পথের দাবি: বিশ্ব সাইকেল দিবস উপলক্ষে শহরে সাইকেল র্যালি। রবিবার, সন্তোষপুরে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব যান। শুধু তা-ই নয়, এই যানের মাধ্যমে যেমন প্রায় বিনা খরচে গন্তব্যে পৌঁছনো যায়, তেমন সুস্থ রাখা যায় নিজেকেও। এই যানের ব্যবহার বাড়লে কমানো যাবে পরিবেশ দূষণ, আর তার ফলে কমবে বহু রোগের প্রকোপ। রাষ্ট্রপুঞ্জের ওয়েবসাইটে এমনটাই লেখা রয়েছে সাইকেল সম্পর্কে। সাইকেলের বহুবিধ সুবিধার কথা মাথায় রেখে তাই ২০১৮ সালে ৩ জুন দিনটিকে ‘বিশ্ব সাইকেল দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয় রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে। সারা বিশ্ব জুড়েই পরিবেশবান্ধব যান হিসেবে সাইকেলের গুরুত্ব বাড়ছে। অথচ, উল্টো পথে হেঁটে ধীর গতির যান হিসেবে কলকাতা শহরের ৬২টি রাস্তায় সাইকেল চালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে ২০০৮ সালে।
আজ, সোমবার দ্বিতীয় ‘বিশ্ব সাইকেল দিবস’। তার প্রাক্কালে, রবিবার সকালে শহরে হয়ে গেল এক সাইকেল-মিছিল। কলকাতা সাইকেল সমাজ নামে একটি সংগঠন আয়োজিত ওই মিছিলে শহরের রাস্তায় সাইকেল চালানোর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া, সাইকেল চলার পৃথক লেন তৈরির মতো দাবি তুলে ধরা হয়। যোগ দিয়েছিলেন প্রায় ২০০ সাইকেল আরোহী। আয়োজক সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, শহরের বহু রাস্তায় সাইকেল আরোহীদের অনেক সময়েই জরিমানা করে পুলিশ। সাইকেলের পৃথক লেন না থাকার ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থাকে। জরিমানা নেওয়ার বিরুদ্ধে সই সংগ্রহ, বিভিন্ন থানায় গিয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে। তাদের দাবি, লাগাতার এমন প্রচেষ্টা চালানোয় সম্প্রতি উত্তর কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় সাইকেল আরোহীদের জরিমানা করার হার অনেকটাই কমেছে।
কলকাতা সাইকেল সমাজের সদস্য এবং সাইকেল আরোহী শতঞ্জীব গুপ্ত জানাচ্ছেন, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, জার্মানির মতো ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং চিন, জাপানের মতো এশিয়ার অনেক দেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ সাইকেল ব্যবহার করেন। সাইকেলে চেপে রাষ্ট্রনেতা বা মন্ত্রীরা কাজে যাচ্ছেন, এমন দৃশ্য সেখানে দুর্লভ নয়। ভারতেও চণ্ডীগড়, পুণে, বেঙ্গালুরুর মতো শহরে সাইকেল আরোহীদের জন্য বিবিধ সুবিধা রয়েছে। শতঞ্জীব বলেন, ‘‘এ শহরে সাইকেল চড়লে জরিমানা দিতে হয়। অথচ, আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা বহু মানুষের ভরসা সাইকেল। যত নতুন রাস্তা ও উড়ালপুল তৈরি হচ্ছে, সেগুলি সবই গাড়ি চলার কথা ভেবে। কিন্তু রাস্তায় একটি গাড়ির থেকে অনেক কম জায়গা নেয় সাইকেল, ফলে যানজট হওয়ার আশঙ্কাও কমে। রাস্তায় সাইকেল চালানোর উপযুক্ত পরিকাঠামো থাকলে আরও অনেকে নিয়মিত সাইকেলে যাতায়াত করতেন বলে আমাদের বিশ্বাস।’’
পরিবেশের কথা মাথায় রেখে শহরে সাইকেল চালানোর পরিকাঠামো তৈরির বিষয়ে কোনও ভাবনা-চিন্তা করা হচ্ছে কি? কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ট্র্যাফিক) সন্তোষ পাণ্ডে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘পরিবেশের জন্য বিষয়টি তো ভালই। কিন্তু সাইকেল ধীর গতির যান বলেই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।’’