পর্ণশ্রীতে আবর্জনায় ঢেকে গিয়েছে আস্ত পুকুর।
মৃত্যুর খবর জানাজানি হওয়ার পরে এলাকায় পুরকর্মীদের দেখা পাওয়া গিয়েছে! রাস্তার দু’ধারে ছড়ানো হয়েছে ব্লিচিং। জমা জল সরিয়ে শুরু হয়েছে পাকা নর্দমা তৈরির কাজ। তবে, পুকুর ও আশপাশে আবর্জনার স্তূপ কিন্তু রয়েই গিয়েছে। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘সাপের থেকেও বেশি ভয় মশা। তবে, তার জন্য পুরসভার কোনও তৎপরতা তো দেখি না। এক জনের মৃত্যুর পরে হয়তো তাঁরা নড়ে বসেছেন।’’
শুক্রবার আনন্দপুরের এক হাসপাতালে মারা যান কলকাতা পুরসভার ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা উমা সরকার (৫০)। তাঁর মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গি, এমনই জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। পরিবার সূত্রে খবর, কয়েক দিন ধরেই জ্বর ও বমি হচ্ছিল উমাদেবীর। বৃহস্পতিবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
সোমবার বেহালা পর্ণশ্রীর পারুই কাঁচা রোড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দু’টি পুকুর আবর্জনায় ভরা। অপরিচ্ছন্ন রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় জমে আছে জল। এলাকাবাসী জানালেন, একাধিক ব্যক্তি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি। অনেকের চিকিৎসা চলছে বাড়িতেই। অভিযোগ, মশাবাহী রোগ প্রতিরোধে তৎপর নন পুরকর্মীরা। সে কারণেই ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ছে।
যদিও পুর প্রশাসনের দাবি, মশা দমনে বাড়ির ছাদ এবং আশপাশের এলাকা পর্যবেক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এলাকা পরিষ্কার রাখতে পুরসভার গাড়িতে আবর্জনা নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ রয়েছে। এমনকি, ডেঙ্গি মোকাবিলার কাজ ঠিক মতো হচ্ছে কি না তা দেখভালের জন্য বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কাউন্সিলরদের।
উমা সরকার। নিজস্ব চিত্র
তবে ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ব্লিচিং ছড়ানো বা মশা নিধনে রাসায়নিক ব্যবহার দূর অস্ত্। নিয়মিত রাস্তাও পরিষ্কার হয় না। আবর্জনা নিয়ে যাওয়ার জন্য দেখা মেলে না পুরসভার গাড়ির। বাধ্য হয়ে তাঁরা পুকুরের পাশে জঞ্জাল ফেলেন। উমাদেবীর মেয়ে রিয়াঙ্কা বলেন, ‘‘মশা মারার তেল দিতে বললে পুরকর্মীরা উল্টে বলেন, দাম কত ধারণা আছে? যেখানে-সেখানে দেওয়া যাবে না।’’ বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, বর্ষার গোড়ায় স্থানীয় পুর কার্যালয়ে একাধিক বার গিয়ে ডেঙ্গি মোকাবিলায় কাজ শুরুর অনুরোধ জানালেও দুর্ব্যবহার ছাড়া কিছু জোটেনি।
উমাদেবীর পরিবারের অভিযোগ, তাঁদের বাড়ির পাশেই কাঁচা নর্দমা। জল ও আবর্জনা জমে সেটি মশার আস্তানায় পরিণত হয়েছে। একাধিক বার সেই নর্দমা পরিষ্কারের আবেদন জানানো সত্ত্বেও তৎপর হয়নি পুরসভা। তবে উমাদেবীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরেই এ দিন এলাকায় গিয়েছিলেন পুরকর্মীরা। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয় পাকা নর্দমা তৈরির কাজ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রসঙ্গে স্থানীয় কাউন্সিলর রত্না রায়মজুমদার বলেন, ‘‘কেউ মারা গিয়েছেন বলে পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে খবর নেই। বরং মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আমিই উমাদেবীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। পাশের ১২৯ ওয়ার্ডেও এক জনের ডেঙ্গি হয়েছে বলে শুনেছি।’’ ডেঙ্গি প্রতিরোধে পুর অভিযানের খামতি নিয়ে অভিযোগের জবাবে রত্নাদেবী বলেন, ‘‘যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। তবে এলাকায় নিয়মিত মশা নিধনের কাজ হয়েছে। আমি নিজে মাইকে প্রচার করে বাসিন্দাদের সচেতন করার চেষ্টা করেছি। পানীয় জলের সঙ্কট রয়েছে বলে ওই বাড়ির একতলার ভাড়াটেরা জল জমিয়ে রাখেন। তাঁদেরও সতর্ক করা হয়েছে।’’
গোটা ঘটনা প্রসঙ্গে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক অফিসার জানিয়েছেন, মৌখিক খবর তাঁরা পেয়েছেন। তবে জন্মাষ্টমীর ছুটি থাকায় এর বেশি কিছু আপাতত জানা যাবে না! ছুটির পরে সবিস্তার জানা যাবে।