জনসমুদ্র: অষ্টমীর রাতে পুজো দেখতে আসা জনতার চাপে এমনই । নিজস্ব চিত্র।
আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও নিয়মভঙ্গের একের পর এক অভিযোগ উঠেছে এ বছরের দুর্গাপুজো ঘিরে। সাধারণ মানুষের সচেতনতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনই প্রশ্ন উঠেছে পুজোকর্তাদের দায়বদ্ধতা নিয়েও।
পুজোর প্রথম দিন থেকেই বিধিভঙ্গের একাধিক ছবি সামনে এসেছে। পরে যা আরও লাগামছাড়া হয়েছে। সে দূরত্ব-বিধি শিকেয় তুলে মাস্ক ছাড়া রাস্তায় নেমে ঠাকুর দেখাই হোক, বা মণ্ডপের সামনের ব্যারিকেড ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়া। সেই সঙ্গে ভিড় করে অষ্টমীর অঞ্জলি তো রয়েছেই! বাদ যায়নি কিছুই। সিঁদুর খেলা বা বিসর্জনের ক্ষেত্রেও আদালতের বিধিনিষেধের তোয়াক্কা করা হয়নি বলে অভিযোগ। শনিবারেও সেই ছবি দেখা গিয়েছে।
শহরের সচেতন বাসিন্দাদের অনেকেরই প্রশ্ন, কোভিড-কালে এত জাঁকজমক করে পুজো করার কি আদৌ কোনও যৌক্তিকতা ছিল? এ বছর প্রথম থেকেই ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা-সহ একাধিক বিধিভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের বিরুদ্ধে। ওই পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা দিব্যেন্দু গোস্বামী অবশ্য বললেন, ‘‘আমাদের দায়বদ্ধতায় কোনও খামতি ছিল না। বরং দায়বদ্ধতা ছিল বলেই আমরা পুজো নিয়ে কোনও প্রচার করিনি। এলাকার বাইরে কোথাও কোনও পোস্টার-ব্যানার লাগানো হয়নি। এমনকি, পুজোর আগে থেকেই কমিটি প্রতিষেধক দেওয়ায় উদ্যোগী হয়েছিল।’’ তা হলে এত ভিড় হল কেন? দিব্যেন্দুবাবুর মতে, দীর্ঘ দিন বাড়িতে বন্দি থাকা মানুষ পুজোর সময়ে একটু মুক্তি খুঁজেছেন। তাই এত ভিড় হয়েছে।
গড়িয়াহাট সংলগ্ন একটি পুজোর কর্তা আবার বললেন, ‘‘সরকারি তরফে তো আগেই বলে দেওয়া হয়েছিল যে, এ বছর এমন কিছু না করতে, যার ফলে সাধারণ মানুষ উৎসাহ পান। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, বহু পুজো কমিটিই সে কথা শোনেনি। ফলে এই দায় তারা অস্বীকার করতে পারে না।’’ ভিড়ের দায় যে পুজো কমিটির উপরেও অনেকটা বর্তায়, তা স্বীকার করে নিয়েছেন জগৎ মুখার্জি পার্কের অন্যতম উদ্যোক্তা দ্বৈপায়ন রায়। তাঁর কথায়, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে যে ভুল হয়েছে, তা তো দেখাই গিয়েছে। এই দায় পুজো কমিটিগুলি অস্বীকার করতে পারে না।’’ পুজোর এই সমস্ত অনিয়মের খেসারত যে পরে দিতে হতে পারে, তা-ও মেনে নিয়েছেন তিনি। তবে তাঁর দাবি, এ বছর ভিড় এড়াতে তাঁদের পুজো কমিটি একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছিল।
তবে পুজোয় জাঁকজমকের কথা মানতে চাননি ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সাধারণ সম্পাদক তথা হাতিবাগান সর্বজনীনের অন্যতম উদ্যোক্তা শাশ্বত বসু। তাঁর কথায়, ‘‘কোথায় জাঁকজমক! দু’-একটি পুজো কমিটি বাদে শহরের সব কমিটিই তো বাজেট কমিয়ে সরকারি বিধি মেনে পুজো করেছে।’’ তা হলে মানুষের এত ভিড় হল কেন? এই প্রশ্নের অবশ্য উত্তর মেলেনি।
অন্য দিকে, সুরুচি সঙ্ঘের অন্যতম উদ্যোক্তা কিংশুক মৈত্রের দাবি, দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখে কোভিড-বিধি মেনে চলার ব্যাপারে বাড়তি সচেতন ছিলেন তাঁরা। সেই মতোই পুজো করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘কোভিড-বিধি মেনে পুজো করার ব্যাপারে প্রথম থেকেই বাড়তি নজর দেওয়া হয়েছে। এমনকি, জাঁকজমক কমিয়ে পুজোর খরচের থেকেও বেশি ব্যয় করা হয়েছে কোভিড-বিধি মেনে দর্শকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে।’’ সুরুচিতে এ বার অবশ্য দেখা গিয়েছে, মূল প্রবেশপথ অন্যত্র সরিয়ে আনা হয়েছিল। এর পাশাপাশি, দর্শকদের সকলে মাস্ক পরে রয়েছেন কি না, তা-ও দফায় দফায় খতিয়ে দেখা হয়েছে পুজো কমিটির তরফে। সেখানে পুজোর মূল মাঠে দর্শকদের প্রবেশাধিকার ছিল না। সকলকেই মাঠের সীমানার বাইরে থেকে ঠাকুর দেখে বেরিয়ে যেতে হয়েছে।