ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হোমিয়োপ্যাথি। ছবি: ফেসবুক।
র্যাগিংয়ের ঘটনার কথা জানা সত্ত্বেও কেউ কোনও প্রতিবাদ করেননি। সেই অপরাধে এ বার কলেজের সমস্ত পড়ুয়াকে হস্টেল থেকে সাসপেন্ড ও আর্থিক জরিমানার মতো শাস্তির মুখে পড়তে হল। সচরাচর এমন নজির দেখা না গেলেও সম্প্রতি এমনই কঠোর অবস্থান নিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হোমিয়োপ্যাথি’ (এনআইএইচ)। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিয়ম মেনেই এই শাস্তির বিধান দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের স্নাতকোত্তর স্তরে দ্বিতীয় বর্ষের দুই পড়ুয়া-চিকিৎসকের বিরুদ্ধে র্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে। ঘটনার তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়। শাস্তি হিসাবে ওই দুই পিজিটি-কে দু’মাস ক্লাস করতে বারণ করা হয়েছে এবং প্রতিদিন হাজিরা দিয়ে আচরণ সংশোধনের প্রশিক্ষণ নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু র্যাগিংয়ের মতো অপরাধ হচ্ছে জেনেও কেন পড়ুয়া বা ইন্টার্নরা সরব হবেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সল্টলেকের ওই কেন্দ্রীয় সংস্থা।
এই চুপ থাকার বিষয়টিকে অপরাধ বলেই ধরে ইউজিসি। জানা যাচ্ছে, কলেজে ভর্তির সময়েই পড়ুয়া ও তাঁর অভিভাবককে একটি মুচলেকা দিয়ে অঙ্গীকার করতে হয় যে, ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগিংয়ের ঘটনা কানে এলে অবিলম্বে তা কর্তৃপক্ষের নজরে আনবেন ও প্রতিবাদ করবেন।
গত অগস্টে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে র্যাগিংয়ের জেরে এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি ইউজিসি-র নিয়ম মেনে হস্টেলের একটি ব্লকের সমস্ত আবাসিককে সাসপেন্ড করার সুপারিশ করেছিল। যদিও তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু এনআইএইচ-এর ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। অধিকর্তা সুভাষ সিংহ বলেন, ‘‘সবই ইউজিসি-র নিয়ম মেনে করা হয়েছে। ইউজিসি-র র্যাগিং-বিরোধী সেলের বিধিতে অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা না গেলে গণ-শাস্তির সংস্থান রয়েছে। সেটাই করা হয়েছে।’’ প্রথম বর্ষ থেকে ইন্টার্ন মিলিয়ে প্রায় ৪০০ জন শাস্তির মুখে পড়েছেন।
এ বছরের গোড়ায় বিএইচএমএস পাঠক্রমের প্রথম বর্ষের কয়েক জন পড়ুয়া নিজেদের পরিচয় গোপন করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পোর্টালে র্যাগিংয়ের অভিযোগ করেন। নির্দিষ্ট কোনও অভিযুক্তের নাম না করে শুধু জানানো হয়, দ্বিতীয় বর্ষের কিছু ছাত্র জড়িত। ইউজিসি বিষয়টি জানায় এনআইএইচ কর্তৃপক্ষকে। তড়িঘড়ি তাঁরা র্যাগিং-বিরোধী কমিটির বৈঠক ডাকেন। গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি অভিযুক্ত দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের প্রতিনিধিদেরও ডাকা হয়। কিন্তু কেউই সে ভাবে মুখ খোলেননি। ফলে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা যায়নি। প্রথমে শুধু দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রদের শাস্তি দেওয়ার কথা ভাবা হয়। কিন্তু পরে কর্তৃপক্ষ প্রথম বর্ষ বাদে সমস্ত বর্ষের ছাত্রছাত্রী ও ইন্টার্নদের শাস্তি ঘোষণা করেন। তাঁদের মধ্যে ৬৩ জন বিদেশি পড়ুয়া।
জানা গিয়েছে, প্রথম বর্ষের পড়ুয়া ও তাঁদের অভিভাবকদের র্যাগিংয়ের ঘটনা চেপে না যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া এবং অভিভাবকদের সেই চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি দু’সপ্তাহ ক্লাস আর হস্টেল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে খবর। দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের ১০০০ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। তবে, আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। তাই তাঁদের এখন কোনও ক্লাস নেই। তাঁদের শুধুমাত্র ১০০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ইন্টার্নদের জরিমানা করা হয়েছে ২০০০ টাকা করে। বিদেশি পড়ুয়াদের জানানো হয়েছে, সাসপেনশনের সময়কালে ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে পারবেন না তাঁরা। প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে হস্টেল ইন-চার্জের কাছে রিপোর্ট করতে হবে।