লড়াই কোথায়, খাঁ খাঁ পড়ে থাকে আখড়া

এক সময়ে শহরে এই আখড়া ঘিরে উন্মাদনা ছিল প্রবল। বিশ শতকের দুই ও তিনের দশকে আখড়ায় আলো করেছিলেন দেশের বিখ্যাত কুস্তিবীরেরা। কুস্তি লড়তে আসতেন মান্না দে, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। ব্যয়ামবীর মনোহর আইচ, মনোতোষ রায়, নীলমণি দাসও ওই আখড়ায় নিয়মিত লড়তেন।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৮ ০১:৫৩
Share:

ফাঁকা পড়ে গোবর গোহের আখড়া। গোয়াবাগানে। নিজস্ব চিত্র

পড়ন্ত আলো এসে পড়ে চৌহদ্দিতে। নিরাপত্তারক্ষী একে একে আলো জ্বেলে যান নিস্তব্ধ আখড়ায়।

Advertisement

কিন্তু লড়াই কোথায়? স্থানীয় কয়েক জন যুবকের সৌজন্যে আজও খানিকটা কোলাহল শোনা যায় সেখানে। তবে কুস্তি নয়, মাল্টিজিমে ব্যায়াম করতেই আগ্রহ তাঁদের। সন্ধ্যা থেকে রাত হেদুয়ার গোয়াবাগান এলাকার গোবর গোহের আখড়ার আলোর নীচে তাই কুস্তি লড়তে আর কাউকে দেখা যায় না। কারণ লড়াই করার মতো উৎসাহী যুবকের অভাব বড়ই, বলছিলেন আখড়ার নিরাপত্তারক্ষী।

এক সময়ে শহরে এই আখড়া ঘিরে উন্মাদনা ছিল প্রবল। বিশ শতকের দুই ও তিনের দশকে আখড়ায় আলো করেছিলেন দেশের বিখ্যাত কুস্তিবীরেরা। কুস্তি লড়তে আসতেন মান্না দে, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। ব্যয়ামবীর মনোহর আইচ, মনোতোষ রায়, নীলমণি দাসও ওই আখড়ায় নিয়মিত লড়তেন। ১৯৫২ সালের অলিম্পিকে কুস্তিতে ব্রোঞ্জ পদক পান খাসাবা দাদাসাহেব যাদব। সেই দাদাসাহেবও গোবর গোহের আখড়ায় নিয়মিত অনুশীলন করতেন।

Advertisement

সে সব স্মৃতি ছবি হয়ে ঝুলছে আখড়ার ঘরের দেওয়ালে। নিরাপত্তাকর্মী অলকেশ দাস নিয়মিত ঘরে ঢুকে দেওয়ালে টাঙানো গোবর গোহ, মান্না দে, সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের বাঁধানো ছবি মুছে যান। পরিষ্কার করেন গোবর গোহের পুরস্কার ও তাঁর ব্যবহৃত জিনিস।

এশিয়ার প্রথম কুস্তিবীর হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ‘ওয়ার্ল্ড লাইট হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপের’ খেতাব পান গোবর গোহ। ইউরোপ, আমেরিকায় প্রচুর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং সেরাও হন। কুস্তির নতুন নতুন প্যাঁচ আবিষ্কার করেন তিনি। স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা রঘুবর যাদবের স্মৃতিকথায়, ‘‘ছোটবেলায় মা-বাবার কাছে ওঁর গল্প শুনেছি অনেক। রদ্দা ছিল তাঁর বিখ্যাত প্যাঁচ। গোবর গোহের এক রদ্দায় কী ভাবে প্রতিপক্ষ ঘায়েল হতেন সেই গল্প এই প্রজন্মকেও সময় পেলে শোনাই।’’

গোবর গোহের সেই স্বর্ণযুগের গল্প শুনেছে আজকের প্রজন্ম। তবু কুস্তিতে এত অনীহা কেন? স্থানীয় যুবক অভিজিৎ বারিক রোজ এই আখড়ায় এসে মাল্টিজিমে ব্যায়াম করেন। অভিজিৎ বলেন, ‘‘কুস্তি তো শিখতে চাই। কিন্তু কে শেখাবে? টিভিতে যে কুস্তির রিং দেখি, তার সঙ্গে কোনও মিলই নেই গোবর গোহের আখড়ার রিঙের। তাই কেউ কেউ কুস্তি শিখতে উৎসাহী হলেও পিছিয়ে গিয়েছি।’’ ব্যায়াম করতে আসা অন্য যুবক সুরজ মোদীর কথায়, ‘‘বছর খানেক আগেও কয়েক জন কুস্তি লড়তেন। এখন আর কেউ আসেন না। তাই আমরাও উৎসাহ হারিয়েছি।’’

সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে ব্যর্থ গোবর গোহের রিং। তাই পিছিয়ে পড়েছে। এ কথা স্বীকার করে নিয়েছেন গোবর গোহের নাতি ইন্দ্রনীল গোহ। বর্তমানে তিনি এই আখড়া দেখভাল করেন। তাঁর আশ্বাস, ‘‘আধুনিক কুস্তির রিং তৈরি হবে এই আখড়ায়। কয়েক জন ভাল প্রশিক্ষকও নিয়োগ করা হবে। অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণের জন্য যা উপকরণ লাগবে, তা-ও সরবরাহ করা হবে। দ্রুত নতুন রূপে ফিরবে ঐতিহাসিক রিং।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement