ছবি: সংগৃহীত।
হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও-কে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ‘প্রতিষ্ঠাতা’ বলেছিলেন গত জানুয়ারিতে। জুলাইয়ে তাঁর ‘আবিষ্কার’— মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ছিলেন স্যর রোনাল্ড রস! চিকিৎসক দিবসে ইতিহাস বদলে দেওয়ার ধারা অব্যাহত রাখার অভিযোগ উঠল রাজ্যের মন্ত্রী তথা চিকিৎসক নির্মল মাজির বিরুদ্ধে।
সোমবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক দিবস উপলক্ষে বিধানচন্দ্র রায়ের একটি পূর্ণাবয়ব মূর্তি উন্মোচন করা হয়। একই সঙ্গে হাসপাতালের সেন্ট্রাল পার্কে চিকিৎসক নীলরতন সরকার, রাধাগোবিন্দ কর, উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী ও স্যর রোনাল্ড রসের আবক্ষ মূর্তি উন্মোচনের কর্মসূচি ছিল। সেই উপলক্ষে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কাছে প্যান্ডেল খাটিয়ে উদ্বোধনী মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। ওই অনুষ্ঠানে কোনও মাইকের ব্যবস্থা ছিল না। বৃষ্টির মধ্যেই খালি গলায় বক্তৃতা করছিলেন মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তনী তথা রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান নির্মল। ১২ মিনিটের বক্তৃতা বেশ মসৃণ গতিতেই এগোচ্ছিল। সতীর্থ বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে বিধানসভা যেতে হবে বলে দ্রুত বক্তব্যে ইতি টানছিলেন। অভিযোগ, এমন সময়েই তৃণমূলের চিকিৎসক-মন্ত্রী বলে বসেন, ‘‘কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকেই বিধানচন্দ্র রায়, নীলরতন সরকার, রাধাগোবিন্দ কর, উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী। এখান থেকেই স্যর রোনাল্ড রস। উনি এমডি এখান থেকেই করেছেন। আমরা বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিনে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি, এই চার জনের আবক্ষ মূর্তি সেন্ট্রাল পার্কে বসিয়েছি।’’
ইতিহাস যদিও বলছে, ১৮৮১ সালে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল সার্ভিসে যোগ দেন রোনাল্ড রস। কর্মসূত্রে এসএসকেএমের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও রোনাল্ড রস কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ছিলেন, এমন তথ্য বিশিষ্ট চিকিৎসকদের কেউই স্মরণ করতে পারছেন না। বস্তুত, এসএসকেএমের সঙ্গে যোগসূত্র হিসেবে রোনাল্ড রসের নামে বাড়ি-উদ্যান-গবেষণাগার রয়েছে। সেই গবেষণাগারের গায়ে লেখা— ‘ম্যালেরিয়া যে মশাবাহিত রোগ, ১৮৯৮ সালে তা এই গবেষণাগারেই আবিষ্কার করেছিলেন সার্জন মেজর রোনাল্ড রস (আইএমএস)’। যে কাজের জন্য ১৯০২ সালে নোবেল পুরস্কার পান তিনি।
স্মরণে: এসএসকেএমে রোনাল্ড রসের নামাঙ্কিত ল্যাবরেটরি। নিজস্ব চিত্র
চিকিৎসক-গবেষক শঙ্কর নাথ এ দিন জানান, স্যর রোনাল্ড রসের পড়াশোনার পুরোটাই ইংল্যান্ডে। তিনি লন্ডনের সেন্ট বার্থেলোমিউজ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে এফআরসিএস করেছিলেন। ওই মেডিক্যাল কলেজ থেকে মেডিসিনে এমআরসিপি, সার্জারিতে এফআরসিএস করেছিলেন বিধানচন্দ্র রায়। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল সার্ভিসে যোগদানের পরে রোনাল্ড রস সিকন্দরাবাদে ম্যালেরিয়ার উপরে কাজ শুরু করেন। শঙ্করবাবুর কথায়, ‘‘১৮৯৮ সালে গবেষণার কাজ শেষ করেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্সি জেনারেল হাসপাতালে, এখন যা এসএসকেএম নামে পরিচিত। ১৮৯৯ সালে তিনি কলকাতা থেকে চলে যান। এই এক বছরের মধ্যে রোনাল্ড রসের এমডি পড়ার সুযোগ ছিল না। কারণ, এমডি পড়তে তখন দু’বছর সময় লাগত। ট্রপিক্যালের উপরে যে ডিপ্লোমা করেছিলেন, তা-ও লন্ডনের।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।