ট্রেন দুর্ঘটনা। কারগিলের যুদ্ধ। সুনামি। গুজরাতের দাঙ্গা।
কারও সর্বনাশ বা দুঃখকষ্ট পুজোর থিম হয়ে ওঠা আগেও দেখেছে এ শহর। হয়েছে সমালোচনাও। তবু উদ্যোক্তা বা শিল্পীদের কাছে আকর্ষণীয় থিম হয়ে ওঠায়, দর্শক টানায় বরাবরই এগিয়ে থেকেছে ধ্বংস বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
সেই তালিকায় এ বার নয়া সংযোজন নেপালের ভূমিকম্প। সৌজন্য শহরের দুই পুজো কমিটি- উত্তরে কুমোরটুলি পার্ক ও দক্ষিণ শহরতলিতে বড়িশার নাবালিয়াপাড়া। উদ্যোক্তারা অবশ্য বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করছেন অন্য ভাবে। এক উদ্যোক্তার কথায়, ‘‘মা দুর্গা সৃষ্টির আধার। তাই ধ্বংসের প্রেক্ষাপটে নতুনের আহ্বানকেই পুজোর মূলমন্ত্র করেছি।’’ আর এক জনের ব্যাখ্যা, ‘‘ধ্বংসস্তূপে জীবনকে খুঁজে পাওয়ার কাহিনিকেই প্রাধান্য দিয়েছি আমরা।’’
কুমোরটুলি পার্কের থিমে ইট-কাঠ-পাথরের স্তূপে জীবন খুঁজবে ভারতীয় সেনা। মণ্ডপের এক দিকে তাদের হেলিকপ্টার। ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তোলা মানুষগুলোকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে তৈরি। মণ্ডপ-প্রতিমায় বৌদ্ধ সংস্কৃতির ছাপ। এক উদ্যোক্তার কথায়, ‘‘প্রতিবেশী দেশের মানুষের জন্য ভারতীয় জওয়ানেরা কী ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তা-ই দেখা যাবে আমাদের এখানে।’’
অন্য দিকে, নেপালি দূতাবাসের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে বড়িশা নাবালিয়াপাড়া ইউনাইটেড ক্লাব। এক পুজোকর্তা জানান, নেপালের বৌদ্ধস্তূপের আদলে মণ্ডপের চারপাশে মাটি ফুঁড়ে ধ্বংসের স্মৃতি নিয়ে বেরিয়ে আসবে হাত। নেপালি পাড়ার মণ্ডপসজ্জার সঙ্গে থাকছে সেখানকার খাবার-পোশাক-সংস্কৃতিও। লাগোয়া মঞ্চে বসবে নেপালি নাচ-গানের আসর। কলকাতায় নেপালের কনসাল জেনারেল চন্দ্রকুমার ঘিমিরে বলছেন, ‘‘ভূমিকম্পের পরে সাহায্যের হাত বাড়াতে কসুর করেনি কলকাতা। নেপালের প্রতি কলকাতার আলাদা টান। তাই নেপালকে তুলে ধরতে আমরা কলকাতার সব থেকে বড় উৎসবকেই বেছে নিয়েছি।’’
কিন্তু একটি ক্লাবের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে কতটা প্রচার মিলবে? দূতাবাসের মুখপাত্র নীলাদ্রি থাপা বলেন, ‘‘পুজোর মাস চারেক আগে থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল নাবালিয়াপাড়া। তাই ওদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছি।’’ গাঁটছড়া না বাঁধলেও কুমোরটুলি পার্কের পুজোয় নেপালকে দেখা যাবে বলে জানান তিনি।
অনেকে অবশ্য এতে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য দেখছেন। পুজোকর্তাদের একাংশ বলছেন, নেপালের আয়ের একটা বড় উৎস পর্যটন শিল্পই। প্রবল ভূমিকম্পে তা কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। তাই নেপাল বা তার পর্যটনকে ফের তুলে ধরতে বিভিন্ন মঞ্চকে ব্যবহার করছে দূতাবাস। এক নামী পুজোর কর্তা বলেন, ‘‘কলকাতার পুজো যে বিজ্ঞাপনের বড় মঞ্চ, তাতে তো কোনও সন্দেহ নেই। তাই নেপাল ঠিক জায়গাই বেছেছে।’’
পুজোয় দেখা মিলবে বাংলাদেশ, তাইল্যান্ডেরও। ৭৫ বছরে পৌঁছে এ বারই সাবেক পুজো ছেড়ে থিমের খাতায় নাম লিখিয়েছে পার্ক সার্কাস ময়দানের উদ্দীপনী। শিল্পী রিন্টু দাসের তৈরি থিমে মণ্ডপের পাশাপাশি বদলাচ্ছে মেলাও। কাশ্মীর, কর্নাটকের মতো ভিন্ রাজ্যের পাশাপাশি সেখানে মিলবে বাংলাদেশের শাড়ি, হস্তশিল্প, ভুটানের ফলের রস, মালয়েশিয়ার খেলনা বা বৈদ্যুতিন সামগ্রী। সেই সঙ্গে থাকছে দেশি-বিদেশি খাবারও। পুজোয় পেটপুজো কবেই বা বাদ গিয়েছে!