শহরে বনসৃজনের দায় কার? বাস্তুকার না উদ্ভিদবিদের? এ নিয়ে বিতর্ক মাথা চাড়া দিল পুরসভার অন্দরমহলেই।
কলকাতা পুরসভায় কোনও স্থায়ী মুখ্য উদ্ভিদবিদের পদ নেই। অথচ রয়ে গিয়েছে দু’টি সহকারী উদ্ভিদবিদের (অ্যাসিস্ট্যান্ট হর্টিকালচারিস্ট) পদ। বর্তমানে সেখানে নিযুক্তও রয়েছেন দু’জন কর্মী। পুরসভা সূত্রে খবর, বিভিন্ন বিতর্কের জেরে মুখ্য উদ্ভিদবিদের এই পদ তৈরি না হওয়ায় সহকারীরা কাজের ক্ষেত্রে দায়বদ্ধ থাকেন উদ্যান দফতরের মুখ্য বাস্তুকারের কাছে। ফলে অভিযোগ, উদ্যান সংরক্ষণের মতো প্রযুক্তিগত বিষয়ের ক্ষেত্রে এক দিকে যেমন বাস্তুকারদের বোঝানোর ব্যপারে সমস্যা তৈরি হয়, তেমনি সহকারী উদ্ভিদবিদ পদে যাঁরা কর্মরত রয়েছেন তাঁদের পরবর্তী পদোন্নতির ক্ষেত্রেও অসুবিধা থেকে যায়। অথচ বিভিন্ন সমস্যার কারণে ওই পদ তৈরি করা যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন খোদ পুর-কর্তৃপক্ষই।
কলকাতা পুরসভার উদ্যান দফতরের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার অবশ্য বলেন, ‘‘সমস্যা সমাধানে ইতিমধ্যেই পুরসভার তরফে কয়েকজন অস্থায়ী উদ্ভিদবিদ নিয়োগ করা হয়েছে। তবে পদের বিষয়টি একান্ত ভাবেই পুরসভার প্রশাসনিক সংক্রান্ত বিষয়।’’
বর্তমানে কলকাতা পুরসভার নিয়ম কী? পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, শহরে কোথায় কখন কী ধরনের গাছ লাগানো হবে সে বিষয়ে সহকারী উদ্ভিদবিদ সংশ্লিষ্ট দফতরের বাস্তুকার বা আধিকারিককে জানান। এর পরে তাঁরা দফতরের বাজেট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
কিন্তু কলকাতা পুরসভার উদ্যান দফতরের বাস্তুকারদের একাংশের বক্তব্য, উদ্ভিদবিদ্যা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বিষয়। এর সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরের কোনও যোগ নেই। ফলে শহরে উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ক কোনও প্রকল্পের পরিকল্পনা থাকলে উদ্ভিদবিদেরা যতটা ভাল বুঝবেন, বাস্তুকারেরা ততটা বুঝবেন না। তাই শহরে উদ্যান বিষয়ক কোনও পরিকল্পনায় গলদ থেকে যেতেই পারে।
পুর-কর্তৃপক্ষ জানান, ৯০-এর দশকে বামফ্রন্ট আমলেই স্থায়ী মুখ্য উদ্ভিদবিদের পদ তৈরির কথা হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকর করা যায়নি। পুরসভার পার্সোনেল দফতরের এক আধিকারিক জানান, এ ধরনের পদ তৈরির প্রস্তাবনা থাকলে তার জন্য স্বতন্ত্র বাজেট করা প্রয়োজন। তা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। এ ছাড়া, নিয়ম অনুযায়ী মুখ্য উদ্ভিদবিদকেও তাঁর কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হলে মুখ্য বাস্তুকারের উপরেই নির্ভর করতে হবে। কিন্তু মুখ্য উদ্ভিদবিদের পদটি মুখ্য বাস্তুকার পদের সমকক্ষ হওয়ায় তা নিয়ে অনেক দিন আগেই আপত্তি উঠেছিল। যার ফলেও ওই পদ আর তৈরি হয়নি।
পুরসভার প্রাক্তন সহকারী উদ্ভিদবিদ রণজিৎ সামন্ত বলেন, ‘‘আমার সময়েই মুখ্য উদ্ভিদবিদের পদ তৈরির চেষ্টা হয়। কিন্তু নানাবিধ কারণে তা বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়নি।’’ কলকাতা পুরসভার উদ্যান দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শহরে উদ্যান দফতরের প্রধান উদ্যানবিদ থাকা প্রয়োজন। তবে কী ভাবে এই পদ তৈরি হবে তা সম্পূর্ণ প্রশাসনিক ব্যাপার। প্রশাসনই এই বিষয়ের নিষ্পত্তি করবে।’’ তবে এই পদ তৈরি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুর-কর্তৃপক্ষ।