প্রতীকী চিত্র।
ছুটি অনেক হল, এ বার পড়ানোর কাজে ফিরতে চান শিক্ষকদের একাংশ। সরকারি, সরকার-পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে গত ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে গরমের ছুটি। এ রাজ্যে ওই সময়ে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সময়ের আগেই সেই ছুটি শুরু হয়ে যায়। শিক্ষকদের একাংশের প্রশ্ন, গরম শেষ হয়ে বর্ষা এসে গেল। আর কত দিন চলবে এই ছুটি? স্কুলে যাওয়ার কোনও সরকারি নির্দেশিকা এখনও আসেনি। অনলাইন ক্লাস নিয়েও কোনও নির্দেশিকা পাননি তাঁরা। এ বার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় খাতা দেখার কাজও নেই। তাই শিক্ষকেরা অনেকেই এখন চাইছেন, তাঁদের এই দীর্ঘ ছুটি এ বার শেষ হোক। তাঁদের পরামর্শ, অনলাইন ক্লাস নিতে যাঁদের অসুবিধা হচ্ছে, সেই শিক্ষকদের অন্য কোনও ভাবে পড়ানোর কাজে যুক্ত করা হোক।বসে বসে বেতন নিচ্ছেন বলে প্রায়ই সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের নিয়ে রসিকতা করা হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। যদিও শিক্ষকদের বক্তব্য, স্কুলই যদি না খোলে, তা হলে তাঁদের দোষ কোথায়?
হাওড়ার দুইল্যা পাঁচপাড়া স্কুলের শিক্ষিকা সুমনা সেনগুপ্ত জানালেন, ওই স্কুলের এক পড়ুয়া কিছু দিন আগে ফোন করে তাঁর কুশল জানতে চেয়েছিল। সেই সঙ্গে কিছু পড়াও বুঝিয়ে দিতে অনুরোধ করে সে। সুমনা বললেন, “ওর ফোন পেয়ে মনে হল, সত্যিই তো, কত দিন যোগাযোগ নেই পড়ুয়াদের সঙ্গে। ওদের সকলের বাড়িতে স্মার্টফোন নেই। তাই অনলাইন ক্লাস নিয়মিত ভাবে হয় না। আমরা এ বার পড়ানোর কাজে ফিরতে চাই পুরোদমে। অফলাইন ক্লাস এই মুহূর্তে সম্ভব নয় জানি। অনলাইন ক্লাসও সকলে করতে পারবে না। তা হলে অন্য কোনও ভাবে পড়ানো যায় কি না, ভাবা হোক। পোর্টালের পাশাপাশি আমরা শিক্ষক-শিক্ষিকারা তো নিজেরাও অ্যাক্টিভিটি টাস্ক তৈরি করে দিতে পারি।” সুমনা বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের সকলের বাড়িতে স্মার্টফোন না থাক, সাধারণ ফোন তো রয়েছে। তা হলে একটি বার ফোন করলে অন্তত যোগাযোগটা তো থাকে। পড়াশোনায় তাদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না, সেটুকু তো জানা যায়।’’
শহরের সারদাপ্রসাদ ইনস্টিটিউটের সহকারী শিক্ষক কৃষ্ণাশিস গোস্বামীর মতে, “করোনাকালে যে ভাবে টেলিমেডিসিনের দ্বারা প্রচুর মানুষ উপকৃত হয়েছেন, সেই ভাবে যদি টেলি-এডুকেশন করা যেত, তা হলে অনেক পড়ুয়া উপকৃত হত। এখন টেলি-এডুকেশন আছে ঠিকই, কিন্তু সব পড়ুয়া সেই সুবিধা পায় না। আমরা চাই, টেলি-এডুকেশন থেকে শুরু করে রেডিয়ো, টিভি-সহ নানা মাধ্যমে পড়ানোর মধ্যে ফিরে যেতে।”
পার্ক ইনস্টিটিউশনের সহকারী শিক্ষক বাসব মুখোপাধ্যায়ের মতে, এখন সংক্রমণ অনেকটাই কমেছে। তাই অল্প সংখ্যক পড়ুয়াকে স্কুলে নিয়ে এসে একটা-দুটো ক্লাস শুরু করা যেতে পারে। বাসববাবুর মতে, “গরমের ছুটি এ বার শেষ হোক। আগে দিনে পাঁচটা করে ক্লাস নিতাম। এখন অনলাইনে দুটো ক্লাস নিই। তা-ও সব সময়ে হয় না। স্কুলে নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষকের হাজিরার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হোক। করোনার মধ্যে পড়াশোনার সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করুক শিক্ষা দফতর।”
যদিও শিক্ষক সংগঠনগুলির মতে, সরকারি বিজ্ঞপ্তি ছাড়া শিক্ষকদের সবাইকে পড়ানোর মধ্যে ফিরিয়ে আনা কার্যত অসম্ভব। এক শিক্ষকের কথায়, “অনেকেরই অভিযোগ, করোনাকালে আমাদের পড়ানোর কাজটা নেই বললেই চলে। স্রেফ ঘরে বসে বেতন পাচ্ছি। অথচ, অনেক শিক্ষক নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছেন। অনেকে অনলাইন ক্লাসও করাচ্ছেন। কিছু শিক্ষক অবশ্য অনলাইনে পড়ানোর বিজ্ঞপ্তি না আসার বা গরমের ছুটি চলার অজুহাতে পড়ানো থেকে দূরে থাকছেন।” অনলাইনে অনেকের অসুবিধা থাকায় বিকল্প কিছু মাধ্যমে পড়ানোর পরিকল্পনা চলছে বলে জানালেন স্কুল শিক্ষা দফতরের এক কর্তা। তাঁর কথায়, “আমরা টেলি-এডুকেশন আরও ভাল ভাবে শুরু করার পরিকল্পনা করেছি। এখন এক হাজারের মতো শিক্ষক টেলি-এডুকেশন পদ্ধতিতে পড়াচ্ছেন। কিন্তু সব শ্রেণির পড়ুয়া ওই সুবিধা পাচ্ছে না। সকলেই যাতে এই ব্যবস্থায় পড়াশোনা করতে পারে, সেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে।”