পুরনো কলকাতায় গৃহবধূদের দিনযাপন। তা নিয়েই সংগ্রহশালা তৈরি হচ্ছে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে।
কাজ শুরু করে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই সংক্রান্ত নানা তথ্য দিয়ে সাজিয়ে তোলা হবে ওই সংগ্রহশালা। উপাচার্য পলা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, এর জন্য শহরের বিভিন্ন বাড়িতে যাচ্ছেন তাঁরা। জোগাড় করছেন সেই আমলের গৃহবধূদের নানা জিনিসপত্র।
অন্তঃপুরবাসিনীদের খেরোর খাতা, রান্নার প্রণালীর খাতা, হাতের কাজ, হিসেবের খাতা, লেখালেখির খাতা— সবই ধীরে ধীরে সংগ্রহ করার কাজ চলছে। উপাচার্য জানালেন, সেই আমলে মহিলারা কেমন করে ঘর সাজাতেন, রান্না করতেন, অবসর কাটাতেন, তার সব ধরনের নিদর্শনই তাঁরা জোগাড় করছেন। পলাদেবী বলেন, ‘‘কলকাতার বিভিন্ন বাড়ির আনাচকানাচে লুকিয়ে আছে এই গৃহবধূদের সম্পর্কে না-জানা অনেক কথা। আমরা সেগুলোই খুঁজে বার করে জনসমক্ষে আনতে চাইছি। যাঁদের কথা প্রায় কেউই জানেন না, কলকাতার ইতিহাসে তাঁরাও রয়ে গিয়েছেন অগোচরে। তাঁদের সামনে আনার চেষ্টা করছি।’’ ইতিমধ্যে এ বিষয়ে তাঁরা ভাল সাড়াও পেয়েছেন।
উপাচার্য জানান, এই সংগ্রহশালা গড়ে তোলার ভাবনা প্রথম মাথায় এসেছিল বাংলা বিভাগের শিক্ষিকা রুচিরা চক্রবর্তীর। সে সময়ের গৃহবধূদের সাজপোশাক, বাজারের ফর্দ, হাতের কাজ তাঁরা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছেন বলে জানালেন রুচিরাদেবী।
সেই আমলের মহিলাদের তৈরি কাঁথার কাজ, নানা ধরনের এমব্রয়ডারি থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম হাতের কাজও সংগ্রহের উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা। উপাচার্য বলেন, ‘‘আগেকার দিনে মহিলারা বাচ্চাদের জন্য প্রচুর কাঁথা বানাতেন। সেই কাঁথার কাজের পোশাকেরই এখন আকাশছোঁয়া দাম। অতীতের সেই সব শিল্পকর্মকেও রাখা হবে এই সংগ্রহশালায়। এ ছাড়া, সে সময়ে এ শহরের বাচ্চারা যে সব খেলনা নিয়ে খেলত, সেই সব খেলনাও খুঁজে বার করে সংগ্রহশালায় রাখার চেষ্টা হচ্ছে।’’
এই পুরো কাজটি করতে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাহায্য নিতে চাইছেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্তের। উপাচার্য জানালেন, ছাত্রাবস্থায় প্রেসিডেন্সিতে তাঁর সিনিয়র জয়ন্তবাবুকে ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। রাজ্য সরকারের কাছেও সংগ্রহশালা গড়ে তোলার জন্য আর্থিক সাহায্য চাওয়া হচ্ছে। উপাচার্যের আশা, ছ’মাসের মধ্যেই এই সংগ্রহশালা সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া যাবে।