পরমা উড়ালপুলের সেই নতুন র্যাম্প। বুধবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
উদ্বোধনের পরে পরমা উড়ালপুল খুলতেই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল যানবাহনের গতি। বছরখানেক আগের ঘটনা। তীব্র যানজটে তখন জেরবার হয় পার্ক সার্কাস মোড়। ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে তড়িঘড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয় পরমা উড়ালপুলের উভয়মুখী যাতায়াত। বলা হয়েছিল, এ জে সি বসু রোডের উড়ালপুলের সঙ্গে পরমা উড়ালপুলের সংযোগ হলেই সমস্যা মিটে যাবে। এ বার সেই সংযোগে র্যাম্প হলো বটে, তবে তা ফের ভোগান্তির ঝুঁকি নিয়েই।
কারণ, যে সমস্ত যানবাহন এস এস কে এম হাসপাতালের সামনে এ জে সি বসু রোডের উড়ালপুল হয়ে উঠবে, কেবল তারাই ওই পথে পরমা উড়ালপুল ধরে সল্টলেক বা গড়িয়ামুখী বাইপাসে সরাসরি নামতে পারবে। পার্ক সার্কাস মোড়ে মেশা অন্য ছ’টি রাস্তা থেকে আসা যানবাহন ওই উড়ালপুলে উঠতেই পারবে না।
আগামী সোমবার ওই সংযোগকারী র্যাম্পের উদ্বোধন করার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার আগে আজ, বৃহস্পতিবার পুলিশ পরীক্ষা মূলক ভাবে ওই উড়ালপুল খুলে দিচ্ছে।
প্রশ্ন উঠছে, তা হলে ধর্মতলা থেকে পার্ক স্ট্রিট, গড়িয়াহাট থেকে সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউ এবং শিয়ালদহ থেকে সি আই টি রোড ধরে আসা কোনও যানবাহন কোন পথে গিয়ে বাইপাসে উঠবে?
পুলিশ জানিয়েছে, আজ, বৃহস্পতিবার থেকে পরমা উড়ালপুল ধরে ই এম বাইপাসে যেতে হলে এস এস কে এম হাসপাতালের সামনে থেকে এ জে সি বসু রোড উড়ালপুল ধরতে হবে। তা না হলে দরগা রোড দিয়ে চার নম্বর ব্রিজ ধরে পার্ক সার্কাস কানেক্টর হয়ে বাইপাসে পৌঁছতে হবে। সৈয়দ আলি আমির অ্যাভিনিউ, শেক্সপিয়র সরণি বা পার্ক স্ট্রিটের দিক থেকে আসা গাড়িকেও দরগা রোড দিয়ে চার নন্বর ব্রিজ হয়েই যেতে হবে বাইপাসের দিকে। এত দিন সকাল ন’টা থেকে রাত ন’টা পর্যন্ত পার্ক সার্কাসের দিক থেকে পরমা উড়ালপুলে ওঠা যেত। এখন শুধুমাত্র রাত ন’টার পরেই পার্ক সার্কাসের দিক থেকে ওই উড়ালপুল ব্যবহার করা যাবে। লালবাজার সূত্রে জানানো হয়েছে, পরমা উড়ালপুল উদ্বোধনের পরে যে সমস্যা হয়েছিল, তা থেকে শিক্ষা নিয়েই এই ব্যবস্থা। এবং তা কার্যকর করতে আজ থেকেই তৎপর হবে পুলিশ।
যাঁরা ইতিমধ্যেই পুলিশের নতুন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের খবর পেয়ে গিয়েছেন, এই নয়া ফরমান ক্ষোভ বাড়িয়েছে তাঁদের। পার্ক স্ট্রিট ধরে গিয়েও পরমা উড়ালপুল ধরে কেন তাঁরা সল্টলেক বা গড়িয়ামুখী বাইপাস ধরতে পারবেন না, সেই প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। প্রশ্ন তুলছেন, পরিকল্পনা না করে বার বার এ সব করা হচ্ছে কেন?
পুলিশের মতে, মূল সমস্যা হলো কংগ্রেস এগজিবিশন রোডে আর একটি র্যাম্প এখনও তৈরি না হওয়া। এজেসি বসু রোড উড়ালপুল এবং পরমা উড়ালপুল সংযোগকারী র্যাম্প চালু হলেও অপর র্যাম্পটি তৈরি না হওয়ায় যানজটের আশঙ্কা থেকেই যাবে বলে মনে করছেন ট্রাফিক পুলিশের একাংশ। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, ই এম বাইপাস থেকে আসা গাড়ি ওই উড়ালপুল দিয়ে সরাসরি চলে আসবে পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড়ে। সেখানে এমনিতেই সব সময়ে যানজট থাকে। তার উপরে বিপুল পরিমাণ গাড়ি সরাসরি বাইপাস থেকে উড়ালপুল ধরে ওই মোড়ে নামলে যানজট বাড়তে পারে। যার প্রভাব পড়বে দক্ষিণ ও মধ্য কলকাতাতেও। গত বছর পরমা উড়ালপুলের উদ্বোধনের পরে এটাই সব চেয়ে বেশি ভুগিয়েছিল পুলিশকে।
কংগ্রেস এগজিবিশন রোডের র্যাম্প তৈরি আটকে আছে কেন?
পুলিশের একাংশ জানিয়েছেন, নির্মাণকারী সংস্থা চাইলেও কংগ্রেস এগ্জিবিশন রোড র্যাম্পের কাজ শুরুর অনুমতি এখনও দেওয়া হচ্ছে না। কারণ সদ্যসমাপ্ত র্যাম্পটি খোলার পরে অবস্থা কী দাঁড়ায়, তা দেখে তবেই ওই র্যাম্পের কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে। যদিও কেএমডিএ সূত্রের খবর, যে সংস্থা ওই র্যাম্প তৈরির বরাত পেয়েছেন, তারা কাজ করার জন্য প্রস্তুতও ছিলেন। কিন্তু সময়ে রাস্তা ছাড়া হয়নি। পুলিশ এবং পুরসভার অনুমতি না মেলায় কাজ শুরুই করতে পারেনি ঠিকাদার সংস্থা। তাতে এতটাই বিলম্ব হয়েছে যে, নির্মাণ-খরচও ইতিমধ্যে বেড়ে গিয়েছে বলে দাবি জানিয়েছে ঠিকাদার সংস্থা। কালক্ষেপের কারণে সেই বাড়তি টাকা দেওয়ার আবেদন জানিয়ে মামলাও করা হয়েছে আদালতে। এতে আরও বেড়েছে জটিলতা।
অথচ কংগ্রেস এগজিবিশন রোডের র্যাম্পটি তৈরি না হলে সমস্যা থেকেই যাবে। সরকারি সূত্রের খবর, বর্তমানে যা পরিস্থিতি তাতে আরও বছরখানেক লাগতে পারে। পুলিশের অনুমান, ওই র্যাম্প না হওয়া পর্যন্ত কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও পরমা এবং এজেসি বসু রোডের উড়ালপুলের সুবিধা পাবেন না মানুষ।
তা হলে দুই উড়ালপুলের সংযোগ ঘটিয়ে কতটা উপকার হবে?
পূর্ণ সুবিধা পেতে দ্বিতীয় রাম্প না তৈরি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে শহরবাসীকে। অর্থাৎ তত দিন পার্ক সার্কাস এলাকায় যানজটে ভোগান্তির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।