চালু হয়েছিল দশ বছর আগে। কিন্তু বাস্তবে তার কার্যকারিতা ছিল না। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি আর্থিক বছরের মধ্যেই কলকাতায় পুরোদস্তুর চালু হতে চলেছে পরিবহণের ‘স্মার্ট কার্ড’।
অর্থাৎ, শহরের যে কোনও মোড়ে ‘কর্ডলেস’ একটি মেশিনে ওই কার্ড ‘সোয়াইপ’ করলেই তার স্ক্রিনে ভেসে উঠবে সংশ্লিষ্ট গাড়ি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য। গাড়ির চেসিস নম্বর থেকে শুরু করে বিমা এবং কর সংক্রান্ত তথ্য তো বটেই, এমনকী জানা যাবে ওই গাড়ি অতীতে কোথাও কোনও দুর্ঘটনা বা বেআইনি কিছু ঘটিয়েছে কি না। শুধু গাড়ির ক্ষেত্রেই নয়, একই ব্যবস্থা চালু হবে চালকের লাইসেন্সের ক্ষেত্রেও। সেখানে থাকবে চালকের বাড়ির ঠিকানা, তাঁর রক্তের গ্রুপ-সহ তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের কতগুলি মামলা রয়েছে সব কিছুই।
কী ভাবে একটি স্মার্ট কার্ডে গাড়ি ও চালকের লাইসেন্স সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য মিলবে?
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, কেন্দ্রের নির্দেশিকা অনুযায়ী দু’টি সফটওয়্যার রয়েছে। একটি ‘বাহন’ এবং অন্যটি ‘সারথী’। ‘বাহন’ সফটওয়্যারে গাড়ির যাবতীয় তথ্য রাখা থাকছে। অন্য দিকে, ‘সারথী’ সফটওয়্যারটিতে চালকের সমস্ত তথ্য রয়েছে। যে পদ্ধতিতে এটিএম কার্ডের মাধ্যমে গ্রাহকেরা বিভিন্ন জায়গায় কার্ড ‘সোয়াইপ’ করে টাকা তুলতে পারেন বা জিনিসপত্র কিনতে পারেন, একই ভাবে এ ক্ষেত্রেও একটি কর্ডলেস মেশিনে সংশ্লিষ্ট কার্ডের মাধ্যমে দেখা যাবে গাড়ি বা চালক সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য। সে জন্য প্রতিটি স্মার্ট কার্ডে একটি ‘চিপ’ রয়েছে। সেখানেই গাড়ি বা চালকের যাবতীয় তথ্য দেওয়া।
পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, “স্মার্ট কার্ড চালু হলে গাড়ি চুরি এবং কোনও কিছু দুর্ঘটনা ঘটিয়ে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাওয়া অনেকটাই রোখা যাবে।” কারণ, শহরের যে কোনও মোড়ে যখন-তখন একটি গাড়ির যাবতীয় তথ্য থাকবে পুলিশের একেবারে হাতের মুঠোয়।
পরিবহণ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, ২০০৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্প চালু করার জন্য রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিয়েছিল। তার পরে কলকাতার ‘পাবলিক ভেহিক্লস ডিপার্টমেন্ট’ বা পিভিডি-তেই দেশের মধ্যে প্রথম স্মার্ট কার্ড চালু করা হয়। ধাপে ধাপে এই ব্যবস্থা চালু করার কথা ছিল পুরো রাজ্যেই। কিন্তু ওই সংক্রান্ত জিনিসপত্রের অত্যধিক দাম এবং সরকারের সদিচ্ছার অভাবে ওই প্রকল্প আর এগোয়নি। অথচ এর মধ্যেই দিল্লি-সহ দেশের প্রধান শহরগুলিতে ওই ব্যবস্থা পুরোদস্তুর চালু হয়ে গিয়েছে।
পরিবহণ দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “শুধু কলকাতা শহরে চালু করলেই তো হল না। শহর লাগোয়া এলাকা-সহ জেলায় চালু না হলে স্মার্ট কার্ডের কার্যকারিতা সম্পূর্ণ হয় না। সে কারণেই চালু করা যায়নি। এ বার একযোগে সারা রাজ্যে স্মার্ট কার্ড চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
পরিবহণ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, আগামী মাসেই সারা রাজ্যে স্মার্ট কার্ড এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি কেনার জন্য প্রয়োজনীয় টেন্ডার প্রকাশ করা হবে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে পুরোদস্তুত স্মার্ট কার্ড প্রক্রিয়া শুরু করে দেওয়া হবে বলে জানাচ্ছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারা।
কলকাতায় ইতিমধ্যেই স্মার্ট কার্ড রয়েছে। মেশিন চালু হলেই তার পুরোদস্তুর ব্যবহার শুরু হবে। প্রথম ধাপে কলকাতা-লাগোয়া হাওড়া, আলিপুর এবং বারাসত আঞ্চলিক পরিবহণ অফিসে স্মার্ট কার্ড প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তার পরে ধাপে ধাপে রাজ্যের প্রতিটি জেলাতেই চালু হয়ে যাবে স্মার্ট কার্ড।