ভাসান-যাত্রা
পুজোর দিনগুলোয় ট্রাফিক-যন্ত্রণা কিছুটা লাঘব হয়েছিল। কিন্তু ভাসানের শেষ দিনটায় পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা ভেবে কলকাতা রীতিমতো আশঙ্কায়।
এবং শুধু ভাসানে রক্ষে নেই। এ এ বার দোসর জুটছে বাছাই পুজোর ‘অভূতপূর্ব’ শোভাযাত্রা। যার আয়োজনের পুরোভাগে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ শুক্রবার, বিসর্জনের শেষ দিনে রেড রোডে দু’ধারে বিশিষ্ট অতিথিদের সামনে তুলে ধরা হবে কয়েকটি খেতাবজয়ী পুজোর ট্যাবলো।
এমতাবস্থায় লালবাজারের পোড়খাওয়া কর্তারাও ঠারেঠোরে মানছেন, দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত রেড রোড আটকে এ হেন ‘সরকারি’ অনুষ্ঠানের জেরে গোটা শহরে যান চলাচল তালগোল পাকিয়ে যেতে পারে। ‘‘এ ঠিক সাধারণ ভাসান নয়। ৩৯টি পুজো কমিটির ট্যাবলো রেড রোড ধরে যাবে। তা ছাড়াও কয়েকশো বিসর্জন। বাবুঘাটমুখী ভিড় সামলানো খুব সোজা হবে না।’’— পর্যবেক্ষণ লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তার।
পুলিশকর্তারা বলছেন, অন্য বার দক্ষিণ কলকাতা ও বেহালার সমস্ত ঠাকুর সাধারণত রেড রোড ধরে বাবুঘাটে যায়। সল্টলেক, পূর্ব কলকাতার প্রতিমা এসএন ব্যানার্জি রোড দিয়ে কিংসওয়ে ধরে গঙ্গার ঘাটে পৌঁছয়। এ বার শোভাযাত্রার সৌজন্যে গোটা রুট বেদখল হবে। ফলে জওহরলাল নেহরু রোড, বিবাদী বাগ, স্ট্র্যান্ড রোডে চাপ পড়বে অস্বাভাবিক। এ দিকে শোভাযাত্রা চলাকালীন ওই রুটেই বাকি সব পুজোর ভাসান হওয়ার কথা। তবে পুরনো রুটের ছোট অংশে যান চলাচল বজায় রাখার চেষ্টা চলছে।
কী ভাবে কী হবে, তা নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত লালবাজারে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন ট্রাফিক-কর্তারা। আজ বিকেলের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাচ্ছে সকালেই। বস্তুত রেড রোডের দুয়ারে ট্যাবলো নিয়ে আসার সময় থেকেই যানজট শুরু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। কয়েকটি পুজো কমিটি আবার ট্যাবলো শো-এর পরে ‘পরম্পরা’ মেনে মণ্ডপের কাছাকাছি প্রতিমা ভাসাতে চায়। সে ক্ষেত্রে বিশাল ট্রেলারকে প্রতিমা নিয়ে ফের অনেকটা পথ পেরোতে হবে। তাতে যান-ভোগান্তির বাড়তি আশঙ্কা। উপরন্তু আজ কাজের দিন। রাজ্য সরকারি অফিস বাদ দিয়ে অধিকাংশ অফিস খোলা।
কর্মীরা তাই প্রমাদ গুনছেন। অন্য দিকে রাজ্য সরকারের তরফে বিসর্জনের শোভাযাত্রাকে তুলে ধরা হচ্ছে ‘শারদোৎসবের মুখ’ হিসেবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বিশ্ব বাংলা পুরস্কারে সম্মানিত ‘সেরার সেরা’, ‘সেরা মণ্ডপ’, ‘সেরা প্রতিমা’, ‘সেরা আলোকসজ্জা’র ৩৯টি পুজো কমিটি চারটি করে ট্যাবলো নিয়ে ফোর্ট উইলিয়ামের সামনে
থেকে রেড রোড ধরে পুলিশের স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত যাবে। দু’ধারে বসে দেখবেন মুখ্যমন্ত্রী-সহ ভিভিআইপি’রা। বিকেল পাঁচটায় মূল অনুষ্ঠান। তবে পুজো কমিটিগুলিকে বলা হয়েছে বেলা আড়াইটের আগেই ট্রেলার-সহ বিভিন্ন গাড়ি নিয়ে খিদিরপুর রোডে হাজির হয়ে যেতে।
অতএব দুপুর থেকে রাস্তাটি বন্ধ হয়ে যাবে। শোভাযাত্রা শুরুর আগে রেড রোডও ঝাঁপ ফেলবে। পুলিশ সূত্রের খবর: আজ বিকেল তিনটে থেকে ডাফরিন রোড, হসপিটাল রোড, আউট্রাম রোড-সহ রেড রোডের সংযোগকারী বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ থাকবে। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘এজেসি বসু রোড, খিদিরপুর, হেস্টিংস, আলিপুরের নানা রাস্তাতেও জ্যাম হতে পারে। হসপিটাল রোড বন্ধ থাকায় এজেসি বসু রোড ফ্লাইওভার দিয়ে আসা গাড়িকে এক্সাইড মোড়ের দিকে অথবা ডিএল খান রোডে ঠেলে দেওয়া হবে।’’ পাশাপাশি রেড রোড ও খিদিরপুর রোড বন্ধ থাকায় ধর্মতলা থেকে গাড়ি সোজাসুজি বিদ্যাসাগর সেতুতে উঠবে না। বিদ্যাসাগর সেতুর র্যাম্প থেকে নেমেও সরাসরি ধর্মতলা যাওয়া যাবে না।
সব মিলিয়ে কলকাতা পুলিশের ঘুম ছুটেছে। তাদের ক্ষীণ আশা, বৃহস্পতিবার বেশি রাতে বেশ কিছু প্রতিমা বিসর্জন হয়ে গেলে শেষ দিনে চাপ কিছুটা কমবে। কিন্তু এত ঝক্কি সত্ত্বেও পুলিশ কেন এমন আয়োজনে সায় দিল? স্বাভাবিক ভাবেই লালবাজারের মুখে কুলুপ। কর্তারা শুধু আশ্বাস দিচ্ছেন, আজ যান চলাচল মসৃণ রাখতে চেষ্টায় কসুর থাকবে না।