সিসি ছাড়াই বসবাস

নির্মাণে অনিয়ম রুখতে অনলাইনে জোর পুরসভার

শহরের প্রায় ৫০ শতাংশ ফ্ল্যাট-বাড়ির কমপ্লিশন সার্টিফিকেট (সিসি) নেই। অথচ, ওই সব ফ্ল্যাট-বাড়িতে লোকজন বাস করছেন। এ তথ্য দিয়েছেন পুর-প্রশাসনের কর্তারাই। যদিও পুরসভার আইন বলছে, সিসি না থাকা বাড়িতে বসবাস করা যায় না। সেই নিয়মকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিনের পর দিন সিসি হাতে না পেয়েই ফ্ল্যাট-বাড়িতে লোক ঢুকিয়ে দিচ্ছেন প্রোমোটার বা মালিকেরা।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৩
Share:

শহরের প্রায় ৫০ শতাংশ ফ্ল্যাট-বাড়ির কমপ্লিশন সার্টিফিকেট (সিসি) নেই। অথচ, ওই সব ফ্ল্যাট-বাড়িতে লোকজন বাস করছেন। এ তথ্য দিয়েছেন পুর-প্রশাসনের কর্তারাই। যদিও পুরসভার আইন বলছে, সিসি না থাকা বাড়িতে বসবাস করা যায় না। সেই নিয়মকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিনের পর দিন সিসি হাতে না পেয়েই ফ্ল্যাট-বাড়িতে লোক ঢুকিয়ে দিচ্ছেন প্রোমোটার বা মালিকেরা। আর সিসি না নিয়ে শহরের অনেক ফ্ল্যাটে যে লোক ঢোকানো হয়েছে, তা-ও জানিয়েছেন স্বয়ং মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। পুরনো কলকাতার চেয়ে সংযোজিত ওয়ার্ডগুলিতে সিসি না নেওয়ার প্রবণতা বেশি বলে জানান বিল্ডিং দফতরের এক কর্তা।

Advertisement

নিয়ম হল, সিসি না দিলে পানীয় জল এবং নিকাশির লাইন মেলে না। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে ওই সব বিল্ডিংয়ে লোক ঢোকানো হচ্ছে কী ভাবে? পুরসভা সূত্রের খবর, এখানেই যত অনিয়ম চলছে। কেউ সিসি হারিয়ে যাওয়ার ছুতোয়, কেউ আবার কারও ‘পকেট ভরে’ কাজ হাসিল করছেন।

পুরসভার বিল্ডিং দফতর তাঁর হাতেই। মেয়র শোভনবাবু জানান, তৃণমূল বোর্ড ক্ষমতার আসার আগে থেকেই এ সব হয়েছে। এ বার সেই অনিয়মে রাশ টানতে অনলাইনে সিসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে পুরসভা। তিনি বলেন, ‘‘বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদনে অনলাইন পদ্ধতি চালু হয়েছে। সিসি দেওয়ার ক্ষেত্রেও তা করা হবে।’’

Advertisement

সিসি না নেওয়ার প্রবণতা কেন?

পুরসভা সূত্রের খবর, শহরে এমন অনেক নির্মাণকাজ হয়েছে ও হচ্ছে, যেখানে প্রোমোটার বা নির্মাণ সংস্থা পুরসভার দেওয়া নকশা মতো কাজ করে না বা নকশার বাইরে গিয়েও বাড়তি নির্মাণ করে থাকেন, যা পুর নিয়মে বেআইনি বলেই মনে করা হয়। সে ক্ষেত্রে পুর-নকশা না মেনে কাজ করার জন্য সাধারণত সিসি দেওয়া হয় না। বিল্ডিং দফতর সূত্রের আরও খবর, এমন ঘটনাও রয়েছে যেখানে পুরসভার অফিস থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে সিসি-র ফাইল। খোদ পুরসভা থেকে সিসি-র ফাইল হারিয়ে যাওয়ার ‘ফায়দা’ তুলেছেন অনেক প্রোমোটার এবং নির্মাণ সংস্থা। বিল্ডিং দফতরের এক অফিসারের কথায়, ‘‘ফাইল হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটে। তাই কোন নির্মাণের সিসি দেওয়া হয়নি, কোনটার দেওয়া হয়েছে তা জানায় সমস্যা হয়।’’ ওই অফিসারের কথায়, কলকাতার ১০১ ওয়ার্ড থেকে ১৪৪ ওয়ার্ডে ওই ধরনের প্রবণতা বেশি। ওই সব ওয়ার্ডের শতকরা ৭০ ভাগ নির্মাণেরই সিসি নেই।

প্রশ্ন, সিসি না পেলে কী হতে পারে? পুর আইনে তো অনেক কিছু লেখা আছে। কিন্তু তা মানা হচ্ছে না বলেই মনে করছেন একাধিক আমলা। পুরসভা সূত্রের খবর, কোনও নির্মাণ করার আগে প্রথমেই তা জানাতে হয় পুরসভাকে। পুরসভার নির্দেশ থাকে কোনও আর্কিটেক্ট বা লাইসেন্সড বিল্ডিং সার্ভেয়ার-কে (এলবিএস) দিয়ে প্ল্যান করাতে হবে। সেই প্ল্যান অনুমোদনের জন্য নির্মাণের জায়গার ইঞ্জিনিয়ারিং নকশা-সহ পুরসভায় জমা দিতে হয়। তা অনুমোদন হয়ে গেলে নির্মাণ শুরুর অনুমতি দেওয়া হয়। পুর-অনুমোদিত নকশা মতো কাজ শেষ হলে তখনই সিসি-র জন্য আবেদন করতে হয়। বিল্ডিং দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা সিসি দেওয়ার আগে তা যাচাই করেন। বিল্ডিংয়ের ভিতরে পানীয় জল, নিকাশির লাইন ঠিকঠাক করা হয়েছে কি না, রাস্তার জন্য ছাড় দেওয়া হয়েছে কি না, এ সব দেখার পরে পুরসভার তরফে জল ও নিকাশির মেন লাইনের সঙ্গে ওই বিল্ডিংয়ের সংযোগ দেওয়া হয়। সিসি মেলে সে সবের পরেই। তাই প্ল্যান মতো কাজ না হলে জল এবং নিকাশির লাইন সংযোগ আটকে দেওয়া হয়।

পুরসভার এক পদস্থ অফিসার বলেন, ‘‘কত লো বাড়ির সিসি নেই, তার হিসেব পুরসভায় নেই। অনলাইনে সিসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত সেখানেই গুরুত্বপূর্ণ। অন্তত ক্লিক করলেই কার সিসি আছে, কার নেই সহজেই বোঝা যাবে। ফাইল হারিয়ে গেলেও সমস্যা থাকবে না।’’ চলতি বছরেই অনলাইনে সিসি দেওয়ার কাজ শুরু করা হবে বলে পুরসূত্রের খবর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement