রীদের দুঃস্বপ্ন

সময়সারণি মেনে ট্রেন চলছে না শিয়ালদহে। আর দেরিতে ট্রেন চলায় বেড়ে যাচ্ছে ভিড়ের চাপ। ফলে শিয়ালদহের শহরতলিতে লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে যাত্রীদের। গতির প্রশ্নে রেল মঙ্গলবার থেকে নতুন মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৬ ১৫:০৫
Share:

সময়সারণি মেনে ট্রেন চলছে না শিয়ালদহে। আর দেরিতে ট্রেন চলায় বেড়ে যাচ্ছে ভিড়ের চাপ। ফলে শিয়ালদহের শহরতলিতে লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে যাত্রীদের।

Advertisement

গতির প্রশ্নে রেল মঙ্গলবার থেকে নতুন মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেছে। এখন গতিমান ২০০ কিলোমিটার পার করছে মাত্র ১০০ মিনিটে। সে সব দেখে যাত্রীদের বক্তব্য, দেশে যখন ট্রেনের গতি বাড়িয়ে যাতায়াতের সময় কমানো হচ্ছে, সেই সময় শিয়ালদহে রেলেরই নানা সমস্যায় ট্রেনের দেরি হওয়ায় যাতায়াতের সময় ক্রমশই বাড়ছে। আর তাতেই ট্রেনগুলিতে বাড়ছে ভিড়।

শিয়ালদহের সব শাখাতে বেনিয়মে ট্রেন চলাই এখন নিয়ম। চালক নেই তো, প্ল্যাটফর্মে রেক আসতে দেরি। অথবা সিগন্যাল বিপত্তি। আর এক বার একটা ট্রেন দেরিতে চলা মানেই তার আগে পরে সব ট্রেনেরই দেরি হওয়া। দীর্ঘ ক্ষণ লেট করার পরে যখন একটি লোকাল ঢুকছে প্ল্যাটর্ফমে সেই সময়ে ট্রেনের দরজায় দরজায় অপেক্ষমাণ যাত্রীদের ঢল নামায় নামতে পারছেন না ভিতরের যাত্রীরা। ধাক্কাধাক্কির ঠেলায় নিত্যই কমবেশি পড়েও যাচ্ছেন অনেকে।

Advertisement

রেলের টাইম টেবিলে শিয়ালদহ থেকে নৈহাটি যেতে সময় ধার্য করা আছে এক ঘণ্টা। সেখানে এখন লাগছে সওয়া এক ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা। একই ভাবে ব্যারাকপুর পর্যন্ত সময় লাগার কথা ৩৫ মিনিট। লাগছে প্রায় ৫০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা। যাত্রীরা বলছেন, প্রথমে শিয়ালদহে এক দফা দেরি ট্রেন ছাড়তে। তার পরে কারশেডে, তার পরে দমদম স্টেশনে ঢোকার আগে। এর পর ব্যারাকপুরে ঢোকার আগে। দমদম রুট রিলে ইন্টারলক কেবিন এবং ব্যারাকপুর পর্যন্ত অটোমেটিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করার সময় বলা হয়েছিল, এই কাজের পরে ট্রেনে গতি বাড়বে, লাইনে পাত বাড়বে। ফলে বেশি ট্রেন চালানো যাবে। কিন্তু কিছুই হয়নি। সেই ট্রেন চলছে গড়াতে গড়াতেই।

যাত্রীদের অভিযোগ, অনেক অনুরোধ উপরোধ করেও এই দম আটকানো যাত্রার হাত থেকে রেহাই মেলেনি। ভিড়ের হাত থেকে বাঁচাতে মেন লাইনে ১২ কামরার ট্রেন চালানোর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বেশির ভাগ ট্রেন এখনও ৯ কামরা দিয়েই চলছে। উল্টে ট্রেনগুলি নিয়মিত দেরিতে চলাচল করায় যাত্রীরা নাকাল হচ্ছেন।

রেল সূত্রে খবর, হাওড়া ও শিয়ালদহ মিলিয়ে সরকারি হিসাবে প্রায় ৩০ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন। এর মধ্যে শিয়ালদহেই প্রায় ১৮ লক্ষ। এর সঙ্গে রয়েছে বিনা টিকিটের আরও কয়েক লক্ষ যাত্রী। রেলকর্তারা বলছেন, প্রতি বছর ৬ শতাংশ করে যাত্রীর ভিড় বাড়ছে। ফলে দুই ডিভিশন মিলিয়ে সারা দিনে ১২৮৪টি লোকাল ট্রেন চালিয়েও ভিড় সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। অবস্থা এতটাই খারাপ যে ট্রেন বাড়ানোরও আর কোনও অবস্থাও (পাত) নেই ওই দুই ডিভিশনে। তবে নিয়মে কেন ট্রেন চালানো যাচ্ছে না সে ব্যাপারে রেলকর্তারা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

পরিকাঠামো না থাকায় নতুন ট্রেন চালানো যাবে না ঠিকই, কিন্তু সময়মতো কেন চালানো যাবে না ট্রেন? রেলকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, আসলে শিয়ালদহে উঁচু থেকে নিচুতলার কর্মীদের একটি বিরাট অংশ দীর্ঘ দিন ধরে একই জায়গায় থেকে যাওয়ায় কর্মসংস্কৃতি লাটে উঠেছে। যার ফলে ট্রেন অনিয়মিত হয়ে পড়লেও কেউ সেটা দেখারও প্রয়োজন মনে করছে না। উল্টে নিয়মিতই শিয়ালদহ থেকে সদর দফতরে রিপোর্ট যাচ্ছে, ১০০ শতাংশ সময়ানুবর্তিতায় ট্রেন চলছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement