এ ভাবেই ছিদ্র হয়ে গিয়েছে জানলার কাচে। নিজস্ব চিত্র
তখন দুপুর তিনটে। হরিশ মুখার্জি রোডের একটি বহুতলের চারতলার ফ্ল্যাটে এক মহিলা একা। খাওয়া শেষে সবে বসার ঘরে কিছু কাজ সারছেন। হঠাৎ প্রবল শব্দ। যেন তীব্র কোনও কিছু ঘরে ঢুকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিল সব!
অবাক হয়ে শোয়ার ঘর, রান্নাঘর তন্নতন্ন করে খুঁজলেন মহিলা। প্রথমে কিছুই চোখে পড়ল না তাঁর। শেষে লক্ষ করলেন, জানলার কাচ ফুটো হয়ে গিয়েছে। যেন গুলির মতো ভারী কোনও ধাতব পদার্থ জানলা ফুঁড়ে ঘরে ঢুকে গিয়েছে! দেখলেন, জানলার বিপরীতের দেওয়ালের এক জায়গার সিমেন্টও খসে গিয়েছে। বিছানায় কাচের টুকরো ভর্তি।
বুধবারের ওই ঘটনায় কালীঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ জানান ফ্ল্যাটের মালিক শিবাশিস চট্টোপাধ্যায়। এই রহস্যজনক ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কালীঘাট থানার তদন্তকারী আধিকারিক। লালবাজারেও থানার তরফে রিপোর্ট দেওয়ার কথা। তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, কোনও প্রকার ‘এসএলআর এয়ার রাইফেল’-এর গুলিতে এই কাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। তবে কোথা থেকে বা কী উদ্দেশ্যে এই গুলি চালানো হয়েছিল, তা স্পষ্ট নয়। শুক্রবার রাত পর্যন্ত ঘটনাস্থল থেকে কোনও গুলি উদ্ধার হয়নি। ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘গুলির সামনে পড়লে প্রাণও যেতে পারত। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
শিবাশিসবাবুদের ফ্ল্যাট হরিশ মুখার্জি এবং কালীঘাট রোডের সংযোগস্থলে। শিবাশিসবাবু, ছেলে স্যমন্তক এবং স্ত্রী শম্পা ছাড়া ফ্ল্যাটে আর কেউ থাকেন না। বুধবারের ঘটনাটি ঘটেছে ছেলের ঘরেই। স্যমন্তক জানিয়েছেন, ঘটনার সময় ফ্ল্যাটে একাই ছিলেন শম্পাদেবী। প্রথমে প্রচণ্ড আওয়াজ শুনে চমকে যান তিনি। পরে ছেলের ঘরের জানলায় গুলির মতো চিহ্ন দেখে ঘাবড়ে গিয়ে স্বামীকে ফোনে বিষয়টি জানান। বাড়ি ফিরে পুলিশে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন শিবাশিসবাবুরা।
স্যমন্তক বলেন, ‘‘কী থেকে এমন হয়েছে জানি না। তবে এটা যদি গুলিই হয়, তা হলে খুব ভয়ের ব্যাপার। ওই জানলার পাশে টেবিলে বসেই আমি কাজ করি। ঘরে থাকাকালীন গুলিটা ঢুকলে কী হত?’’ তবে কোথা থেকে ‘গুলি’ চালানো হয়েছে সে ব্যাপারে কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই স্যমন্তকদের।
প্রথমে তদন্তকারীদের মনে হয়েছিল, আশপাশের কোনও বাড়ি থেকে এই কাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁরা দেখেছেন, স্যমন্তকদের বাড়ি থেকে আশপাশের বাড়িগুলি বেশ দূরে। বদলে কাছাকাছির মধ্যে রয়েছে কয়েকটি কলোনি। ওই দূরের বাড়ি থেকে ‘এসএলআর এয়ার রাইফেল’ দিয়ে স্যমন্তকদের ফ্ল্যাটে আঘাত করা অসম্ভব নয়। তবে তদন্তকারীদের ধারণা, কলোনি থেকেই এই কাণ্ড হয়ে থাকতে পারে। যদিও এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি তাঁরা।
দক্ষিণ কলকাতার প্রাণকেন্দ্র, তার উপরে ঘটনাস্থল থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি হেঁটে পাঁচ মিনিটের দূরত্ব মাত্র। সেখানে এহেন ঘটনায় বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ‘গুলি’ রহস্যের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত চিন্তায় পুলিশও! শিবাশিসবাবুরা বলছেন, ‘‘কেউ যদি শখে বন্দুক অনুশীলন করে থাকেন, তা হলে যেন কড়া শাস্তি হয়। জনবসতির মধ্যে এমন ঘটনা ভাবাই যাচ্ছে না।’’